চট্টগ্রামে বিশাল সমাবেশের তিন দিন পর সাগর-কন্যা কক্সবাজার সফর। প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানানোর পাশাপাশি দলটির সমর্থন প্রমাণের সুযোগ হিসেবে দেখছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ।
নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবিতে বিভাগীয় শহরগুলোতে বিএনপির সমাবেশের মধ্যে আওয়ামী লীগও তাদের শক্তি দেখানোর চেষ্টায়। শেখ হাসিনাকে সামনে রেখেই হচ্ছে তাদের জমায়েতগুলো।
গত ২৪ নভেম্বর যশোরের পর ৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রামে সমাবেশে নেতা-কর্মীদের উপচে পড়া ভিড়ের মধ্যে বুধবার কক্সবাজার শহরের শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের জনসভা ঘিরেও দলের ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে।
পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে সাড়ে তিন লাখ কোটি টাকায় ছোট-বড় যে ৭২টি প্রকল্প চলছে, তার মধ্যে কাজ শেষ হওয়া ২৩টির উদ্বোধন করতে সেদিন সকালে প্রধানমন্ত্রী যাবেন কক্সবাজার।
সেদিন কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের ইনানী সৈকতে তিন দিনের আন্তর্জাতিক নৌশক্তি প্রদর্শন মহড়াও উদ্বোধন করবেন তিনি। বাংলাদেশ নৌবাহিনী আয়োজিত এ মহড়ায় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন ও ভারতসহ ৩০টির বেশি দেশের অংশগ্রহণ করার কথা রয়েছে।
সেখান থেকে বেলা ২টার দিকে শেখ হাসিনা যাবেন আওয়ামী লীগের জনসভায়।
শেখ কামাল স্টেডিয়ামে সোমবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, ‘দেশ এগিয়ে যাচ্ছে এক অপ্রতিরোধ্য গতিতে। এই এগিয়ে যাওয়া বিএনপি-জামায়াতসহ স্বাধীনতাবিরোধীদের পছন্দ নয়। তাই তারা দেশের এগিয়ে যাওয়া এবং উন্নয়নের গতি ব্যাহত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে।
‘তারা আন্দোলনের নামে সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, অরাজগতা সৃষ্টি করে দেশের শান্ত পরিস্থিতি বিনষ্ট করার চেষ্টা চালাচ্ছে। তাদের উদ্দেশ্য যে কোনো উপায়ে ক্ষমতা দখল করে লুটপাট, দুর্নীতি, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাস করে হাওয়া ভবনের মতো আরেকটি ভবন সৃষ্টি করা। পাকিস্তানি ভাবধারায় অনুন্নত ও অস্থিতিশীল বাংলাদেশে রূপান্তর করা।’
সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক সিরাজুল মোস্তফা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী এখানে কোটি কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প দিয়েছে। যার সুফল পেতে শুরু করেছে জনগণ। তাই সবস্তরের মানুষ এ সমাবেশে আসবে। সমাবেশকে জনসমুদ্রে রূপ দিতে আমরা কাজ করছি।’
সাড়ে তিন লাখ কোটি টাকায় ৭২টি প্রকল্পের অন্যতম এ রেললাইন
সফরে প্রধানমন্ত্রীর কাছে কী দাবি
সংবাদ সম্মেলনে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মেয়র মুজিবুর রহমানের পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্যে জানানো হয়, সরকার প্রধানের কাছে কক্সবাজারে একটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, মেডিক্যাল কলেজকে ৫০০ শয্যায় উন্নীত, কক্সবাজার সদরের সঙ্গে মহেশখালীর সংযোগ সেতু এবং বাঁকখালী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ, কুতুবদিয়া-মগনামা ফেরি সার্ভিস চালু, পর্যটন গবেষণা ইনস্টিটিউট, চার লেনে মেরিন ড্রাইভ সড়ক, কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ৬ লেনে উন্নীতকরণ, পৌরসভাকে সিটি করপোরেশনে উন্নীত করা, কক্সবাজার সিটি কলেজকে সরকারি করা এবং উচ্ছেদ করা ঝিনুক ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নজরে আনবে ক্ষমতাসীন দল।
শুধু উন্নয়ন প্রকল্প নয়, নাগরিকদের দাবিও তুলে ধরতে হবে জানিয়ে কক্সবাজার নাগরিক আন্দোলনের মূখপাত্র এইচ এম নজরুল ইসলাম বলেন, ‘কক্সবাজারে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল চালু, রোহিঙ্গা সংকট সমাধান, ক্যাম্পের বাইরে থাকা রোহিঙ্গাদের তালিকা তৈরি, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও নির্মাণ বন্ধ, পর্যটন ও পরিবেশবান্ধব শহর রক্ষা বাঁধ, বাঁকখালী নদী দখলমুক্ত করা ও সৈকত দখলবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা, আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারসহ আন্তর্জাতিক পর্যটনকেন্দ্র করতে বিশেষ নীতির ঘোষণাসহ প্রধানমন্ত্রীর মুখে সুস্পষ্ট বক্তব্য আশা করছি।’
কী বলছে প্রশাসন
জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মামুনুর রশিদ বলেন, ‘কক্সবাজারকে একটি উন্নত ও পরিপূর্ণ পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ নজর রয়েছে। সম্প্রতি শেষ হওয়া আরও ২৩টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।’
কক্সবাজার গণপূর্ত বিভাগের প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহজাহান বলেন, ‘এ নগরীকে পরিকল্পিতভাবে সাজাতে গণপূর্ত বিভাগের চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের মধ্যে তিনটির কাজ শেষ হওয়ায় উদ্বোধনের তালিকায় রয়েছে। আমরা প্রকল্প তিনটির কাজ সুন্দর ও সফলভাবে শেষ করেছি।’
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী (এলজিইডি) আনিসুর রহমান বলেন, ‘১৩৫ দশমিক ৩৯ কোটি টাকা ব্যয়ে চলমান প্রকল্পের মধ্যে ১০টি শেষ হয়েছে। যার সুফলও পাচ্ছে স্থানীয়রা।’
সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহে আরেফীন বলেন, ‘৪৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে লিংক রোড-লাবনী মোড়, টেকনাফ-শাহপরীর দ্বীপ হাড়িয়াখালী হতে শাহপরীর দ্বীপ সড়ক এবং রামু-ফতেখাঁরকুল-মরিচ্যা সড়কের উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী।’