আওয়ামী লীগ সরকার দেশ ও মানুষের উন্নয়নে কাজ করছে বলে দাবি করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার কক্সবাজারে শেখ কামাল স্টেডিয়ামে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘এ দেশের মানুষ বারবার ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে বলেই দেশের জন্য কাজ করতে পারছি। দেশের উন্নয়ন হচ্ছে। ২০১৪ ও ২০১৮ সালে জনগণ আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছে বলেই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। তাদের ভোট বৃথা যায়নি।’
কক্সবাজারে শেখ কামাল স্টেডিয়ামে বুধবার বিকেলে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি এ দেশকে মানি লন্ডারিং, জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস এবং লুটপাট ছাড়া আর কিছু দিতে পারেনি। তারা ৩ হাজার মানুষ আগুন দিয়ে পুড়িয়েছে। ৫০০ মানুষকে হত্যা করেছে।’
বিএনপির খালেদা জিয়া এবং জাতীয় পার্টির হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সরকার দেশকে কিছুই দেয়নি বলে মন্তব্য করেন তিনি।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘২০২৪ এর জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে আগামী জাতীয় নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ভোট দেবেন।’
জনসভায় যোগ দেয়ার আগে কক্সবাজারে ২৯টি প্রকল্প উদ্বোধন এবং চারটির ভিত্তিপ্রস্তর করেন সরকার প্রধান।
বঙ্গবন্ধুকন্যা কক্সবাজার ও মহেশখালীতে আরও দুটি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠারও প্রতিশ্রুতি দেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার চাওয়া পাওয়ার কিছু নেই। বাবা-মা-ভাই-আত্মীয়-স্বজন হারিয়ে আমি রিক্ত, নিঃস্ব। কিন্তু যে বাংলাদেশের মানুষের জন্য তারা প্রাণ দিয়ে গেছেন, তাদের জন্য কাজ করব। এদেশের মানুষের মাঝেই খুঁজে নেব প্রয়াত আত্মীয়-স্বজনকে।
‘বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। এ দেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধশীল দেশে নিয়ে যেতে চাই।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০৪ সালের ২৪ আগস্ট আমাদের শান্তি র্যালিতে দিনেদুপুরে গ্রেনেড হামলা করে তারেক-খালেদা জিয়া গং। যুদ্ধের ময়দানের গ্রেনেড আমাদের ওপর ছোড়া হয়েছিল। আইভী রহমানসহ ২২ জন নেতা-কর্মী মারা যান। আল্লাহর রহমতে আমি বেঁচে গিয়েছিলাম।
‘জামায়াত-বিএনপি এদেশের মানুষকে কী দিয়েছে? অগ্নিসন্ত্রাস, খুন, মানি লন্ডারিং এগুলো দিয়েছে। আর তাদের আন্দোলন মানেই মানুষকে পুরিয়ে মারা।’
জনসভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও বক্তব্য দেন। প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়াসহ কেন্দ্রীয় এবং জেলা পর্যায়ের নেতারা অনুষ্ঠানে ছিলেন।
পাঁচ বছর পর কক্সবাজার সফরে এক হাজার ৩৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে উদ্বোধন করা ২৯ প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে- কক্সবাজার গণপূর্ত উদ্যান, বাহারছড়া বীর মুক্তিযোদ্ধা মাঠ, কুতুবদিয়া ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ভবন, উপজেলা ভূমি অফিস ভবন, পেকুয়া; কক্সবাজার জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয় ভবন, শেখ হাসিনা জোয়ারিয়ানালা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের চার তলা অ্যাকাডেমিক ভবন, আবদুল মাবুদ চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ের চার তলা অ্যাকাডেমিক ভবন, মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের চার তলা অ্যাকাডেমিক ভবন।
কক্সবাজার জেলার লিঙ্ক রোড-লাবণী মোড় সড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ; রামু-ফতেখাঁরকুল-মরিচ্যা জাতীয় মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ; টেকনাফ-শাহপরীর দ্বীপ জেলা মহাসড়কের হাড়িয়াখালী থেকে শাহপরীর দ্বীপ অংশ পুনর্নির্মাণ, প্রশস্তকরণ ও শক্তিশালীকরণ; বাঁকখালী নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নিষ্কাশন, সেচ ও ড্রেজিং প্রকল্প (প্রথম পর্যায়), শাহপরীর দ্বীপে সি ডাইক অংশে বাঁধ পুনর্নির্মাণ ও প্রতিরক্ষা কাজও উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
ক্ষতিগ্রস্ত পোল্ডারের পুনর্বাসন প্রকল্প, রামু কলঘর বাজার-রাজারকুল ইউনিয়ন সড়কে বাঁকখালী নদীর ওপর ৩৯৯ মিটার দীর্ঘ সাংসদ ও রাষ্ট্রদূত ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরী সেতু, কক্সবাজার জেলায় নবনির্মিত ছয়টি ইউনিয়ন ভূমি অফিস ভবন, চারটি উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন (রামু, টেকনাফ, মহেশখালী ও উখিয়া), কক্সবাজার পৌরসভার এয়ারপোর্ট রোড আরসিসিকরণ ও অন্যান্য; শহীদ সরণি আরসিসিকরণ ও অন্যান্য; বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন স্টেডিয়াম সড়ক আরসিসিকরণ; নাজিরারটেক শুঁটকিমহাল সড়ক আরসিসিকরণ; টেকপাড়া সড়ক আরসিসিকরণ ; সি বিচ রোড আরসিসিকরণ; মুক্তিযোদ্ধা সরণি আরসিসিকরণ; সৈকত-স্মরণ আবাসিক এলাকা সড়ক আরসিসিকরণ ও অন্যান্য এবং আইনজীবী সমিতির নতুন ভবনও প্রকল্পও রয়েছে।
এ সময় চারটি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী। এ প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট (দ্বিতীয় পর্যায়) শীর্ষক প্রকল্প; কুতুবদিয়া উপজেলার ধুরুং জিসি মিরাখালী সড়কে ধুরুংঘাটে ১৫৩ দশমিক ২৫ মিটার জেটি এবং আকবর বলী ঘাটে ১৫৩ দশমিক ২৫ মিটার জেটি নির্মাণ; মহেশখালী উপজেলার গোরকঘাটা ঘাটে জেটি নির্মাণ; বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত নিরাপত্তা উন্নত করার জন্য উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলায় নাফ নদ বরাবর পোল্ডারসমূহের (৬৭/এ, ৬৭, ৬৭/বি এবং ৬৮) পুনর্বাসন প্রকল্প।