আগামী শনিবার রাজধানীতে বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশের জন্য পছন্দের জায়গা নয়াপল্টন ছাড়তে রাজি বিএনপি। তবে সরকারের বরাদ্দ দেয়া সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বদলে আরামবাগ যেতে চায় তারা।
সড়কে সমাবেশের অনুমতি দেয়া হবে না বলে ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনারের পক্ষ থেকে বক্তব্য আসার পর আরামবাগ বেছে নেয়ার ইচ্ছার কারণ সেখানে একটি ছোট মাঠ আছে। তবে সেটিও বড় সমাবেশের জন্য যথেষ্ট নয়। লোক সমাগম বেশি হলে নেতা-কর্মীদের ভিড় ছড়াবে বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিল ও আশেপাশে।
নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবিতে গত ১২ অক্টোবর থেকে প্রতিটি বিভাগীয় শহরে বিএনপির ধারাবাহিক যে সমাবেশ হচ্ছে, তা শেষ হচ্ছে ১০ ডিসেম্বর ঢাকার সমাবেশের মধ্য দিয়ে।
এই সমাবেশ কোথায় হবে, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে বিরোধ। বিএনপি নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করতে চায়। ২০ নভেম্বর বিএনপির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক আবেদনপত্র জমা দেয়া হয় ঢাকা মহানগর পুলিশের কাছে।
শুরু থেকেই জানা যাচ্ছিল সরকার সেখানে সমাবেশ করতে দিতে রাজি নয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেদিন জনসভার স্থল নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, সেদিনই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যায়।
বিএনপি সমাবেশে কয়েক লাখ মানুষের সমাগমের যে ঘোষণা দিয়ে রেখেছে, সেটি উল্লেখ করে সরকারপ্রধান প্রশ্ন রাখেন, এত মানুষের জমায়েতের জায়গা নয়াপল্টনে আছে কি না।
এরপর তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বিএনপিকে পূর্বাচলে বা ইজতেমা ময়দানে যেতে বলেন। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পাচ্ছে বিএনপি।
তবে নয়াপল্টনের দাবিতে অনড় বিএনপির নেতারা প্রয়োজনে অনুমতি ছাড়াই সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়ে রাখলেও রোববার দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কিছুটা নমনীয় হন। তিনি সোহরাওয়ার্দীর বদলে বিকল্প জায়গা চান, তবে সেটি তুরাগ তীর হওয়া চলবে না, এটিও জানিয়ে দেন।
এরপর তথ্যমন্ত্রী ফের জানতে চান, বিএনপি তুরাগতীরের ইজতেমা ময়দান বা পূর্বাচলে সমাবেশ করতে রাজি কি না। বিএনপির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য এরপর আর আসেনি।
এর আগে চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, খুলনা, রংপুর, বরিশাল, ফরিদপুর, কুমিল্লা ও রাজশাহীতে বিভাগীয় সমাবেশ করেছে বিএনপি। কিন্তু কোথাও জনসভা স্থল নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়নি।
সরকার রাজি নয়, এমন অবস্থানের মধ্যে বিরোধী দলটির শীর্ষস্থানীয় নেতারা যদিও প্রকাশ্যে নয়াপল্টনের কথাই বলে যাচ্ছেন, তবে তারা বুঝতে পেরেছেন পুলিশের অনুমতি ছাড়া এখানে সমাবেশ করা যাবে না। এ জন্য নিজেরাই বিকল্প খুঁজতে থাকেন। আলোচনায় উঠে আসে আরামবাগের কথা।
সরকার চায় বিএনপি সমাবেশ করুক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। তবে বিএনপি এখন পর্যন্ত রাজি নয় এতে
