ঐতিহাসিক বাহাদুর শাহ পার্কের ভেতরে স্থাপনা নির্মাণ এবং গ্যাসের আগুন জ্বালিয়ে রেস্তোরাঁ চালুর বিরোধীতা করে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে পার্কের ঐতিহ্য সংরক্ষণ সংগ্রাম পরিষদ। তাদের দাবি, এসবের ফলে গাছ ও প্রাকৃতিক পরিবেশ ধ্বংস হচ্ছে; ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পার্কে চলাফেরার পরিবেশ।
পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্লো শহীদ বেদিতে রোববার বিকেল ৪টা ৩০ মিনিটে এ কর্মসূচী অনুষ্ঠিত হয়।
১৮৫৭ সালে ভারতবর্ষের ব্রিটিশবিরোধী প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধের শহীদদের স্মৃতি বিজড়িত এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি কবি নজরুল কলেজ, সোহরাওয়ার্দি কলেজসহ বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ পুরান ঢাকার বাসিন্দাদের অবসর, বিনোদন, প্রাতঃভ্রমণ, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের একমাত্র স্থান এই বাহাদুর শাহ পার্ক।
প্রতিবাদ কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন পার্কের ঐতিহ্য সংরক্ষণ সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. মো.আব্দুল মান্নান। সমাবেশটি পরিচালনা করেন সংগঠনের সদস্য সচিব আক্তারুজ্জামান খান।
বক্তব্য রাখেন বাহাদুর শাহ্ পার্ক সান্ধ্য ভ্রমণকারী সমিতির উপদেষ্টা এ কে রিয়াজউদ্দীন, মো. কামাল হোসেন, বাহাদুর শাহ পার্ক ও পার্কের ঐতিহ্য সংরক্ষণ সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আব্দুল সাত্তার, আনোয়ার হোসেন, মো. মীরুজ্জামান খান মীর, সদস্য মো. শাহ্ আলম ভূঁইয়া, বাহাদুর শাহ্ পাক প্রাতঃ ভ্রমণকারী সংঘের সদস্য কাজী খসরু, সাংগঠনিক সম্পাদক হাবিবুর রহমান, সদস্য অ্যাডভোকেট ইলিয়াছ এবং মহিলা সম্পাদিকা সামছুন নাহার।
এ ছাড়া সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন মিডিয়া ব্যক্তিত্ব শাহাজানুর রহমান সাজু, শিল্পী ঢালী মোহাম্মদ দেলোয়ার, জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট ঢাকা মহানগর কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী প্রকাশ দত্ত, দপ্তর সম্পাদক আতিকুল ইসলাম এবং ছাত্র প্রতিনিধি সোয়েবুর রহমান।
সমাবেশে বক্তাদের ভাষ্য, ‘জনস্বার্থ বিরোধী এ সিদ্ধান্ত বাতিল করার জন্য তারা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়রের প্রতি অনুরোধ করেছে। স্থানীয় কাউন্সিলরদের মাধ্যমে মেয়র, ঢাকা জেলা প্রশাসক, ঢাকা-৬ আসনের সংসদ সদস্য এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান সম্পদ কর্মকর্তার কাছে গণস্বাক্ষরের অনুলিপিসহ স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে।
‘এরই ধারাবাহিকতায় ১০ নভেম্বর সংগ্রাম পরিষদ ও জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট ঢাকা মহানগরের ১৬ প্রতিনিধি মেয়রের আমন্ত্রণে তার সঙ্গে দেখা করেন।’
বক্তারা জানান, প্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে পার্কের ভেতর রেস্তোরাঁ নির্মাণের কাজ বন্ধ, ‘১৮৫৭ সালের শহীদদের স্মরণে’ লেখাটি পুনঃস্থাপন এবং পার্কের নিরাপত্তার খাতিরে পার্কের সীমানা বেষ্টনী দেয়ার দাবি জানানো হয়েছে। মেয়র ন্যায়সঙ্গত দাবিগুলোর যৌক্তিকতা স্বীকার করে সেগুলো বাস্তবায়নে জরুরি পদক্ষেপ নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
ঐতিহাসিক বাহাদুর শাহ পার্ক ও পার্কের ঐতিহ্য সংরক্ষণ সংগ্রাম পরিষদের সদস্য সচিব আক্তারুজ্জামান খান বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে ইজারাপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান স্বাধীনতা সংগ্রামের শহীদ বেদীর মর্যাদা বিনষ্ট করে স্মৃতিস্তম্ভের সামনেই চুলা জানিয়ে খাদ্যদ্রব্য তৈরি করে তা বিক্রি শুরু করেছে। এতে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে, পার্কের গাছের পাতা শুকিয়ে যাচ্ছে।’
সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল পুরান ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৪২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. সেলিমের মাধ্যমে মেয়র বরাবর স্মারকলিপি দেয়।