সকালেই রাজশাহীতে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ। একটু আগেভাগেই সমাবেশ শুরু করতে চান আয়োজকরা। কারণ সমাবেশস্থলের পার্শ্ববর্তী ঈদগাহ মাঠ ইতোমধ্যেই পূর্ণ হয়ে গেছে নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের উপস্থিতিতে।
শুক্রবার রাত ১০টায় মাদ্রাসা মাঠের সামনের রাস্তা দিয়ে হাঁটারও সুযোগ নেই। মানুষে ঠাসা। সমাবেশস্থল ঘিরেও অসংখ্য মানুষ।
গত বুধবার থেকেই রাজশাহীতে নেতা-কর্মীরা আসতে শুরু করেছিলেন। তবে সমাবেশের আগের দিন তাদের ঢল নামে। দুপুরের পর বিভিন্ন জেলা থেকে মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা করেও অনেকেই সভাস্থলের পাশে হাজির হন।
বাস ধর্মঘট চলার কারণে ট্রেনের ওপরই বেশি নির্ভর করেছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা।
গত তিন দিনে রাজশাহীতে যেসব ট্রেন ঢুকেছে সব ট্রেনেই ছিল উপচে পড়া ভিড়। শুক্রবার সন্ধ্যার পর যেসব ট্রেন রাজশাহী এসেছে সেগুলোতে পা ফেলারও ঠাঁই ছিল না। গাদাগাদি করে আসা এসব মানুষের বেশির ভাগেরই গন্তব্য ছিল সমাবেশ।
স্টেশন থেকে নেমেই দল বেঁধে হেঁটে স্লোগান দিতে দিতে সমাবেশস্থলের দিকে যাচ্ছেন তারা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সমাবেশের আগের রাতে উৎসবের আমেজ মাদ্রাসামাঠ এলাকাজুড়ে। খোশগল্প, ছোটাছুটি আর ক্ষণে ক্ষণে দলীয় স্লোগান দিয়ে সময় পার করছেন নেতা-কর্মীরা। কেউ তুলছেন সেলফি, কেউ ভিডিও। অনেককে ফেসবুক লাইভ করতেও দেখা গেছে। কখনও কখনও বসছে গানের আসর।
সকাল থেকেই সমাবেশ শুরুর পরিকল্পনা
সকাল থেকেই রাজশাহীর সমাবেশ শুরু করতে চান বিএনপি নেতারা। তারা দাবি করছেন, অনুমতি পেতে দেরি হওয়ার কারণে মঞ্চ প্রস্তুত হতে সময় লেগেছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, ‘আমরা আগে থেকেই মঞ্চ তৈরির কাজ শুরু করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ওই সময় পুলিশ আমাদের কাজ করতে দেয়নি। বৃহস্পতিবার থেকে কাজ শুরু হয়। এ কারণে কিছুটা সময় লেগেছে।’
দুলু বলেন, ‘আমরা সকাল ৯টা থেকে সমাবেশ শুরু করতে চাই। সকালেই আমরা সাবেশস্থলে প্রবেশ করতে চাই।’
ফাঁকা থাকবে খালেদা-তারেকের আসন
আয়োজকরা বলছেন, অনান্য বিভাগীয় সমাবেশের মতো রাজশাহীর মঞ্চেও ফাঁকা থাকবে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের আসন। শনিবার বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
দুলু বলেন, ‘শনিবার সকাল ৯টার দিকে মঞ্চে আসন গ্রহণ শুরু হবে। প্রতিবারের মতো এবারও সমাবেশ মঞ্চে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জন্য একটি করে দুটি চেয়ার ফাঁকা রাখা হবে।’
নগরীর সব প্রবেশপথে পুলিশের চেকপোস্ট
বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় গণসমাবেশ ঘিরে কঠোর অবস্থানে রয়েছে পুলিশ। শহরের সব প্রবেশমুখে বসানো হয়েছে চেকপোস্ট। এ ছাড়া নগরীর গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে থাকছে পুলিশের অবস্থান।
