কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নে স্থাপন করা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি নদী ভাঙনের কারণে পাশের ইউনিয়নে নিয়ে যান কয়েকজন শিক্ষক। বারবার অনুরোধ করলেও স্কুলটি আগের ইউনিয়নে ফিরিয়ে আনা হয়নি। সেই ইউনিয়নে কয়েকটি প্রাথমিক স্কুল থাকলেও ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তির কোনো সুযোগ নেই।
নদী ভাঙনের কারণে কুড়িগ্রামে একটি ইউনিয়নে পাঁচ বছর ধরে শিশুদের শিক্ষা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়েছে। ২০১৭ সালে রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের একমাত্র স্কুলের জায়গাটি নদীগর্ভে চলে যায়।
এরপর সেটিকে স্থানান্তর করা হয় পাশের একটি ইউনিয়নে। কিন্তু সেখানে কয়েকটি স্কুল রয়েছে। বিন্দানন্দে এখন নেই একটিও।
নতুন জায়গায় গিয়ে স্কুলটিরও কোনো লাভ হয়েছে এমন নয়, সেখানে ছাত্র সংখ্যা ১১৬ জন জানানো হলেও বার্ষিক পরীক্ষায় গিয়ে দেখা যায় পরীক্ষা দিচ্ছে কেবল ১৬ জন। এদিকে বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের শত শত শিশু স্কুল পাচ্ছে না।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির নাম বিদ্যানন্দ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়। এখানে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ানো হয়। স্কুলটি স্থাপন হয় ১৯৯১ সালে, ওই বছরেই হয় এমপিওভুক্তি।
২০১৭ সালে স্কুলটি নদী ভাঙনের শিকার হলে সেটি ওই ইউনিয়নের তৈয়ব খাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে স্থানান্তর করা হয়। পরে নতুন জায়গা না পাওয়ায় প্রধান শিক্ষক লোকনাথ বর্মনসহ কয়েকজন স্কুলটিকে পাশের নাজিম খাঁ ইউনিয়নের তালতলা রঞ্জিতসর গ্রামে স্থানান্তর করেন।
তখন থেকে বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের চরসহ আাশেপাশের নিম্ন মাধ্যমিক পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়।
বর্তমানে যেখানে স্কুলটি আছে, তার তিন কিলোমিটারের মধ্যে কালিরহাট উচ্চ বিদ্যালয়, ডাংরারহাট উচ্চ বিদ্যালয়, নাজিম খাঁ উচ্চ বিদ্যালয় এবং বাছড়া আজিজিয়া আলিম মাদ্রাসা নামে চারটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে। ফলে বিদ্যানন্দ ছাত্রও পাচ্ছে না।
বিদ্যানন্দ ইউনিয়নে আছে বেশ কিছু প্রাথমিক স্কুল। এগুলো হলো বিদ্যানন্দ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পশ্চিম চর বিদ্যানন্দ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চর তৈয়ব খাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রতিদেব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চর রতিদেব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
চর তৈয়ব খাঁ ও হয়বত খাঁতে এনজিও পরিচালিত আরও দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। সেখান থেকে পাস করে শিশুরা পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হিমশিম খাচ্ছে। কারণ, এসব স্কুলের ৬ থেকে ৭ কিলোমিটারের মধ্যেও কোনো নিম্ন বা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় নেই।
তৈয়ব খাঁ গ্রামের বাসিন্দা আজাহার আলী বলেন, ‘হামার চরের এলাকায় কোনো স্কুল না থাকায় প্রাইমারি পাস করে মেয়েদের বাল্য বিয়ে দেয় অভিভাবকরা। আর ছেলেরা চরের মধ্যে কামলা দেয়, ঢাকা যায়। এই এলাকার সন্তানদের শিক্ষার জন্য স্কুলটি আমাদের এখানে পুনরায় আনা হোক।’
শ্রীমতি কমলা রাণী বলেন, ‘বর্তমান হামার ইউনিয়নের স্কুলটি অন্য ইউনিয়নে থাকায় শিক্ষার্থীর চেয়ে শিক্ষকের সুযোগ সুবিধা হইছে। তারা বসে বসে সরকারের বেতন ভাতা তুলছে। অথচ আমাদের এখানে স্কুল না থাকায় বাচ্চাদের পাশের স্কুলগুলোতে ভর্তি করানো হচ্ছে। আমাদের চর ও গ্রামের সন্তানদের পড়ালেখা নিশ্চিত করতে সরকার দ্রুত স্কুলটি ফিরিয়ে দিক।’
বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তাইজুল ইসলাম জানান, তার ইউনিয়নের চর বিদ্যানন্দ এলাকায় ৯৯ শতক জামিতে স্কুলটি স্থাপন করা হয়। ২০১৭ সালে ভাঙনের কারণে জায়গা নির্ধারণ করার আগেই কয়েকজন সেটি নাজিম খাঁ ইউনিয়নে স্থানান্তর করেন।
তিনি জানান, তারা অনেক চেষ্টা তদবির করেও স্কুলটিকে তাদের ইউনিয়নে ফেরাতে পারেননি।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লোকনাথ বর্মন ফোনে বলেন, ‘আপনাদেরকে তথ্য দেয়া হবে না।’ এটুকু বলেই লাইন কেটে দেন তিনি।
এই বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূরে তাসনিম জানান, বিদ্যানন্দ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি বিদ্যানন্দ ইউনিয়নে নিয়ে যাবার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছি।
ছাত্রসংখ্যা বাড়িয়ে বলে স্কুল কর্তৃপক্ষ
বৃহস্পতিবার সকালে বিদ্যানন্দ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, কয়েকজন শিক্ষক রোদ পোহাচ্ছেন আর সপ্তম শ্রেণিতে ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রে পাঁচ জন ছেলে ও দুই জন মেয়ে এবং অষ্টম শ্রেণিতে শারীরিক শিক্ষা বিষয়ে ছয় জন ছেলে এবং তিন জন মেয়ে পরীক্ষা দিচ্ছে। ছষ্ঠ শ্রেণিতে কোনো পরীক্ষার্থীই নেই।
অথচ বিদ্যালয়ের হাজিরা খাতা অনুযায়ী ষষ্ঠ শ্রেণিতে ৩২ জন, সপ্তম শ্রেণিতে ৪০ জন এবং অষ্টম শ্রেণিতেও ৪০জন শিক্ষার্থী রয়েছে।
তবে অষ্টম শ্রেণির ছাত্র মো. নাঈম বলে, ‘আমাদের শ্রেণিতে ১৫ জন ছিল। এর মধ্যে ঢাকায় কাজ করতে গিয়ে তিন জন মারা গেছে। দুই জন ঢাকায় কাজ করছে এবং একজন বাড়িতে আছে। আর আমরা পরীক্ষা দিচ্ছি নয় জনে।’
আরেক ছাত্র বলেন, ‘করোনার পর কেউ ঢাকা গেছে, কেউ বাড়িতে আছে আবার অনেকেই অন্য স্কুলে ভর্তি হওয়ায় এখানে শিক্ষার্থী কম।’
এই বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আশরাফ-উজ-জামান সরকার বলেন, ‘আমি পরিদর্শনে গিয়ে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ২০ থেকে ২২ জন শিক্ষার্থী পেয়েছি। এই বিষয়ে অনেক লেখালেখি হয়েছে। কিন্তু রাজনৈতিক কারণে সমস্যার সমাধান হয়নি।’