ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ব্যক্তিগত গাড়ির নিচে চাপা পড়ে নিহত গৃহবধূ রুবিনা আক্তারকে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া গাড়িটি চালাচ্ছিলেন ঢাবির সাবেক শিক্ষক আজাহার জাফর শাহ। পুলিশের কাছে তার দাবি, গাড়িতে একজন আটকে থাকার বিষয়টি টেরই পাননি।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় থানা পুলিশের কাছে তিনি এ দাবি করেন বলে জানিয়েছেন শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূর মোহাম্মদ। তবে পুলিশ বলছে, গাড়িটি থামানোর চেষ্টা করা হলেও তিনি থামেননি, বরং পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন।
গাড়িটি আটকের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক আজাহার জাফরকে পিটুনি দেয় জনতা। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছে পুলিশ।
ওসি নূর মোহাম্মদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স আছে কিনা সে বিষয়ে কোনো তথ্য আমরা পাইনি। গাড়িতে লাইসেন্স সংক্রান্ত কোনো কাগজ ছিল না।’
প্রতি সপ্তাহে নিজ বাসা তেজগাঁও তেজকুনি পাড়া থেকে হাজারিবাগে যেতেন গৃহবধূ রুবিনা আক্তার। অন্যান্য সপ্তাহের মতো শুক্রবার ননদের স্বামীর মোটরসাইকেল চড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে হাজারিবাগে যাচ্ছিলেন।
বিকেল সোয়া ৩টার দিকে চারুকলা অনুষদের বিপরীতে পাশের রাস্তা ধরে যাওয়ার সময় একটি প্রাইভেটকারের ধাক্কায় পড়ে যান রুবিনা। চালক গাড়ি না থামিয়ে দ্রুত গতিতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
টিএসসি, ভিসি চত্বর হয়ে মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণের কাছাকাছি পর্যন্ত রুবিনাকে এভাবেই টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যায় গাড়িটি।
এরপর লোকজন গাড়িটি আটকে নিচ থেকে রুবিনা আক্তারকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
গাড়ির চালকক আজাহার জাফর শাহকে মারধর করেন পথচারীরা। শাহাবাগ থানার পুলিশ পরে তার পরিচয় নিশ্চিত করে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক সহযোগী অধ্যাপক। আহত অবস্থায় বর্তমানে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের জরুরি বিভাগের সামনে কথা হয় রুবিনার ভাগ্নে আশিকুর রহমান রাতুলের সঙ্গে। তিনি জানান, রুবিনার স্বামী মারা গেছেন দু বছর আগে। তাদের এক ছেলে রয়েছে। সে ক্লাস এইটে পড়ে।
রাতুল বলেন, ‘আমরা মামলা করব। আমার খালাকে হত্যা করা হয়েছে। থানায় যাচ্ছি।’
রুবিনার মৃত্যুকে ‘হত্যাকাণ্ড’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন রমনা বিভাগের উপ কমিশনার মো. শহিদুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘এটা অবশ্যই একটি হত্যাকাণ্ড।’
শহিদুল্লাহ্ বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি, নিহত মহিলা দেবরের সঙ্গে বাইকে করে শ্বশুর বাড়ি থেকে তার বাপের বাড়ি হাজারিবাগে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে তারা যখন শাহবাগ থেকে টিএসসির আগে কাজী নজরুলের মাজারের উল্টো দিকের রাস্তায় পৌঁছান, তখন প্রাইভেট কারটি মোটরসাইকেলে ধাক্কা দিলে তিনি পড়ে প্রাইভেট কারের সঙ্গে আটকে যান।
‘এরপরও উনি গাড়িটি না থামিয়ে টেনে-হিঁচড়ে চলে যান। তাকে থামানোর অনেক চেষ্টা করা হয়। উনি টিএসসি পৌঁছলে আমাদের মোবাইল টিমও তাকে থামানোর চেষ্টা করে। তারপরও উনি না থামিয়ে আরও জোরে গাড়ি চালিয়ে নীলক্ষেত মোড়ে গেলে উত্তেজিত জনতা তাকে থামতে বাধ্য করে। এই সম্পূর্ণ সময় সেই নারীটি গাড়ির সঙ্গে ছেঁচড়ে গেছেন।’
তিনি বলেন, ‘গাড়ির চালক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক। উত্তেজিত জনতার পিটুনিতে তার অবস্থা সঙ্কটাপন্ন।’
তিনি বলেন, ‘যেহেতু এটা মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা তাই আমরা একটা মামলা নেব। উনার গাড়িটা সিজ করেছি। আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
কোন আইনে মামলা করা হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সড়ক আইন অনুযায়ী রেকলেস ড্রাইভিংয়ে মৃত্যু ঘটানোর শাস্তির বিধান আছে। এই আইনে তার যেন সর্বোচ্চ শাস্তি হয় সেটি আমরা চেষ্টা করব।’
তিনি বলেন, ‘ঘটনার পর আমরা সেই শিক্ষকের নিকটাত্মীয়ের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছি। একটা নম্বর পেয়েছি। সম্ভবত ওনার স্ত্রীর নম্বর। তিনি ওনার অবস্থা জানার পর মোবাইল বন্ধ করে দিয়েছেন। তাদের কারো সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ পেলে তিনি গাড়ি চালানোর সময় সুস্থ নাকি অসুস্থ ছিলেন সেগুলোসহ আমরা বিস্তারিত জানতে পারব।’