শুক্রবার বিকেল থেকেই মাদ্রাসা মাঠ ও আশপাশের এলাকার নিরাপত্তা আরও বাড়ানো হয়েছে। কয়েক দিন ধরে এখানে অল্প কিছু পুলিশ সদস্য অবস্থান করলেও বিকেল থেকে এই সংখ্যা কয়েক গুণ বেড়েছে।
সমাবেশ ঘিরে প্রায় দুই সপ্তাহজুড়েই রাজশাহী ও আশপাশের জেলাগুলোতে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। সমাবেশের আগমুহূর্তে তৎপরতা বাড়িয়েছে পুলিশও। নগরীর সবকটি প্রবেশপথে তল্লাশি চৌকি বসিয়েছে তারা।
নগরীর আমচত্বর, নওদাপাড়া, রেলগেট, কাশিয়াডাঙ্গা মোড়, তালাইমারী মোড়, কাটাখালী বাজার এবং বেলপুকুরে পুলিশের চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি করা হচ্ছে। বাইরে থেকে আসা যানবাহনগুলোতে তাদের বাড়তি নজরদারি।
মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার রফিকুল আলম বলেন, ‘সমাবেশকে কেন্দ্র করে কেউ যাতে সহিংস কিছু ঘটাতে না পারে, বিশৃঙ্খলা ঘটাতে না পারে, সে জন্য আমরা সতর্ক আছি। গোটা শহরেই নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। সাদা পোশাকেও মাঠে পুলিশ রয়েছে। গোয়েন্দা শাখার সদস্যরাও কাজ করছেন। সমাবেশে সার্বক্ষণিক নজর রাখতে মাদ্রাসা মাঠে বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরাও।
বাসের পর সিএনজি ধর্মঘট
রাজশাহীতে বাস ধর্মঘটের মাঝে শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে সড়কে ধর্মঘট শুরু করে সিএনজি ও থ্রি-হুইলার মালিকরাও। তারা বলছেন, অবাধ চলাচল ও হয়রানিমুক্ত রেজিস্ট্রেশনের দাবিতে তারা এই ধর্মঘট শুরু করেছেন।
সিএনজি টেম্পো মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দিদার হোসেন ভুলু বলেন, ‘সরকার বৈধভাবে সিএনজি আমদানি করে। সেই সিএনজি বিক্রি করে সরকার লাভও করে। তবে আমাদের লাইসেন্স পেতে কেন ভোগান্তি হবে? মহাসড়ক বাদে আমাদের তো সব সড়কেই চলাচলে অনুমতি আছে, তবে কেন আমাদের হয়রানি করা হবে? আমরা আমাদের লাইসেন্স ও হয়রানি মুক্তির দাবিতে সকাল ৬টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট ডেকেছি।’
ভুলু দাবি করেন, বিএনপির সমাবেশের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই।
এদিকে বাস বন্ধের পর সিএনজিচালিত টেম্পোর ওপরই ছিল যাত্রীদের ভিড়। শহরের ভেতরে অটোরিকশায় চলাচল করলেও রাজশাহীর উপজেলা পর্যায়ে বা আশপাশের জেলার সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম ছিল সিএনজি। শুক্রবার সকাল থেকে সেই পরিবহনও বন্ধ থাকায় পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে রাজশাহী।
মির্জা ফখরুল রাজশাহী
বিভাগীয় গণসমাবেশে অংশ নিতে ইতোমধ্যেই রাজশাহী পৌঁছেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শুক্রবার বিকেলে বিমানযোগে তিনি রাজশাহীর শাহ মখদুম বিমানবন্দরে পৌঁছান।
বিকেল ৫টায় বিমানবন্দরে পৌঁছালে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনুসহ স্থানীয় স্থানীয় নেতারা তাকে স্বাগত জানান। পরে তিনি রাজশাহীর কাজিহাটা এলাকার একটি হোটেলে যান।