বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

নাব্যতা সংকটে বেকার ফরিদপুরের ৭ হাজার নৌশ্রমিক

  •    
  • ৭ ডিসেম্বর, ২০২২ ১৩:১৫

ফরিদপুর নৌবন্দরের পণ্য খালাসে নিযুক্ত প্রতিষ্ঠান টাইগার ট্রান্সপোর্টের ম্যানেজার মো. আ. হাকিম বলেন, ‘প্রায় ৮ হাজার শ্রমিক এই বন্দরে কাজ করতেন। এর মধ্যে অনেক ট্রান্সপোর্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীও আছেন। জাহাজ, কার্গো না আসায় তারা বেকার হয়ে পড়ছেন।’

নাব্যতা সংকটের কারণে ফরিদপুরে পদ্মা নদীর সিঅ্যান্ডবি ঘাট নৌবন্দর এলাকায় জাহাজ চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। নদীর মাঝে জেগে ওঠা ডুবোচরে আটকে দূরদূরান্ত থেকে আসা পণ্যবাহী জাহাজ বন্দরে ভিড়তে পারছে না। কার্গো, বলগেট ও বড় ট্রলারের চলাচলও ব্যাহত হচ্ছে। এতে ঘাটের প্রায় ৭ হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন।

নৌবন্দরের শুঙ্ক আদায়ও কমেছে। এসব নৌযান থেকে পণ্য খালাস করতে গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত অর্থ।

সংশ্লিষ্টরা জানান, সেপ্টেম্বর মাসের শেষ দিক থেকে পদ্মা নদীর পানি কমতে শুরু করে। তখন থেকেই এসব নৌযান নাব্যতা সংকটের কারণে ঘাটে ভিড়তে পারছে না।

নাব্যতা সংকট রক্ষায় কমপক্ষে ১০-১৫ স্থানে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) ড্রেজিং মেশিন বসিয়ে খনন জরুরি হয়ে পড়েছে। তবে খনন পরিকল্পিতভাবে না হলে, অল্প দিনের মধ্যেই নতুন বালু এসে নৌ চ্যানেলগুলো ভরাট হয়ে যাবে বলে মনে করছেন নৌযান মালিকরা।

দক্ষিণবঙ্গসহ ফরিদপুরের পণ্য আনা-নেয়ার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই নৌবন্দরটি শত বছরের প্রাচীন। ২০১৫ সালে সরকার এটিকে তৃতীয় শ্রেণির নৌবন্দর হিসেবে ঘোষণা দিয়ে গেজেট প্রকাশ করে। চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্রবন্দর এবং সিলেট, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে নৌপথে এই বন্দরে পণ্য আনা-নেয়া করা হয়। কিন্তু নাব্যতা সংকটের কারণে সৃষ্ট ডুবোচরে আটকে পণ্যবাহী নৌযান বন্দরে আসতে পারছে না। যেগুলো মাল খালাস করেছে সেগুলো ঘাটে আটকা পড়েছে।

বন্দর সূত্রে জানা যায়, নৌবন্দরে ভিড়তে না পেরে অনেক দূরে ডিক্রীচর, ভূঁইয়াবাড়ি ঘাট, খুশির বাজার, পিয়াজখালী ঘাট, হাজিগঞ্জের চরহাজীগঞ্জের এলাকা, চরভদ্রাসনের এমপিডাঙি ও গোপালপুরসহ বিভিন্ন স্থানে নদীর তীরে পণ্যবাহী জাহাজ, কার্গো বলগেট ও বড় ট্রলার ভেড়ানো হচ্ছে।

নারায়ণগঞ্জের মেঘনা ঘাট থেকে সিমেন্ট নিয়ে এসেছেন মো. সাকিল শেখ। কিন্তু ডুবোচরে আটকে গেছে তার জাহাজ। তিনি বলেন, ‘চরে এসে ঠেকে গেছি। আমার জাহাজে ১২ হাজার বস্তা সিমেন্ট আনা যায়। কিন্তু পর্যাপ্ত গভীরতা নেই বলে ৮ হাজার বস্তা এনেছি। ৪ হাজার বস্তা সিমেন্ট কম আনতে হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ থেকে ফরিদপুর ঘাটে আসতে প্রায় দুই কিলোমিটার চর। তিন দিনের পথ আসতে পাঁচ দিন লেগেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এতে আমাদের পণ্যের আগ্রহ কমে গেছে। নৌবন্দরে ভিড়তে পারলে প্রতি বস্তা থেকে ১৪ টাকা করে বাড়তি পেতাম। কিন্তু এখন এই ভাড়ার অর্ধেক দিয়ে আরেকটি ট্রলার ভাড়া করে মাল খালাস করতে হচ্ছে। এসব কারণে স্টাফ খরচ এবং অন্যান্য ভাড়াও বেড়েছে।’

