নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগে দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্ব ও অনৈক্য কাটিয়ে এবার ঐক্যবদ্ধ হয়ে সম্মেলনের প্রস্তুতি নিয়েছেন নেতা-কর্মীরা। জেলার শীর্ষ নেতারা বলছেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাকে যে পদে দায়িত্ব দেবেন, তার প্রতি আস্থাশীল হয়ে কাজ করবেন সবাই।
সোমবার সকালে নোয়াখালী শহর মাইজদীর শহীদ ভুলু স্টেডিয়াম মাঠে সম্মেলন উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। সেখানে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বিশেষ অতিথি হিসেবে থাকার কথা রয়েছে।
সম্মেলনকে কেন্দ্র করে নেতা-কর্মীদের মধ্যে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। শীর্ষ দুই পদে কারা আসছেন তা নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। এই সম্মেলনে লাখো নেতা-কর্মীর সমাগম হবে বলে আশা করছেন নেতারা।
জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন শান্তিপূর্ণ করতে জেলা কমিটির পাশাপাশি উপজেলা, পৌর, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটি ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। সম্মেলনের অতিথি ও পদপ্রত্যাশীদের ছবি দিয়ে তোরণ, ডিজিটাল ব্যানার ও ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে মাইজদীর প্রধান সড়ক।
সভাপতি পদে আলোচনায় আছেন জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক এ এইচ এম খায়রুল আনম চৌধুরী সেলিম এবং নোয়াখালী-৪ আসনের এমপি ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক একরামুল করিম চৌধুরী।
সাধারণ সম্পাদক পদে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট শিহাব উদ্দিন শাহীন এবং আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও নোয়াখালী পৌরসভার মেয়র শহিদ উল্যাহ খাঁন সোহেলের নাম শোনা যাচ্ছে।
মেয়র সোহেল বলেন, ‘সম্মেলনে আমাদের সার্বিক প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে আছে। জেলাজুড়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস বিরাজ করছে। সম্মেলনে ব্যাপক সমাগম হবে। আমি সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হয়েছি। তবে জননেত্রী শেখ হাসিনা ও আমাদের নেতা ওবায়দুল কাদের যে কমিটি উপহার দেবেন, সে কমিটির নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করব।’
এমপি একরামুল বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগের কর্মী। কাদের ভাই আমাকে তার ছোট ভাইয়ের মতো গ্রহণ করেছেন। আমি সম্মেলনে কোনো কিছু হওয়ার আশা করি বা করি না এর মধ্যে শব্দটা রাখব। আমার নেত্রী শেখ হাসিনা সম্মেলনে যাকেই যা বানাবে আমি সেটা মেনে নেব। আমাকে যদি সদস্যও করেন, আমি তা মেনে নিয়ে কাজ করব।
‘নোয়াখালী আওয়ামী লীগের আমরা সবাই এখন ঐক্যবদ্ধ। আমি মনে করি, আমাদের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ থাকবে না। আমরা জননেত্রী শেখ হাসিনা এবং নোয়াখালীতে কাদের ভাইয়ের হাত শক্তিশালী করার জন্য আমাদের ঐক্যের কোনো বিকল্প নাই।’
জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক খায়রুল আনম সেলিম বলেন, ‘আমি কোনো পদে প্রার্থিতা ঘোষণা করি নাই। যদি নেত্রী বলেন থাকতে হবে, তাহলে আছি, থাকব আর না হলে নাই। নেত্রী ও আমাদের নেতা ওবায়দুল কাদের যা ভালো মনে করেন, সেটাই আমরা মাথা পেতে নেব।’
দলীয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ২০ নভেম্বর নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সবশেষ সম্মেলন হয়। ওই সম্মেলনে খায়রুল আনম সেলিম সভাপতি ও একরামুল করিম চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করেন ওবায়দুল কাদের।
সেই কমিটি পূর্ণাঙ্গ না করে দুই বছরের মাথায় ২০২১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর খায়রুল আনমকে আহ্বায়ক এবং শিহাব উদ্দিন শাহীন ও শহিদ উল্যাহ খাঁন সোহেলকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে ৮৭ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়।
এরপর থেকে নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের বিরোধ প্রকাশ্য রূপ নেয়। একাধিকবার হামলা-সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। জেলা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা একরাম, সোহেল ও শাহীনের নেতৃত্বে তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েন।
২৩ নভেম্বর কবিরহাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে বিবাদ মিটিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার ঘোষণা দেন এমপি একরামুল।