বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বাংলাদেশে বিনিয়োগ করলে ৩০০ কোটি মানুষের বাজার সুবিধা: প্রধানমন্ত্রী

  •    
  • ৬ ডিসেম্বর, ২০২২ ১১:২৯

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি তো মনে করি পৃথিবীর মধ্যে বাংলাদেশটা হচ্ছে বিনিয়োগের জন্য সব থেকে আকর্ষণীয় জায়গা। কারণ আমরা সব থেকে বেশি সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছি। এখানে অবকাঠামো উন্নয়ন, বিনিয়োগকারীদের সব ইউটিলিটিজ সার্ভিস প্রদানে ব্যবস্থা আমাদের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে করে দিচ্ছি।’

বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশকে পৃথিবীর সবচেয়ে আকর্ষণীয় জায়গা বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ৩০০ কোটি মানুষের বড় বাজার সুবিধা নিতে দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে মঙ্গলবার সকালে বাংলাদেশ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল: জাপানিজ অর্থনৈতিক অঞ্চলের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।

এদিন গণভবন প্রান্ত থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত ছিলেন তিনি।

দেশের তরুণদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে স্বল্প সুদে ঋণ দেয়াসহ সরকারের নেয়া পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমি তো মনে করি পৃথিবীর মধ্যে বাংলাদেশটা হচ্ছে বিনিয়োগের জন্য সব থেকে আকর্ষণীয় জায়গা। কারণ আমরা সব থেকে বেশি সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছি। এখানে অবকাঠামো উন্নয়ন, বিনিয়োগকারীদের সব ইউটিলিটিজ সার্ভিস প্রদানে ব্যবস্থা আমাদের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে করে দিচ্ছি।

‘বিনিয়োগবান্ধব আইন বা নীতিমালা করা হয়েছে। বিনিয়োগকারীদের প্রতিযোগিতামূলক প্রণোদনা প্রদান করা হচ্ছে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি অবকাঠামোর বিস্তৃতি সাধন করা হচ্ছে। বিনিয়োগকারীদের বিভিন্ন সেবা-পরিষেবা অনুমোদনের জন্য ওয়ানস্টপ সার্ভিসও চালু করা হয়েছে। তারপরও এখানে কিছুটা কালক্ষেপণ হয়। সেগুলো যাতে না হয়, অচিরেই এ ধরনের সমস্যা দেখা দিলে আমরা সেটা সমাধান করে দেব।’

বাংলাদেশে ভৌগোলিক অবস্থানগত সুবিধার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ এমন একটা জায়গায় অবস্থান করছে যেখানে প্রাচ্য-পাশ্চাত্যের সেতুবন্ধন রচনা করতে পারে। সব থেকে বড় কথা হলো দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া সব থেকে ঘনবসতি পূর্ণ জায়গা।

‘আমরা নিজেদের দেশে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছি। তাদের কর্মসংস্থান বাড়াচ্ছি, তাদের পারচেজিং পাওয়ার বাড়ছে। তার ফলে আমাদের নিজস্ব একটা মার্কেট যেমন তৈরি হচ্ছে, পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ায় আমরা আঞ্চলিক সহযোগিতা ও যোগাযোগের ব্যবস্থা নিয়েছি। যার ফলে দক্ষিণ এশিয়ার যে দেশগুলো সেখানে একটা বড় বাজার রয়েছে।

‘এর পাশাপাশি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, তাদের সঙ্গেও আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি করে দিচ্ছি। তাদের সঙ্গে আমাদের একটা চমৎকার সম্পর্ক রয়েছে। সেই অঞ্চলটায় যে বিশাল জনগোষ্ঠী এরাও কিন্তু একটা বিরাট মার্কেট। কাজেই বাংলাদেশে বিনিয়োগ করলে পরে আমাদের সমুদ্রপথ, আকাশপথ, রেলপথ সবগুলো ব্যবহার করে এই দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এবং সেই সঙ্গে আমাদের পশ্চিমা দেশগুলোতেও যোগাযোগের বিরাট সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং পণ্য পরিবহনের সুযোগ সৃষ্টি হবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিনিয়োগের জন্য সব থেকে উত্তম জায়গাটা হচ্ছে বাংলাদেশ। তাই আমি আশা করি বিভিন্ন দেশ থেকে আমাদের দেশে বিনিয়োগ আসবে। আমাদের দেশের মানুষ নিজ দেশে বিনেয়াগ করতে আরও আগ্রহী হবে। সেটাই আমরা চাই।’

বাংলাদেশে বিনিয়োগে আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ তিনশ কোটিরও বেশি মানুষের বাজার হতে পারে। বাংলাদেশে প্রায় ১৭ কোটি মানুষ আমাদের নিজেদেরই। আর পূর্ব দিকে ৫০ কোটি, উত্তর দিকে ১৫০ কোটি, পশ্চিমে ১০০ কোটি মানুষের বাজার বিদ্যমান।’

