নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আগামী ১০ ডিসেম্বর রাজধানীতে জনসভার স্থান নিয়ে বিএনপি সমঝোতায় আসবে বলে আশা করছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওায়দুল কাদের।
বিএনপি নয়াপল্টন না হলে আরামবাগে করতে চায় এই সমাবেশ। তবে পুলিশ অনুমতি দিয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। সেখানে যেতে নারাজ বিরোধী দলটি।
জনসভা আগামী শনিবার। চার দিন আগেই দুই পক্ষের অনড় অবস্থানের মধ্যে রাজনীতিতে উত্তাপের মধ্যে মঙ্গলবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ওবায়দুল কাদের।
এদিক ঢাকায় ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মার তার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। দুই জনের আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন আওয়ামী লীগ নেতা।
কাদেরের কাছে প্রশ্ন রাখা হয়, ‘বিএনপি কি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করবে?’
জবাবে তিনি বলেন, ‘যেটিই হোক একটি সমঝোতা হবে। হয়ে... যাবে। বাংলাদেশের রাজনীতির আকাশে আজ ঘনমেঘ ঘনীভূত হয়েছে। আবার চট করে চলে যায়। আমি একজন চিরন্তন আশাবাদী মানুষ।’
নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবিতে গত ৮ অক্টোবর থেকে প্রতিটি বিভাগীয় শহরে বিএনপির ধারাবাহিক যে সমাবেশ হচ্ছে, তা শেষ হচ্ছে ১০ ডিসেম্বর ঢাকার সমাবেশের মধ্য দিয়ে।
তবে চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, খুলনা, রংপুর, বরিশাল, ফরিদপুর, কুমিল্লা ও রাজশাহীতে বিএনপির সমাবেশের স্থল নিয়ে কোনো সমস্যা তৈরি না হলেও ঢাকার সমাবেশের স্থল এখন পর্যন্ত অনিশ্চিত।
বিএনপি নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করতে চায়। ২০ নভেম্বর বিএনপির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক আবেদনপত্র জমা দেয়া হয় ঢাকা মহানগর পুলিশের কাছে।
শুরু থেকেই জানা যাচ্ছিল সরকার সেখানে সমাবেশ করতে দিতে রাজি নয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেদিন জনসভার স্থল নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, সেদিনই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যায়।
বিএনপি সমাবেশে কয়েক লাখ মানুষের সমাগমের যে ঘোষণা দিয়ে রেখেছে, সেটি উল্লেখ করে সরকারপ্রধান প্রশ্ন রাখেন, এত মানুষের জমায়েতের জায়গা নয়াপল্টনে আছে কি না।
এরপর তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বিএনপিকে পূর্বাচলে বা ইজতেমা ময়দানে যেতে বলেন। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পাচ্ছে বিএনপি।
তবে নয়াপল্টনের দাবিতে অনড় বিএনপির নেতারা প্রয়োজনে অনুমতি ছাড়াই সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়ে রাখলেও রোববার দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কিছুটা নমনীয় হন। তিনি সোহরাওয়ার্দীর বদলে বিকল্প জায়গা চান, তবে সেটি তুরাগ তীর হওয়া চলবে না, এটিও জানিয়ে দেন।
এরপর তথ্যমন্ত্রী ফের জানতে চান, বিএনপি তুরাগতীরের ইজতেমা ময়দান বা পূর্বাচলে সমাবেশ করতে রাজি কি না। বিএনপির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য এরপর আর আসেনি।
এর মধ্যে বিএনপির পক্ষ থেকে মৌখিকভাবে পুলিশের কাছে আরামবাগ বরাদ্দ চেয়ে অনুরোধ করা হয়েছে। তবে সেখানেও সমাবেশটি সড়কেই হবে জানিয়ে বাহিনীটির এক কর্মকর্তা তা নাকচ করেছেন। পাশাপাশি তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, আরামবাগের কাছে দেশের অন্যতম প্রধান বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিলের অবস্থান। সেখানে কেন বিএনপি সমাবেশ করবে।
দুই পক্ষের পরস্পরবিরোধী অবস্থানের মধ্যেও জনগণকে দুশ্চিন্তা করতে নিষেধ করেন কাদের। বলেন, ‘জনগণের আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। দলের পক্ষ থেকে আমি বলতে চাই। আমরা সরকারে আছি, আমরা কেন দেশের অশান্তি চাইব? আমরা কেন আতঙ্ক সৃষ্টি হয়, এমন কাজ করব। দরকার তো নেই।
‘এখন যদি আতঙ্কের বা এখানে আক্রমণ করা হয়, যদি উসকানি দেয়া হয়, আমাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়বে, আমরা চুপ করে বসে থাকব। আশা করছি, বিরোধীদল শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করবে। দলীয়ভাবে আমরা তাদের সঙ্গে কখনো সংঘাত সৃষ্টি করিনি। এখন আমরা সংঘাত চাই না।’
ঢাকায় ভারতের নতুন দূতের সঙ্গে আলোচনা কী নিয়ে, জানতে চাইলে ক্ষমতাসীন দলের নেতা বলেন, ‘ঢাকায় নতুন ভারতীয় হাইকমিশনার হিসেবে তিনি দায়িত্ব পাওয়ার পর আমার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে এসেছেন। রোড কানেকটিভিটি প্রকল্প নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। তিস্তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনি সর্বোচ্চ চেষ্টা করার কথা জানিয়েছেন।’
আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কথা হয়েছে কি না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে তিনি কোনো মতামত দেননি। আমি আমার বক্তব্য বলেছি।’
ভারত কেমন নির্বাচন দেখতে চায়- একজন সাংবাদিকের এমন প্রশ্নে কাদের বলেন, ‘এসব কিছু নিয়ে কথা হয়নি। অহেতুক আমি মিথ্যা কথা বলব কেন! তবে রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমি বলেছি যে বিরোধী দল আন্দোলন করছে। তারা সরকারের পদত্যাগ চাচ্ছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া তারা নির্বাচন করবে না। ১০ ডিসেম্বরে বিএনপির মহাসমাবেশ নিয়েও কথা হয়েছে। সমাবেশের স্থান নিয়ে বিএনপি অনড়, তা জানিয়েছি।’