বিএনপি নেতাদের যুক্তি হলো, সেখানে মাঠ আছে। আবার সিএনজি পাম্পের সামনেও ফাঁকা জায়গা আছে। দলটির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, ঢাকা উত্তর বিএনপির আহ্বায়ন আমানউল্লাহ আমান এবং দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম ঢাকার পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে দেখা করে মৌখিকভাবে এই প্রস্তাব দিয়ে এসেছেন বলে জানিয়েছেন অন্য নেতারা।
তবে যেহেতু সেই সমাবেশ সড়কেই চলে আসার সম্ভাবনা বেশি, তাই আরামবাগেও বিএনপি অনুমতি পাচ্ছে না, এটি স্পষ্ট।
ঢাকা মহানগর পুলিশের মতিঝিল বিভাগের ডিসি হায়াতুল ইসলাম খান বলেন, ‘মৌখিকভাবে বিএনপি নেতারা নয়াপল্টন না দিলে আরামবাগে মহাসমাবেশ করার অনুমতি চেয়েছেন। তবে সেটিও সড়কের ওপর। তাই জনভোগান্তি ও নিরাপত্তার বিষয়ে চিন্তা করতে হবে। পুরো বিষয় নিয়েই যাচাই-বাছাই চলছে, বিএনপি নেতাদের সঙ্গে পুলিশ যোগাযোগ রক্ষা করছে।’
পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘নিরাপত্তা, যানজট, ভোগান্তিসহ সার্বিক বিষয় বিবেচনা করেই বিএনপিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তারা (পুলিশ) শেষ সময় পর্যন্ত আশা করবেন, দলটি সেখানেই তাদের কর্মসূচি পালন করবে।’
নয়াপল্টনের দাবি ছাড়ার বিষয়টি নিয়ে সোমবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায়ও আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সভায় থাকা একাধিক নেতা। তাদের মত হলো, যেহেতু সভাস্থল নিয়ে অনেক কথা হয়েছে, তাই সরকারের সিদ্ধান্ত মেনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে মেনে নিলে নেতাকর্মীদের মনোবল ভেঙে যাবে। তাই এই ময়দানের বদলে অন্য কোথাও হলে ভালো।
নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ করার অনুমতি চেয়ে গত ১৫ নভেম্বর পুলিশ কমিশনারকে চিঠি দেয় বিএনপি। তবে যানজট ও নাগরিক দুর্ভোগ সৃষ্টির কারণ দেখিয়ে গত ২৯ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার অনুমতি দেয় ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। বিএনপিকে দেয়া অনুমতিপত্রে সমাবেশের জন্য ২৬টি শর্ত জুড়ে দেয় ডিএমপি।
সমাবেশস্থলের নাম ছাড়াই লিফলেট
সমাবেশ স্থল নিয়ে অনিশ্চয়তার প্রভাব পড়েছে বিএনপির প্রচারেও। এই কর্মসূচিতে যোগ দিতে দলটি যে লিফলেট বিতরণ করছে, তাতে সমাবেশ স্থলের নাম ফাঁকা রাখা হয়েছে।
জনসভাস্থলের নাম ছাড়াই বিএনপি এই লিফলেটটি বিতরণ করছে
সমাবেশ সফল করতে সাতটি উপকমিটি করেছে বিএনপি। যেখানে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান ও আবদুস সালামকে সহ সমন্বয়ক এবং ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদকে সদস্যসচিব করে ১৪ সদস্যের ব্যবস্থাপনা উপকমিটি করা হয়েছে।
মহানগরের থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীদের দেওয়া হচ্ছে নতুন নতুন বার্তা। কোনো ইউনিটের শীর্ষ সারির একাধিক নেতা আটক হলেও যাতে নেতৃত্বে কিংবা কর্মী সংগঠিত করতে সমস্যা না হয়, সে অনুযায়ী পরিকল্পনা করছে বিএনপি।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সারাদেশের সমাবেশের ঘোষণা দিয়ে পরিবহন ধর্মঘট হয়েছে, পথে পথে হামলা হয়েছে। এবার মন্ত্রীরা বলছেন কোনো ধর্মঘট হবে না। বিএনপি কোনো ফাঁদে পা দেবে না। সেটার ব্যবস্থাও ভাবা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপি সরকারের মনোভাব বোঝার চেষ্টা করছে। পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হচ্ছে। কৌশলে গ্রেপ্তার এড়িয়ে চলার চেষ্টা চলছে। তবে গ্রেপ্তার হলেও সমস্যা নেই। কেউ আটক হলে যাতে তিন স্তরের বিকল্প নেতৃত্ব ঠিক করা আছে।’