‘এমভি শতনীড়’ জাহাজের মাস্টার মো. কামাল বলেন, ‘নদীতে পানি না থাকায় জাহাজের ইঞ্জিনের পাখা ডুবোচরে ঠেকে যায়। এতে চালু অবস্থায় জাহাজের অনেক ক্ষতি হয়।’

তিনি বলেন, ‘অন্তত গড়ে ১০ হাত গভীর পানি থাকা প্রয়োজন। কিন্তু সেখানে কোথাও কোথাও দুই-তিন হাত পানি রয়েছে। এখন জরুরি ভিত্তিতে ড্রেজিং করা দরকার। পরিকল্পিতভাবে ড্রেজিং না করলে ফের পলি পড়ে গভীরতা কমে যায়।’

পদ্মায় নাব্যতাতা ফিরছে না কেন জানতে চাইলে সেখানে ড্রেজিংয়ের কাজে নিযুক্ত বিআইডব্লিউটিএ-এর শ্রমিক আলাওল হাওলাদার বলেন, ‘ড্রেজিংয়ের পরপরই আবার নতুন পলি ও বালু এসে ভরে যায়। পানিতে প্রচুর পলি থাকায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।’

ফরিদপুর নৌবন্দরের পণ্য খালাসে নিযুক্ত প্রতিষ্ঠান টাইগার ট্রান্সপোর্টের ম্যানেজার মো. আ. হাকিম বলেন, ‘প্রায় ৮ হাজার শ্রমিক এই বন্দরে কাজ করতেন। এর মধ্যে অনেক ট্রান্সপোর্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীও আছেন। জাহাজ, কার্গো না আসায় তারা বেকার হয়ে পড়ছেন, কাজ পাচ্ছেন না।’

পদ্মা ট্রান্সপোর্টের মালিক রহমান জানান, বছরের ৫ মাস এখানে পানি কম থাকে বলে পণ্য খালাসে সমস্যা হয়।

ঘাটের শ্রমিকদের নেতা মো. তারা মিয়া জানান, এই ঘাটের ১১টি সেক্টরে প্রায় ৮ হাজার শ্রমিক ছিলেন। পদ্মার যৌবন থাকা অবস্থায় এই বন্দরে প্রতিদিন ৩/৪ শত নৌযান ভিড়ত। এখন নাব্যতা সংকটের কারণে সপ্তাহ ১০/১৫ টি বলগেট ও ৩/৪ টি জাহাজ আসে। কাজ না থাকায় কমপক্ষে ৭ হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন।

ফরিদপুরের সিঅ্যান্ডবি ঘাট থেকে শুল্ক আদায়কারী বিআইডব্লিউটিএ কর্মচারী মো. রবিউল ইসলাম জানান, বন্দরে জাহাজ, কার্গো, বলগেট, বড় ট্রলার ভিড়তে না পারায় শুল্ক আদায়ও কমে গেছে।

তিনি জানান, আগে ঘাটটি ইজারা দেয়া হতো। তবে এখন সরাসরি বিআইডব্লিউটিএ-এর লোকেরা শুল্ক আদায় করেন।

এ ব্যাপারে নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক বিআইডব্লিউটিএ-এর সংশ্লিষ্ট একজন পোর্ট অফিসার বলেন, ‘নৌবন্দরটিকে সচল করতে নৌচ্যানেলে ড্রেজিং চলছে। তবে এই ঘাটের পথটি এখনও বড় নৌযান চলাচলের উপযুক্ত হয়নি। আশা করছি চলতি মৌসুমেই ঘাট পয়েন্টে ড্রেজিংয়ের কাজ শুরু হবে। এতে সংকট কেটে যাবে।’

এ বিভাগের আরো খবর