বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘খেলা হবে’র সমালোচনায় রাজনীতিবিদরা

  •    
  • ৪ ডিসেম্বর, ২০২২ ২১:৪৭

২০১৩-১৪ মৌসুমে নারায়ণগঞ্জে শামীম ওসমান একটি রাজনৈতিক সভায় বলেছিলেন, ‘কারে খেলা শেখান? আমরা তো ছোটবেলার খেলোয়াড়। খেলা হবে!’ এরপর থেকে ‘খেলা হবে’ কথাটি বাংলাদেশের সীমান্ত অতিক্রম করে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে। তবে দেশের রাজনীতিবিদরা এটিকে একটি অগ্রহণযোগ্য স্লোগান বলে মনে করেন।

রাজনৈতিক অঙ্গনে সাম্প্রতিক সময়ে বহুল ব্যবহৃত ‘খেলা হবে’ স্লোগানের সমালোচনা করেছেন দেশের দুই প্রবীণ রাজনীতিবিদ। শাসক দল আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ গত শনিবার যুবলীগের একটি অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘খেলা হবে’ কোনো ধরনের রাজনৈতিক স্লোগান হতে পারে না।

এর ধারাবাহিকতায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম রাজধানীতে একটি সংবাদ সম্মেলনে তোফায়েল আহমেদের বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি করেছেন।

কীভাবে এ কথাটা বাংলাদেশের রাজনীতিতে চালু হলো? খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে আগে থেকেই এটি বহুল ব্যবহৃত হলেও এ স্লোগানের উৎপত্তি বাংলাদেশেই। নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগদলীয় সংসদ সদস্য শামীম ওসমান প্রথম এটি ব্যবহার করেন।

জার্মানির বাংলা সংবাদ মাধ্যম ডয়চে ভেলেকে ২০২১ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি দেয়া এক সাক্ষাৎকারে শামীম ওসমান এটির উৎপত্তি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, ‘তখন বাংলাদেশে ২০১৩-১৪ সন চলছে। স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি ও বিএনপির নেতৃত্বে ব্যাপক জ্বালাও পোড়াও চলছিল। আমাদের এই স্লোগান ছিল তাদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম হিসেবে, শান্তির পক্ষে, গণতন্ত্রের পক্ষে ও সকল প্রকার সাম্প্রদায়িকতার বিপক্ষে।’

উল্লেখ্য, ২০১৩-১৪ মৌসুমে নারায়ণগঞ্জে শামীম ওসমান একটি রাজনৈতিক সভায় বলেছিলেন, ‘কারে খেলা শেখান? আমরা তো ছোটবেলার খেলোয়াড়। খেলা হবে!’

এরপর এই স্লোগান এ দেশে চর্চা না হলেও ভারতের রাজনৈতিক কর্মসূচিগেুলোয় এটি শুনতে পাওয়া যায়। পশ্চিমবঙ্গে প্রথম এই স্লোগান কে দিয়েছেন, তা নিশ্চিত করে বলা না গেলেও তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডল একদিন এই শ্লোগান দিলে সেটি ব্যাপকভাবে মানুষের মুখে মুখে ঘুরতে থাকে। তিনি এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘গোটা পশ্চিমবঙ্গে খেলা হবে। ভয়ংকর খেলা হবে।’

এর ধারাবাহিকতায় বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী, দিলীপ ঘোষ, তৃণমূল মুখপাত্র দেবাংশু ভট্টাচার্য, ধীমান রায়সহ অনেকের মুখেই মিছিল-সমাবেশে এ রকম শ্লোগান শোনা যায়। পরবর্তীতে এটি পশ্চিমবঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের মুখে পুনঃপুনঃ ব্যবহার হতে দেখা যায়। ২০২১ সালের নির্বাচনের আগে পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলতে শোনা গিয়েছিল ‘কী ভাই-বোনেরা আমার, খেলা হবে তো?’

পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে এটি বিপুল জনপ্রিয় স্লোগান। এমনকি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গত ১৬ আগস্ট রাজ্যজুড়ে ‘খেলা হবে দিবস’ও পালন করেন। বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও হিন্দি টোনে এ স্লোগান ব্যবহার করেন।

বাংলাদেশে এই শ্লোগান আলোচিত হয় গত দু’এক বছর ধরে। তবে এটির বহুল ব্যবহার দেখা যায় গত ছয় মাসের রাজনৈতিক কর্মসূচিগুলোতে। ১৬ জুলাই রাজধানীতে একটি দলীয় কর্মসূচিতে এ স্লোগানটি প্রথম ব্যবহার করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এরপর তা ছড়িয়ে পড়ে নেতাকর্মীদের মুখে মুখে।

বিএনপির সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানাও গত নভেম্বর মাসে কুমিল্লায় সমাবেশে এ স্লোগান দেন। আর এখন তা ছড়িয়ে গেছে রাজনীতির আনাচে-কানাচে।

স্লোগানটি সমালোচনা শুরু হলে ৯ নভেম্বর সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দেন ওবায়দুল কাদের। এই শব্দ দুটিকে রাজনৈতিক হাস্যরস উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এটা একটা পলিটিক্যাল হিউমার। ফুল বেচে যে বাচ্চাটি, সে আমার গাড়ি দেখেই বলে, “খেলা হবে।” এটা মানুষ অ্যাকসেপ্ট (গ্রহণ) করে ফেলেছে।’

ওবায়দু কাদের বলেন, ‘“খেলা হবে” কথাটা ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে সবচেয়ে জনপ্রিয় স্লোগান ছিল। “খেলা হবে” কথাটা মমতা ব্যানার্জি বলছেন। নরেন্দ্র মোদিও বক্তব্যের শুরুতে বলেছেন, “খেলা হবে”, একটু হিন্দি টোনে। কিন্তু সেখানে পুরো ইলেকশনটি ডমিনেট করেছে “খেলা হবে” কথাটি।’

শব্দ দুটি উইকিপিডিয়াতেও আছে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, 'উইকিপিডিয়ায় আপনারা একটু দেখুন, সেখানেও এই খেলা হবে আছে।’

তবে বর্ষিয়ান অনেক রাজনীতিবিদ এই স্লোগানকে সহজভাবে নেননি। আওয়ামী লীগের দু’জন সিনিনয়র নেতা নিউজবাংলাকে বলেন, রাজনীতি খেলা না। এমন স্লোগানে রাজনীতি হালকা হয়ে যায়।

এ বিভাগের আরো খবর