সরকারি দিবস পালনের ক্ষেত্রে একগুচ্ছ নির্দেশনা জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। সম্প্রতি জারি করা এক পরিপত্রে এ-সংক্রান্ত নির্দেশ দেয়া হয়। বিরূপ অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে কৃচ্ছ্রসাধনের উদ্দেশে এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
এ ক্ষেত্রে সাজসজ্জা সীমিত করাসহ বড় ধরনের বিচিত্রানুষ্ঠান যথাসম্ভব পরিহার করতে বলা হয়েছে। অবশ্য রেডিও ও টেলিভিশনে আলোচনা এবং সীমিত আকারে সেমিনার বা সিম্পোজিয়াম আয়োজন করা যাবে। তবে কর্মদিবসে কোনো ধরনের সমাবেশ বা শোভাযাত্রা পরিহার করতে বলা হয়েছে।
অন্য নির্দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে কোনো সপ্তাহ পালনের ক্ষেত্রে অনুষ্ঠানসূচি সাধারণভাবে তিন দিনের মধ্যে সীমিত থাকবে, সরকারিভাবে নেয়া কোনো কর্মসূচি যাতে অফিসের কর্মকাণ্ডে ব্যাঘাত না ঘটায়, তা নিশ্চিত করতে হবে এবং আলোচনা বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানাদি ছুটির দিনে অথবা অফিস সময়ের পরে আয়োজনের চেষ্টা করতে হবে।
এ ছাড়াও নগদ কিংবা উপকরণ আকারে অর্থ বা সম্পদ ব্যয়ের প্রয়োজন হবে না এমন সাধারণ ইভেন্টগুলো ছুটির দিনে কিংবা কার্যদিবসে আয়োজন করা যাবে। যেমন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী প্রচার, পতাকা উত্তোলন (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে), ঘরোয়া আলোচনা সভা, রেডিও ও টেলিভিশনে আলোচনা, পত্রিকায় প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রদান ইত্যাদি এবং কোন দিবস বা সপ্তাহ পালন উপলক্ষে রাজধানীর বাইরে থেকে জেলা পর্যায় থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঢাকায় আনা যথাসম্ভব পরিহার করা হবে।
কোনো কোনো দিবস কীভাবে পালন করা হবে সে-সংক্রান্ত নির্দেশও দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। বিভাগের নির্দেশ অনুযায়ী যেসব দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপন বা পালন করা হবে সেগুলো হলো শহীদ দিবস (আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস), জাতীয় বিমা দিবস, ঐতিহাসিক সাতই মার্চ, জাতির পিতার জন্ম দিবস ও জাতীয় শিশু দিবস, গণহত্যা দিবস স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস, মে দিবস, বৌদ্ধপূর্ণিমা, শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামাল-এর জন্মবার্ষিকী, বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব-এর জন্মবার্ষিকী, জাতীয় শোক দিবস, শেখ রাসেল দিবস, জাতীয় সংবিধান দিবস, বিজয় দিবস, বড়দিন, বাংলা নববর্ষ, রবীন্দ্র জয়ন্তী, নজরুল জয়ন্তী, ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহা, ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) এবং দুর্গাপূজা।
এর বাইরে যেসব দিবস ঐতিহ্যগতভাবে পালন করা হয়ে থাকে বা দেশের পরিবেশ সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও সামাজিক উদ্বুদ্ধকরণের জন্য বিশেষ সহায়ক, সেসব দিবস উল্লেখযোগ্য কলেবরে পালন করা যেতে পারে বলে জানিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
এ ধরনের দিবসগুলো হলো জাতীয় সমাজসেবা দিবস, জাতীয় টিকা দিবস, জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস, জাতীয় পরিসংখ্যান দিবস, জাতীয় ভোটার দিবস, জাতীয় পাট দিবস, বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস, বিশ্ব আবহাওয়া দিবস, জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস, আন্তর্জাতিক ক্রীড়া দিবস ও জাতীয় ক্রীড়া দিবস, বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস, মুজিবনগর দিবস, নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস, জাতীয় চা দিবস, বিশ্ব