বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সারা বছর পলো তৈরি করে চলে তাদের জীবন

  •    
  • ৭ ডিসেম্বর, ২০২২ ০৮:৫৮

ফরিদপুরের সদর উপজেলার গেরদা ইউনিয়নের গ্রামের নামই বদলে হয়ে গেছে পলোডাঙ্গা গ্রাম। গ্রামের প্রায় সবার পেশা মাছ ধরার যন্ত্র পলো তৈরি করা।

গ্রামের নাম বোকাইল। ফরিদপুরের সদর উপজেলার গেরদা ইউনিয়নের এ গ্রামের পরিবারের সংখ্যা দেড় শতাধিক। গ্রামের সবাই মাছ ধরার যন্ত্র ‘পলো’ তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। বছর জুড়ে এটি তৈরি করে চলে তাদের জীবন। প্রায় চার যুগেরও বেশি সময় ধরে এটি চলছে। এ কারণে গ্রামের আদি নাম বোকাইল বদলে হয়ে গেছে পলোডাঙ্গা গ্রাম।

গ্রামের প্রতিটি পরিবারের শিশু-কিশোর-কিশোরী থেকে শুরু করে নারী-পুরুষ-বৃদ্ধসহ সবাই পলো তৈরির কাজ করে থাকেন। এই পলোডাঙ্গা গ্রামের পলোর খ্যাতি জেলার গন্ডি পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যবসায়ীরা এখান থেকে পাইকারি দরে পলো কেনেন।

মাছ ধরার কাজেই শুধু এই পলো ব্যবহৃত হয় না। হাঁস-মুরগি পালন, বাড়ির সৌন্দর্য বর্ধনেও এই বাঁশের তৈরি ছোট ছোট পলো ব্যবহার হয়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সদর উপজেলার গেরদা ইউনিয়নের বোকাইল গ্রামের এমন কোনো বাড়ি নেই যে বাড়িতে পলো তৈরি করা হয় না। প্রতিটি বাড়ির আঙিনায় দেখা মেলে পলো ও পলো তৈরির জিনিসপত্র। বাঁশের শলা দিয়ে পলো তৈরির কাজ চলছে। কেউ বাঁশ কাটছেন, কেউ বাঁশের শলা তৈরি করছেন আবার কেউ প্লাস্টিকের রশি দিয়ে তৈরি করছেন পলো।

স্থানীয়রা জানান, প্রতিটি পরিবারের তিন থেকে চার জন সদস্য গড়ে প্রতিদিন ৮ থেকে ১০টি পলো তৈরি করে থাকেন। তবে পুরুষের থেকে বাড়ির মহিলারাই সারা দিন পলো তৈরির কাজে বেশি ব্যস্ত থাকেন। আশপাশের হাট-বাজারে বিক্রি করার পাশাপাশি বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পলো ব্যবসায়ীরা এখান থেকে পাইকারি দামে পলো কিনে নিয়ে যান। বাজারে প্রকারভেদে প্রতিটি পলো ২০০ থেকে ৩০০ টাকা দরে বিক্রি হয়। আর পাইকারি দরে প্রতিটি পলো বিক্রি হয় ১৫০ থেকে ২০০ টাকা দরে। বড় আকারের একটি বাঁশ কিনতে খরচ পড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। প্রতিটি বাঁশ দিয়ে তিন থেকে চারটি পলো তৈরি করা যায়।

বোকাইল গ্রামের বাসিন্দা নাজিমুদ্দিন মোল্লা, বক্কার মন্ডল, ইদ্রিস শেখ জানান, তারা বাপ-দাদার আমল থেকে এই পলো তৈরির পেশার সাথে জড়িত। গ্রামের আদি নাম বোকাইল হলেও এখন সবার কাছে মৌখিকভাবে পলোডাঙ্গা গ্রাম হিসেবে পরিচিত পেয়েছে। প্রতিটি পরিবারের জীবিকা চলে এটি তৈরি করে।

গৃহবধূ নারগিস বেগম, স্বর্ণা বেগম জানান, সারা দিন গৃহস্থালির কাজের পাশাপাশি সারাদিন পলো তৈরি করেন তারা। এগুলো বিক্রির টাকা দিয়েই চলে সংসার। সরকারি সহায়তা পেলে পলো তৈরি করে গ্রামের মানুষ আরও স্বাবলম্বী হতে পারত।

গ্রামের বাসিন্দা জসিম মাতুব্বর বলেন, বিভিন্ন স্থান থেকে মহাজনরা এসে পলো কিনে গাড়ি ভরে নিয়ে যান। গাড়ি ও শ্রমিক খরচ বাদে প্রতিটি পলোতে গড়ে ৬০ থেকে ৭০ টাকার মতো লাভ হয়।

গ্রামের আরেক বাসিন্দা হাসেম মোল্লা বলেন, ‘আমি সেই পাকিস্তান আমল থেকে পলো তৈরি করি। বাপ-দাদার পেশা তাই ধরে রেখেছি। কোনোমতে খেয়ে-পরে চলছে জীবন। সরকারি বেসরকারি সকল সাহায্য সহযোগিতা থেকে আমরা বঞ্চিত। এলাকার জনপ্রতিনিধিরা শুধু ভোটের সময় খোঁজ নেন। সারা বছর কোনো খোঁজ থাকে না। আমাদের সুদমুক্ত ঋণের ব্যবস্থা করলে এ পেশা আরো ভালোভাবে করা সম্ভব। এতে আমাদের জীবনযাত্রার মান আরো ভালো হবে।’

স্থানীয় ১১ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য (মেম্বার) শেখ ঝিলু বলেন, ‘গ্রামটির প্রতিটি পরিবার এই পলো তৈরির সাথে জড়িত। এটি তৈরি করেই তাদের জীবিকা নির্বাহ করতে হয়। সরকারি বরাদ্দ অনুযায়ী গ্রামের গরীব ও দুঃস্থ পরিবারকে সাহায্য সহযোগিতা করা হয়।’

এ বিষয়ে গেরদা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আরিফ হোসেন বলেন, ‘গ্রামের ৯৫ ভাগ মানুষ পলো তৈরির কাজের সাথে জড়িত। এটা তাদের প্রধান পেশা। ইউনিয়ন পরিষদে সরকারি বরাদ্দ অনুযায়ী নিয়ম অনুসারে গরীব অসহায় মানুষের সাহায্য সহযোগিতা করা হয়ে থাকে।’

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) ফরিদপুরের উপমহাব্যবস্থাপক হ র ম রফিকউল্লাহ বলেন, ‘ফরিদপুরের বোকাইল গ্রামের পলো গুনে-মানে বেশ ভালো। এখানকার পলোর খ্যাতি ও চাহিদা রয়েছে। বিসিক সব সময় এসব ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পকে ছড়িয়ে দিতে কাজ করছে। এ কাজে জড়িতদের ভালোমানের পলো তৈরিতে আগ্রহী করার পাশাপাশি পলো তৈরির কারিগরদের প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সহযোগিতার ব্যবস্থা করা হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর