নেত্রকোণা ট্র্যাজেডি দিবস উপলক্ষে ৮ ডিসেম্বর শহরে তিন মিনিট রাস্তায় দাঁড়িয়ে নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে পালন করা হবে ‘স্তব্ধ নেত্রকোণা’ কর্মসূচি।
২০০৫ সালের এদিন সকালে জামাত-উল-মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) নামক উগ্রবাদী সংগঠনের আত্মঘাতী জঙ্গিরা নেত্রকোণা শহরের অজহর রোডে অবস্থিত উদীচীর জেলা সংসদ কার্যালয়ে আত্মঘাতী বোমা হামলা চালায়।
এ হামলায় উদীচীর গণসংগীতশিল্পী খাজা হায়দার হোসেন, নাট্যশিল্পী সুদীপ্তা পাল শেলীসহ আটজন প্রাণ হারান।
‘নেত্রকোণা ট্র্যাজেডি দিবস উদযাপন কমিটি’র ব্যানারে এবারও নেয়া হয়েছে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি।
কমিটির সদস্যসচিব মারুফ হাসান খান অভ্র জানান, কর্মসূচির অংশ হিসেবে সকাল ৯টা ১৫ মিনিটে উদীচী কার্যালয়ের সামনে কালো পতাকা উত্তোলন ও কালো ব্যাজ ধারণ করা হবে। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে অজহর রোডে স্থাপিত স্মৃতিস্তম্ভে করা হবে পুষ্পস্তবক অর্পণ।
সকাল ১০টা ৪০ থেকে ১০টা ৪৩ মিনিট পর্যন্ত (বোমা হামলার সময়) তিন মিনিট রাস্তায় দাঁড়িয়ে নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে পালন করা হবে ‘স্তব্ধ নেত্রকোণা’ কর্মসূচি। অর্থাৎ এই তিন মিনিট শহরের প্রধান সড়কে কোনো যানবাহন চলবে না। পথচারীরাও ঠাঁয় দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করবেন।
বেলা ১১টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে থেকে বের করা হবে প্রতিবাদী মিছিল। সব শেষে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে শহীদ মিনারের মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে সন্ত্রাস, মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী সমাবেশ এবং প্রতিবাদী গান।
এদিকে বোমা হামলার পর দীর্ঘ ১৫ বছর পেরিয়ে গেলেও হামলায় নিহত ব্যক্তিদের পরিবারগুলোর পুনর্বাসনের কোনো সরকারি উদ্যোগ নেয়া হয়নি। খাজা হায়দার হোসেন, সুদীপ্তা পাল শেলী এবং যাদব দাস ছিলেন তাদের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তাদের প্রত্যেকটি পরিবার এখন সীমাহীন কষ্টে দিন যাপন করছে।
খাজা হায়দার হোসেনের স্ত্রী শাহনাজ বেগম একটি স্থানীয় এনজিওতে চাকরি করতেন। তিন বছর আগে তার চাকরি চলে গেছে। অসুস্থতায় মারা গেছে বড় ছেলে। দ্বিতীয় ছেলের লেখাপড়ার খরচ চালাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন বিধবা শাহনাজ।
শেলীর মা অরুণা পাল এবং বাবা সুনীল পালও বৃদ্ধ এবং অসুস্থ। নিদারুণ কষ্টে চালাচ্ছেন চিকিৎসা, বাসাভাড়া ও সংসার খরচ। মাছ বিক্রেতা আফতাব উদ্দিন এবং রিকশাচালক রইছ উদ্দিনের পরিবারের অবস্থাও তথৈবচ।
উদীচীর জেলা সংসদের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান খান বলেন, ‘আমাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা শেলী ও হায়দারের পরিবারকে বিভিন্ন সময়ে কিছু সহযোগিতা করেছেন। কিন্তু পরিবারগুলোর স্থায়ী পুনর্বাসন হওয়া দরকার।’
২০০৮ সালে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল আদালতে এ বোমা হামলা মামলার রায় ঘোষিত হয়। এতে জেএমবির জঙ্গি সালাউদ্দিন ওরফে সালেহীন, আসাদুজ্জামান চৌধুরী ওরফে পনির এবং ইউনুছ আলীর মৃত্যুদণ্ড দেয় আদালত। তাদের মধ্যে সর্বশেষ গত ১৫ জুলাই রাতে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে জঙ্গি আসাদুজ্জামান চৌধুরী ওরফে পনিরের ফাঁসি কার্যকর করা হয়।