নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র সদস্যরা পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের আশ্রয়ে থেকে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। পাহাড়ে খাবার, বস্ত্র ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম সরবরাহকারী এবং আশ্রয়দাতা পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ ও রাজধানীর গুলিস্তান থেকে রোববার তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তাররা হলেন মো. গোলাম সারোয়ার, সাকিব মাহমুদ, মো. ফরহাদ হোসেন, মো. মুরাদ হোসেন ও মো. ওয়াসিকুর রহমান।
এ সময় তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন লিফলেট, একটি রেজিস্টার এবং একটি ব্যাগ উদ্ধার করা হয়েছে।
সোমবার দুপুরে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে বাহিনীটির মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘জঙ্গিদের রসদ সরবরাহকারী, আশ্রয়দাতাসহ পাঁচ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের এক সদস্য কয়েকজনকে নিয়ে গাইবান্ধার এক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যকে হত্যা করার পরিকল্পনা করেছিল। সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের আগে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।’
গোলাম সারোয়ারর্যাব জানায়, গ্রেপ্তার গোলাম সারোয়ার স্থানীয় একটি মাদ্রাসা থেকে ফাজিল সম্পন্ন করেন। তিনি লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে একটি মিষ্টির দোকানে চাকরি করতেন। তিনি এর আগে গ্রেপ্তার হওয়া নেয়ামত উল্লাহর জামাতা। শ্বশুরের মাধ্যমে দুই বছর আগে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার আদর্শে অনুপ্রাণিত হন। ‘হিজরতের’ উদ্দেশ্যে বের হওয়া তরুণদের কুমিল্লার বিভিন্ন জায়গায় নিরাপদে রাখা ও পার্বত্য অঞ্চলে প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানোর কার্যক্রমের সঙ্গে তিনি জড়িত। বিভিন্ন সেইফ হাউজে অবস্থান করা
হিজরতকারীদের শারীরিক ও তাত্ত্বিক বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিতেন সারোয়ার। সংগঠনের দাওয়াতি কার্যক্রমের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন তিনি।
র্যাব জানায়, কুমিল্লা থেকে নিখোঁজ তিন তরুণের খোঁজে বের হয়ে কুমিল্লার দৌলতগঞ্জ রেলষ্টেশনের নিকটবর্তী সিসিটিভি ফুটেজে সারোয়ারকে নিখোঁজদের কুমিল্লার দিকে নিয়ে যেতে দেখা যায়।
সাকিব মাহমুদসাকিব মাহমুদ গাইবান্ধা থেকে মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। তিনি একটি টেলিকম প্রতিষ্ঠানে মার্কেটিংয়ের কাজ করতেন। তিনি জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার শুরা সদস্য, উপদেষ্টা ও প্রশিক্ষণের তত্ত্বাবধায়ক শামীম মাহফুজের ভাতিজা। তিনি তিন বছর আগে শামীম মাহফুজের মাধ্যমে সংগঠনে যোগ দেন। তিনি গাইবান্ধা অঞ্চলে সংগঠনের দাওয়াতি কাজের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
সাকিব সংগঠনের একজন সশস্ত্র প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সদস্য। গাইবান্ধায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একজন সদস্য ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে কটূক্তি করায় সংগঠনের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশনায় তাকে হত্যার পরিকল্পনা করতে থাকেন সাকিব। হত্যার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য আরও ৩-৪ জন সদস্যকে একত্রিত করেন তিনি। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের আগেই সাকিব গ্রেপ্তার হন। তার বিরুদ্ধে ২০২০ সালে গাইবান্ধা সদর থানায় হত্যাচেষ্টা মামলা রয়েছে।
ফরহাদ হোসেন ও মুরাদ হোসেন
ফরহাদ হোসেন ও মুরাদ হোসেন ভাই। ফরহাদ স্থানীয় কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন এবং মুরাদ মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। তারা জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার সূরা সদস্য এবং অর্থ ও গণমাধ্যম শাখার প্রধান মোশারফ হোসেন রাকিবের শ্যালক। তিন বছর আগে মোশারফ হোসেনের মাধ্যমে তারা সংগঠনের সঙ্গে জড়ান। তারা রাজধানীর গুলিস্তান এলাকায় সংগঠনের অর্থ দিয়ে ‘ট্রাস্ট টেলিকম’ নামে একটি মোবাইল এক্সোসরিজের দোকান পরিচালনা করতেন এবং দোকানের লভ্যাংশ সংগঠনের প্রশিক্ষণসহ অন্যান্য সাংগঠনিক কার্যক্রমে ব্যয় করতেন।
এ ছাড়াও মুন্সীগঞ্জে তারা একটি গরু-ছাগলের খামার পরিচালনা করত। সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা বিভিন্ন সময়ে তাদের খামারে গিয়ে মিটিং করত বলে জানা গেছে।
এ ছাড়া তারা পার্বত্য অঞ্চলে প্রশিক্ষণের জন্য প্রথম পর্যায়ে ১২ জন সদস্যকে পাঠানোর সময়ে এই খামারে সবাইকে একত্রিত করে বলে তারা র্যাবকে জানিয়েছে। পার্বত্য অঞ্চলে প্রশিক্ষণ পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য, বস্ত্র, নিত্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য দ্রব্যাদি এবং বোমা তৈরির সামগ্রী ফরহাদ ও মুরাদ সংগ্রহ করতেন। পরে রাজধানীর মগবাজার থেকে গ্রেপ্তার ওয়াসিকুর রহমান নাঈমের কাছে পৌঁছে দিতেন।
ওয়াসিকুর রহমান
ওয়াসিকুর রহমান রাজধানীর একটি মাদ্রাসা থেকে হিফজ সম্পন্ন করেন। দুই বছর আগে তিনি সংগঠনের আদর্শে অনুপ্রাণিত হন। রাজধানীর মগবাজার এলাকায় সংগঠনের অর্থ দিয়ে একটি আতরের দোকান পরিচালনা করতেন। তিনি সংগঠনের দাওয়াতি কার্যক্রম ও পার্বত্য অঞ্চলে প্রশিক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
র্যাব জানায়, ফরহাদ ও মুরাদ পার্বত্য অঞ্চলে প্রশিক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী ও বোমা তৈরির বিভিন্ন উপকরণ সংগ্রহ করে নাঈমের আতরের দোকানে পৌঁছে দিতেন। পরে তিনি বিভিন্ন মাধ্যমে তা পার্বত্য অঞ্চলে পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করতেন।