অর্থনৈতিক অঞ্চলে কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার, পানি শোধনাগারসহ নানা ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিটি প্রকল্প যারা করবেন বা ইন্ডাস্ট্রি করবেন তাদের নিজস্ব বর্জ্য শোধনাগারও থাকতে হবে। তা নইলে আপনাদের পণ্যটা বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব হবে না। সে ব্যবস্থাটাও রাখা আছে, কোনো বাধা নেই। একদিকে পরিবেশ রক্ষা, অপরদিকে ভূমি রক্ষা করে আমাদের দেশের মানুষের সার্বিক উন্নয়নে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’

দেশে পরিকল্পিত শিল্পায়নের লক্ষ্যে ২০১০ সালে অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ গঠন করা হয় জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি করার জন্য সমগ্র বাংলাদেশে সর্বপ্রথম হচ্ছে জমিগুলো সুনির্দিষ্ট করা। যে জমিতে খুব বেশি ফসল হয় না, সে ধরনের জমি আমরা বেছে নিয়েছি। দেশের ৬৪ জেলায় ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিই। ইতোমধ্যে প্রায় ৯৭টি জায়গা সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে। ২৬টির নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। ১০টি সেখানে সম্পূর্ণ কার্যক্রম শুরু করেছে।’

পরিবেশবান্ধব শিল্পায়নের জন্য সব ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা অঞ্চলভিত্তিক শিল্পায়ন যদি করি বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের কর্মসংস্থান বাড়বে। আমাদের দেশে অঞ্চলভিত্তিক বিভিন্ন ‍উৎপাদনও হয়। যে অঞ্চলে যা উৎপাদন হবে, সেগুলো আমরা প্রক্রিয়াজাত করতে পারব। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আসবে। আমরা ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল করেছি। আমাদের প্রজন্মের পর প্রজন্ম যখনই বড় হতে থাকবে, আমাদের যুব সমাজ বা তরুণ সমাজ তারা নিজেদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে পারবে।’

অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে নারীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আলোচনা করে একেকটা দেশের জন্য একেকটা অঞ্চল সম্পূর্ণ তাদের হাতে দিয়ে দেয়া, সেই ব্যবস্থাটাও আমরা রেখেছি। অর্থাৎ জিটুজি (সরকার থেকে সরকার) আলোচনার মাধ্যমে আমরা অর্থনৈতিক অঞ্চলে যাতে বিনিয়োগ হয়, সেই ব্যবস্থা নিয়েছি।’

এক হাজার একর জমির ওপর নির্মিত নারায়ণগঞ্জের এই অর্থনৈতিক অঞ্চলটি জাপান সরকারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে তাদের দেয়া হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। মেট্রোরেল, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল, কক্সবাজারের মহেশখালীতে গভীর সমুদ্র বন্দর ও বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে বাংলাদেশকে জাপান সহযোগিতা করে যাচ্ছে বলেও তিনি জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এভাবে আমাদের অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ কাজ জাপান করে দিচ্ছে। এটা আমি বলব যে, আমাদের ৫০ বছরের যে বন্ধুত্ব তার নিদর্শন। জাপান সবসময় বাংলাদেশের জনগণের পাশে আছে। আমরাও সব সময় জাপানের সঙ্গে একটা চমৎকার সম্পর্ক রেখে যাচ্ছি। আমাদের এ বন্ধুত্ব অটুট।’

সব সময় বাংলাদেশের পাশে থাকার জন্য জাপানের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান প্রধানমন্ত্রী। গত তিন বছরে অনেক অবদান রাখায় ঢাকায় জাপানের বিদায়ী রাষ্ট্রদূতকে শুভকামনাও জানান তিনি।

অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ নিয়ে ভারত, চীন, সৌদি আরব ও সিঙ্গাপুরের সঙ্গেও আলোচনা হচ্ছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।তিনি বলেন, ‘আরও অনেকগুলো দেশ আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আমরা যারাই আসবে তাদের জন্য একটা অঞ্চল, যেভাবে তারা চায় তাদের দিয়ে দেব। যেভাবে তারা উন্নয়ন করতে চায়, সেভাবে করতে পারবে। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আমরা বিশেষ সুবিধা দিয়ে যাচ্ছি। সেই সুবিধাগুলো তারা ভোগ করতে পারবে।

‘তা ছাড়া আমাদের চট্টগ্রাম পোর্ট, মোংলা পোর্ট, পায়রা পোর্ট এবং মাতারবাড়িতে ডিপ সি পোর্ট হচ্ছে। কাজেই সেখানে আমরা রেলের যোগাযোগ উন্নত করছি। নদীগুলো ড্রেজিং করে নদীপথের উন্নয়ন করে দিচ্ছি। কারণ নদীপথে সবচেয়ে স্বল্প খরচে মালামাল পরিবহন করা যায়। সেই সুযোগ আমরা সৃষ্টি করে দিচ্ছি। রাস্তাঘাটের ব্যাপক উন্নয়ন আমরা করে দিয়েছি। বাংলাদেশের সব অঞ্চলের সঙ্গে একটা সংযোগ আমরা সৃষ্টি করতে পেরেছি।’

বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশে সবচেয়ে চমৎকার পরিবেশ রয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘বিনিয়োগকারীদের আমরা আহ্বান জানাচ্ছি। যারা বাংলাদেশে আসছেন তারাও এখানে বিনিয়োগ করতে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। এটা বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে আমি মনে করি।’

এ বিভাগের আরো খবর