রাজধানীর নয়াপল্টনে বুধবার বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষে আহতদের মধ্যে অন্তত ২১ জন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। তবে গ্রেপ্তারের ভয়ে তাদের অধিকাংশই প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে দ্রুত হাসপাতাল ত্যাগ করেন।
ঢামেক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (পরিদর্শক) মোহাম্মদ বাচ্চু মিয়া বুধবার রাতে এসব তথ্য জানান।
ঢাকা মেডিক্যালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক যাদের ভর্তি করে নিয়েছেন তাদের একজন শামীম আহমেদ। তার বাম পা, পিঠ এবং মুখমণ্ডলে শটগানের অসংখ্য গুলির আঘাত রয়েছে। তিনি রূপনগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যসচিব।
চিকিৎসাধীন মোহাম্মদ মনির হোসেন রূপনগর স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মী। তার হাত, বাম পা ও পিঠে অসংখ্য গুলির চিহ্ন রয়েছে।
এ ছাড়া পুলিশ সদস্য কনস্টেবল মাহফুজ ১০০ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিচ্ছেন। বিএনপি কর্মীদের ছোড়া ইটে তিনি মাথায় গুরুতর আঘাত পান।
বাচ্চু মিয়া বলেন, ‘পল্টনে বিএনপি কর্মীদের পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে আহত হয়ে হাসপাতালে আসা ২১ জনের মধ্যে পুলিশসহ তিনজন ভর্তি রয়েছেন। বাকিরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে চলে যান।’
এর আগে তিনি জানিয়েছিলেন, সংঘর্ষের পর ঢাকা মেডিক্যালে ১৮ জনের মতো আহত ব্যক্তি আসেন; যাদের প্রায় সবাই গুলিবিদ্ধ।
বুধবার বিকেলের দিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দলীয় কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এ সময় গুলিতে নিহত হন মকবুল হোসেন নামে এক ব্যক্তি।
নিহত মকবুল হোসেনের বড় ভাই আব্দুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, তার ভাই বিএনপির সমর্থক ছিলেন। তবে মকবুল কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না বলে দাবি করেন তার স্ত্রী হালিমা বেগম।
এদিকে সংঘর্ষের পর দলীয় কার্যালয় থেকে পরোয়ানা থাকায় বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ছাড়া ১০ ডিসেম্বরের বিভাগীয় সমাবেশ নিয়ে উত্তেজনা ছড়ানোর অভিযোগে আমান উল্লাহ আমান ও শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানিকে হেফাজতে নেয় পুলিশ।
রাতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দাপ্রধান ও অতিরিক্ত কমিশনার মো. হারুন অর রশীদ জানান, বিএনপি কার্যালয় থেকে ৩০০ নেতা-কর্মী ও সমর্থককে আটক করা হয়েছে। একই সময়ে কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে ১৫টি ককটেল উদ্ধারের দাবি করেন তিনি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুই পাশের রাস্তা ধরে পুলিশ হঠাৎ বাঁশি বাজিয়ে টিয়ার শেল ছুড়ে বিএনপির কার্যালয়ের সামনে অবস্থান করা নেতা-কর্মীদের দিকে এগিয়ে আসে। এ পর্যায়ে দলটির নেতা-কর্মীরা পিছু হটেন। মূল সড়কের পাশের অলিগলিতেও লাঠিপেটা করে পুলিশ।
এর আগে দুপুর ১২টার দিকে নয়াপল্টন এলাকায় একাধিক সাঁজোয়া যান, প্রিজন ভ্যান ও পুলিশের অতিরিক্ত স্ট্রাইকিং ফোর্স মোতায়েন করা হয়।
ডিএমপির মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার হায়াতুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘১০ তারিখের সমাবেশের এখনও চার-পাঁচ দিন বাকি আছে। কিন্তু বিএনপির নেতা-কর্মীরা আজকে নয়াপল্টনে রাস্তা বন্ধ করে মিছিল-মিটিং শুরু করেছিল।
‘আমরা তাদের এসব বন্ধ করতে বলায় তারা পুলিশের ওপর হামলা করে। এরপর আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নিয়েছি। বিএনপি কর্মীদের চারপাশ থেকে হামলার কারণে বাড়তি ফোর্স আনাই। বাড়তি সতর্কতার জন্য সোয়াট সদস্যরাও ঘটনাস্থলে পৌঁছে কাজ করেন।’