ধর্ষণের কথা গোপন রাখতেই ঢাকার কেরানীগঞ্জে বাকপ্রতিবন্ধী তরুণীকে পরিকল্পিতভাবে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
ওই তরুণীকে হত্যার মূল আসামি সুজন মিয়াকে গ্রেপ্তারের পর শনিবার ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান তার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।
পুলিশ সুপার জানান, মূলত ধর্ষণের কথা গোপন রাখতেই সুজন পরিকল্পিতভাবে এই হত্যার ঘটনা ঘটিয়েছেন। মামলার তদন্ত এখনও চলমান।
আসাদুজ্জামান জানান, বাকপ্রতিবন্ধী তরুণীর সঙ্গে সুজনের ৮ থেকে ১০ দিনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল বলে জিজ্ঞাসাবাদে দাবি করেছেন তিনি। ঘটনার দিন বিকেলে সুজন তরুণীকে ধর্ষণ করেন। বিয়ে না করে পালিয়ে গেলে সুজনের কথা সবাইকে জানিয়ে দেবেন বলে বাকপ্রতিবন্ধী তরুণী হুমকি দেন। এ অবস্থায় কাপড়চোপড় নিয়ে তরুণীকে রাতে একটি জায়গায় অপেক্ষা করতে বলেন সুজন।
পুলিশ সুপার জানান, এরই ধারাবাহিকতায় সুজন তরুণীকে রাতে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার চুনকুটিয়া সাবান ফ্যাক্টরি রাস্তার ব্রিজের পরে অন্ধকার জায়গায় নিয়ে যান। সেখানে নিয়ে তরুণীকে মারধর ও সিমেন্টের পাথর দিয়ে তার মাথায় আঘাত করেন।
তিনি জানান, তরুণীর ব্যাগের কাপড়চোপড় শরীরের ওপর রেখে দেশলাই দিয়ে আগুন ধরিয়ে দিয়ে সুজন পালিয়ে যান। পরে তরুণীকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে জেনে সুজন মোবাইল ফোন বন্ধ করে ওই রাতেই শরীয়তপুর গোসাইরহাটের কোদালপুরে তার গ্রামের বাড়িতে পালিয়ে যান। পরে সেখান থেকে সুজন পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় তার শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে অবস্থান করেন।
পুলিশের এই কর্মকর্তা জানান, বাকপ্রতিবন্ধী তরুণীর শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক থাকায় পুলিশ কর্তব্যরত চিকিৎসক ও একজন সাইন ল্যাংগুয়েজ এক্সপার্টের সহায়তায় তার মৃত্যুকালীন জবানবন্দি গ্রহণ করে। এরপর তদন্ত টিম ঘটনাস্থলের বিভিন্ন আলামত ও সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ করে আসামিকে শনাক্ত করে।
শুক্রবার ভোরে পটুয়াখালীর কলাপাড়া থানার তেগাছিয়া বাজার থেকে গ্রেপ্তার করা হয় সুজনকে।
তরুণীর ভাই ও মামলার বাদী বলেন, ‘আমার বোন বাকপ্রতিবন্ধী ছিল। তাকে ফুসলিয়ে নিয়ে এসে ধর্ষণ করার পর আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে। আমরা খুনির ফাঁসি চাই।’
গত ২৮ নভেম্বর রাত সাড়ে ১০টার দিকে ৯৯৯-এর মাধ্যমে পুলিশ খবর পায় কেরানীগঞ্জের সাবান ফ্যাক্টরি রোডের পাশে এক নারীর শরীরে কে বা কারা আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।
পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে প্রথমে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজে (মিটফোর্ড) ও পরে শেখ হাসিনা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৯ নভেম্বর রাত সাড়ে ৮টার দিকে তার মৃত্যু হয়।