পরিবেশ দিবস, মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস, বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস, জাতীয় পাবলিক সার্ভিস দিবস, জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা দিবস, আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস, বিশ্ব নৌ দিবস, জাতীয় উৎপাদনশীলতা দিবস, শিশু অধিকার দিবস, আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস, বিশ্ব খাদ্য দিবস, জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস, জাতীয় যুব দিবস৷ জাতীয় সমবায় দিবস, বিশ্ব এইডস দিবস, জাতীয় বস্ত্র দিবস, আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস, বেগম রোকেয়া দিবস ও ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস।
পরিপত্রে বলা হয়েছে, মন্ত্রীরা এসব অনুষ্ঠানে সম্পৃক্ত থাকবেন এবং এ ধরনের অনুষ্ঠানের গুরুত্ব বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রীকেও আমন্ত্রণ জানানো হবে। এ পর্যায়ের অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য সরকারি উৎস থেকে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ করা যেতে পারে।
এ ছাড়া বিশেষ বিশেষ খাতের প্রতীকী দিবসগুলো সীমিত কলেবরে পালন করা হবে। মন্ত্রীরা এ সব দিবসের অনুষ্ঠানে উপস্থিতির বিষয় বিবেচনা করবেন। উন্নয়ন খাত থেকে এ সব দিবস পালনের জন্য কোনো বিশেষ বরাদ্দ দেয়া হবে না।
এ ধরনের দিবসগুলো হলো বার্ষিক প্রশিক্ষণ দিবস, জাতীয় নিরাপদ খাদ্য দিবস, জাতীয় ক্যানসার দিবস, আন্তর্জাতিক নারী অধিকার ও আন্তর্জাতিক শান্তি দিবস, জাতীয় দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবস, বিশ্ব পানি দিবস, বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস, বিশ্ব মেধাসম্পদ দিবস, জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস, জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেইফটি দিবস, বিশ্ব প্রেস ফ্রিডম দিবস, আন্তর্জাতিক রেডক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট দিবস, বিশ্ব টেলিযোগাযোগ দিবস, বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস, বিশ্ব অ্যাক্রেডিটেশন দিবস, বিশ্ব খরা ও মরুকরণ প্রতিরোধ দিবস, আন্তর্জাতিক সমবায় দিবস, আন্তর্জাতিক ওজন সংরক্ষণ দিবস, বিশ্ব পর্যটন দিবস, বিশ্ব হার্ট দিবস, আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস, বিশ্ব বসতি দিবস, জাতীয় জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন দিবস, বিশ্ব ডাক দিবস, বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস, বিশ্ব সাদা ছড়ি দিবস, জাতিসংঘ দিবস, জাতীয় স্বেচ্ছায় রক্তদান ও মরণোত্তর চক্ষুদান দিবস, বিশ্ব ডায়েবেটিক দিবস, প্যালেস্টাইনি জনগণের প্রতি আন্তর্জাতিক সহমর্মিতা দিবস, বিশ্ব মানবাধিকার দিবস, আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস, জাতীয় জীববৈচিত্র্য দিবস এবং জাতীয় শিক্ষক দিবস।
এগুলো ছাড়াও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও দপ্তরগুলো অন্য যে দিবসগুলো পালন করে থাকে সেগুলোর ক্ষেত্রে সম্পৃক্তি পরিহার করতে বলা হয়েছে।
এর বাইরে শিক্ষা সপ্তাহ, প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ, বিজ্ঞান সপ্তাহ, বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ (১-৭ আগস্ট), বিশ্ব শিশু সপ্তাহ (২৯ সেপ্টেম্বর-৫ অক্টোবর), সশস্ত্র বাহিনী দিবস (২১ নভেম্বর), পুলিশ সপ্তাহ, বিজিবি সপ্তাহ, আনসার সপ্তাহ, মৎস্য সপ্তাহ, বৃক্ষরোপণ অভিযান এবং জাতীয় ক্রীড়া সপ্তাহ পালনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা নিয়ে কর্মসূচি গ্রহণ করবে। অনুমোদিত কর্মসূচি অনুযায়ী অনুষ্ঠানাদির আয়োজন করা হবে।