সিডলেস লেবু, ভিয়েতনামি মাল্টা, বারোমাসি আম, পেঁপে, আঙুর, পেয়ারা, ড্রাগন, কুলসহ শতাধিক প্রজাতির ফলের বাগান করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার শিয়ালকাঠি গ্রামের বাসিন্দা কৃষি উদ্যোক্তা শাওন সরদার। সব খরচ মিটিয়ে এখান থেকেই বছরে আয় করছেন ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার ধোপাখালী ইউনিয়নের শিয়ালকাঠি গ্রামের প্রায় সাত একর জমিতে শাওন সরদার গড়ে তুলেছেন মিশ্র ফলের বাগান।
২০১৩ সালে প্রথমে শখের বসে বাগান করা শুরু করলেও এখন তিনি বাণিজ্যিকভাবে গড়ে তুলেছেন বাগান। বাগানের একটি অংশে রয়েছে চায়না-থ্রি সিডলেস জাতের লেবু। প্রতিটি গাছে লেবু ঝুলছে থোকায় থোকায়। অনেক গাছ নুয়ে পড়েছে লেবুর ভারে।
বাগানের একটি অংশে চায়না-থ্রি সিডলেস জাতের লেবুগাছ রয়েছে ৫ শতাধিক। বাজারে স্বাদ ও ঘ্রাণে অতুলনীয় এ লেবুর চাহিদাও রয়েছে অনেক। শুধু লেবু নয়, এ বাগানে রয়েছে বারোমাসি আম, ভিয়েতনামি মাল্টা, থাই পেয়ারা, ড্রাগন, আঙুর, কমলা, বেল, সরিফা আতা, চেরি, পেঁপে, কুলসহ শতাধিক প্রজাতির ফলের গাছ।
উদ্যোক্তা শাওন সরদার বলেন, ‘২০১৩ সালে শখ থেকেই ফলের বাগান শুরু করি। পরে কৃষি অফিস থেকে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ নিয়ে গাছের পরিচর্যা করতে থাকি। একটা সময় আমার প্রায় প্রতিটি গাছে ফল আসতে শুরু করে। শুরু করি ফল বিক্রি। পরে স্থানীয় বাজারে চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় গাছের প্রজাতি ও জায়গার পরিমাণ বাড়াতে থাকি।
‘এখন আমার জমির পরিমাণ সাত একর। আগামী দিনে জমির পরিমাণ আরও বাড়ানোর ইচ্ছা আছে। আমার বাগানে নিয়মিত কাজ করছেন পাঁচজন শ্রমিক। এখন আমার বাগানে শত প্রজাতির গাছ রয়েছে। এই সংখ্যা আগামী দিনে আরও বাড়বে। বর্তমানে অ্যাভোকাডো, রাম্বুটান, পার্সিমনসহ বেশ কিছু বিদেশি ফলের গাছ পরীক্ষামূলক চাষের পর্যায়ে রয়েছে। ফলাফল ভালো পেলে এসব বিদেশি গাছও বাণিজ্যিকভাবে চাষ করব।’
শাওনের বাগান পরিচর্যার কাজে নিয়োজিত সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমি প্রায় তিন বছর ধরে এ বাগানে কাজ করছি। এখানে গাছে পানি, সার ও কীটনাশক স্প্রে করাসহ প্রায় সব কাজ আমিসহ আমরা পাঁচজন করে থাকি। এ ছাড়া নতুন চারা তৈরির জন্য মাটি প্রস্তুত ও বাগান থেকে ফল সংগ্রহ করে ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি পর্যন্ত যাবতীয় কাজ আমরাই করে থাকি। বর্তমানে আমাদের বাগান থেকে খুলনা, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলার ফল ব্যবসায়ীরা ফল পাইকারি হিসাবে কেনেন।’
অপর শ্রমিক মতি মাঝি বলেন, ‘আমরা রাসায়নিক সারের পরিবর্তে জৈব সার ব্যবহার করি। ফলনও ভালো হচ্ছে। এ বাগানের ইনকাম দিয়ে আমার সংসার চলে।’
শাওন সরদারের প্রতিবেশী কামরুল হাসান বলেন, ‘শাওন একজন শিক্ষিত ছেলে। পড়ালেখা শিখে সে যখন ফল বাগান তৈরি করছিল, তখন আমরা তাকে পাগল বলেছিলাম। কিন্তু বছর ঘুরতে দেখি শাওনের প্রতিটি গাছে ফল ধরেছে। যখন সে ফল বিক্রি শুরু করে, তখন আমি তার দেখাদেখি ফল বাগান শুরু করি। এখন আমি প্রায় দুই একর জমিতে ড্রাগন চাষ করছি। এ বছর আমি ড্রাগন ফল বিক্রি করেছি প্রায় ২ লাখ টাকার।’
একই এলাকার আলমগীর হোসেন বলেন, ‘শাওন আমাদের গৌরব। সে আমাদের অনুপ্রেরণা। একটা সময় ছিল আমাদের এলাকায় ধান ও কিছু সবজি ছাড়া কিছুই হতো না। এখন আমরা শাওনের দেখাদেখি গ্রামের প্রায় প্রতিটি কৃষক ড্রাগান, কুল, কমলা, পেঁপেসহ নানা ধরনের ফল চাষ করছি। লাভবানও হচ্ছি।’
বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আজিজুল রহমান বলেন, ‘শাওন সরদার আমাদের কৃষি অফিস থেকে মিশ্র ফল বাগান তৈরির বিষয়ে নিয়মিত প্রশিক্ষণ পেয়েছেন। আমরা তাকে ফল গাছ ও বিভিন্ন সময় নানা উপকরণ দিয়ে সহায়তা ও উৎসাহ প্রদান করেছি। এ ছাড়া তিনি নিজেও বিভিন্ন বিদেশি ফল চাষ করেছেন, যেগুলো পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে। তার দেখাদেখি ওই গ্রামের অন্যান্য কৃষকও মিশ্র ফল বাগান করতে আগ্রহী হচ্ছে। তাদেরও কৃষি বিভাগ প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে সহায়তা করবে।’