ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় ড্রাগন ফল চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন অনেক চাষি।
কিছু অসাধু চাষি রাসায়নিক ব্যবহার করায় তাদের চাষ করা ফল আকারে বড় হচ্ছে, অথচ জৈব সার দিয়ে চাষ ফল হচ্ছে তুলনামূলকভাবে ছোট আকারের।
এ অবস্থায় ছোট ফলগুলো বিক্রিতে লাভ হচ্ছে না। তাই ওই চাষিরা ড্রাগন চাষ বন্ধ করে দিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন।
ফুলবাড়িয়া উপজেলার ড্রাগন চাষি অধ্যাপক আবু বক্কর সিদ্দিক প্রিন্স ‘কিষাণ সমন্বিত কৃষি উদ্যোগ’ নামে ৮ একর জায়গায় কৃষি খামার করেছেন।
সেখানে গিয়ে দেখা যায়, দেশি-বিদেশি গাছের বাগানগুলো থাকলেও ড্রাগন ফলের বাগানের অসংখ্য গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। এ সময় শ্রমিকরা অন্য জাতের গাছগুলোতে পরিচর্যায় ব্যস্ত থাকলেও ড্রাগন গাছ পরিচর্যায় কাউকে দেখা যায়নি।
আবু বক্কর সিদ্দিক প্রিন্স বলেন, ‘অসাধু ড্রাগন চাষিরা ফুলে ড্রাগন টনিক নামের একটি রাসায়নিক স্প্রে করে। এ কারণে ফল বেশ বড় হয় এবং এক পাশে লাল থাকলেও আরেক পাশে থাকে সবুজ। আর জৈব সার দিয়ে পরিচর্যা করা বিষমুক্ত ড্রাগন ফল তুলনামূলকভাবে ছোট হয়। বাজারে দামও পাওয়া যায় খুব কম।
‘এতে প্রতিবছর লোকসান গুনতে হচ্ছে। তাই ৬ হাজার গাছের মধ্যে ইতোমধ্যে ৮ শতাধিক গাছ কেটে ফেলেছি। অন্য গাছগুলোও ধীরে ধীরে কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘মানুষ টাকা দিয়ে বিষ কিনে খাচ্ছে। অথচ প্রশাসনের নজরদারি নেই। ফলে আমাদের মতো বিষমুক্ত ফল চাষ করা ব্যক্তিরা লোকসানের মুখে পড়ছে। অনেক আদর্শ খামারি বিষমুক্ত ফল চাষ করে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে তারাও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। আবার অনেকে বেশি লাভের আশায় ক্ষতিকর রাসায়নিক স্প্রে করছেন।’
উপজেলা কৃষি অফিসের এক কর্মকর্তা জানান, সাধারণত মে থেকে নভেম্বর পর্যন্ত গাছে ফল আসে। বছরে ছয় থেকে সাত বার পাকা ড্রাগন সংগ্রহ করা যায়। ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ এই ড্রাগন ফল হজমে সহায়তা করে। রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার পাশাপাশি, ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এ ছাড়াও হার্টের জন্য উপকারী ড্রাগন ফল। বর্তমানে বাংলাদেশে ড্রাগন ফলের চাহিদা বাড়ার কারণে উৎপাদনও বাড়ছে।
এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ফুলবাড়িয়া উপজেলা কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘এ উপজেলায় ২৬ একর জমিতে ড্রাগনের চাষ হচ্ছে। ড্রাগনে রাসায়নিক স্প্রে না করতে চাষিদের পরামর্শ দিচ্ছি। তবুও গোপনে কেউ এটি করছে কিনা আমার জানা নেই। খোঁজখবর নিয়ে এর প্রমাণ মিললে প্রশাসনের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’