বায়ুদূষণজনিত অসুস্থতা ও মৃত্যুতে বছরে দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৩.৯ থেকে ৪.৪ শতাংশ ক্ষতি হয়, এমনটি উঠে এসেছে বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে।
রোববার রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য দিয়েছেন বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ ও ভুটানবিষয়ক ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর ড্যান্ডান চেন। বিশ্ব সংস্থাটির ওয়েব সাইটে এমন তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
বিশ্বের আর্থিক খাতের মোড়ল সংস্থার এই প্রতিনিধি বলেন, ‘বায়ুদূষণ শিশু থেকে বয়স্ক সবার জীবনকেই ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। এ দূষণের কারণে এই দেশে ২০১৯ সালে প্রায় ৭৮ হাজার ১৪৫ থেকে ৮৮ হাজার ২২৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এতে জিডিপিতে ক্ষতি হয়েছে ৩.৯ থেকে ৪.৪ শতাংশ।’
প্রতিবেদনে বলা হয়, উচ্চমাত্রার বায়ুদূষণের সংস্পর্শে আসায় শ্বাসকষ্ট, কাশি, শ্বাসনালির সংক্রমণসহ বিষণ্নতা এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়ে গেছে।
পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু ও বয়স্ক, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ বা শ্বাসকষ্টে আক্রান্তরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, ‘দেশের টেকসই এবং সবুজ উন্নয়নের জন্য বায়ুদূষণ মোকাবেলা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্লেষণমূলক কাজ এবং নতুন বিনিয়োগের মাধ্যমে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে বায়ুদূষণ কমাতে সাহায্য করছে।’
দেশের ভেতরে বায়ুদূষণের মাত্রা ক্ষতিকর বস্তুকণার (পিএম-টু পয়েন্ট ফাইভ) ঘনত্ব ডব্লিউএইচওর সুপারিশকৃত মাত্রার চেয়ে অনেক ওপরে। দেশে সবচেয়ে বেশি দূষিত বিভাগ ঢাকা এবং সবচেয়ে কম দূষণ সিলেট বিভাগে।
২০১৮ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বিশ্বের দ্বিতীয় দূষিত শহর হিসেবে স্থান পায় ঢাকা। পশ্চিমাঞ্চলীয় খুলনা ও রাজশাহী বিভাগ পূর্বাঞ্চলীয় সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের চেয়ে বেশি দূষিত।
প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজধানীতে মেগা উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলছে এমন সব জায়গায় এবং যেখানে যানজট বেশি যেসব স্থানে বায়ুদূষণ সবচেয়ে ভয়াবহ। ডব্লিউএইচওর সুপারিশকৃত মাত্রার চেয়ে এসব স্থানে দূষণ ১৫০ শতাংশের বেশি।
এই মাত্রার দূষণযুক্ত স্থানে অবস্থান করলে তা মানব শরীরের জন্য প্রতিদিন অন্তত দুটি সিগারেট খাওয়ার সমান ক্ষতিসাধন করে।
গত ২১ মার্চ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রকাশিত সমীক্ষায় দেখানো হয়, বিশ্বের শীর্ষ দূষিত বায়ুর দেশ হিসেবে আবারও প্রথম অবস্থানে বাংলাদেশ। শহরগুলোর তালিকায় রাজধানী ঢাকা রয়েছে দ্বিতীয় অবস্থানে।
বিশ্বের ১১৭টি দেশের ৬ হাজার ৪৭৫টি শহরের বায়ুমানের তথ্য বিশ্লেষণ করে এমন সমীক্ষা প্রকাশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, কেবল ৩ শতাংশ শহর প্রত্যাশিত বায়ুমান বজায় রাখতে পারলেও সব দেশই সেই মান বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়েছে।