শহরে বিশেষ করে রাজধানী ঢাকায় একই ভবনে দীর্ঘদিন বাস করেও একে অপরকে চেনেন না অনেক বেশিরভাগ প্রতিবেশী। কোনো ধরনের আন্তঃসম্পর্ক কিংবা কোনো যোগাযোগও থাকে না তাদের।
এই পরিস্থিতির পরিবর্তন চান ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম। এ জন্য রাজধানীয় পাড়ায় পাড়ায় উৎসব আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
মেয়রের ভাষায়, ‘সবার সঙ্গে পরিচিত হতে এবং সম্পর্ক সুদৃঢ় করতে এই পাড়া উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। পাড়া উৎসব প্রতিবেশীদের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়ন ও সামাজিক বন্ধন দৃঢ় করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’
পাড়া উৎসবকে ছড়িয়ে দেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘পর্যায়ক্রমে ঢাকা শহরের সব এলাকাতেই এ উৎসব আয়োজন করা হবে।’
শুক্রবার সকালে রাজধানীর গুলশানের ৬০, ৬১ ও ৬২ নম্বর সড়কে ‘পাড়া উৎসব’ উদ্বোধন করতে এসে এসব কথা বলেন মেয়র।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী তাজুল ইসলাম এমপি।
ডিএনসিসি এর সহযোগিতায় দ্বিতীয় বারের মতো এই পাড়া উৎসবের আয়োজন করে গুলশান সোসাইটি এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হিরোস ফর অল।
শুক্রবার সকাল থেকে শুরু হওয়া এ উৎসবে ছিল দেশীয় পিঠার স্টল, বায়োস্কোপ, পুতুল নাচ, ম্যাজিক শো, স্বাস্থ্যসেবা স্টল, পাটের তৈরি পণ্য।
এ ছাড়াও ছিল উইশ বোর্ড, শিশুদের ছবি আঁকার ক্যানভাস ও রং তুলি, ক্যারম বোর্ড, দাবাসহ নানা ধরনের খেলার সামগ্রী।
রাত ৮টা পর্যন্ত এ উৎসবে স্থানীয়দের পাশাপাশি অংশ নেন বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতেরাও।
ডিএনসিসি মেয়র এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন ও বাসিন্দাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এ সময় বিভিন্ন খেলায়ও অংশ নেন মেয়র এবং গান গেয়ে নগরবাসীর সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করেন।
মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘আজ সাপ্তাহিক ছুটির দিনে গুলশানের সবার বাসায় বসে থাকার কথা ছিল। কিন্ত আজ সবাই বাসা হতে বেরিয়ে এসে এ উৎসবে যোগ দিয়েছে। তারা একে অন্যকে জিজ্ঞেস করছে- তুমি কই থাকো?’
ডিএনসিসি মেয়র আরও বলেন, ‘আমরা ঠিকই জাতীয় সংগীত গাই আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি। অথচ ময়লাটা রাস্তায় ফেলে দেই, লালবাতি জ্বলার পরেও আমরা রাস্তায় গাড়ি চালিয়ে দেই। এ বিষয়গুলো মাথায় রেখেই এ পাড়া উৎসব।’
নগরবাসীর উদ্দেশে মেয়র বলেন, ‘আসুন সবাই শহরকে ভালোবাসি। শহরের পরিবেশ রক্ষায় অযথা হর্ন বাজানো বন্ধ করি। গুলশান থেকেই এ চর্চা শুরু হোক।’
অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘উন্নত বিশ্বের মতো ঢাকায়ও সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। এ আয়োজনটি গ্রামের উৎসব। ঢাকা শহরে ফিরে এসেছে৷ এখানে কোনো প্রতিযোগিতা নেই আছে শুধু হৃদ্যতা।’
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, সংরক্ষিত আসনের নারী সংসদ সদস্য নাহিদ ইজাহার খান, ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জোবায়দুর রহমান, প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহ. আমিরুল ইসলাম, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর এস এম শরিফ-উল ইসলাম, সচিব মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দিক, ১৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. মফিজুর রহমানসহ অনেকেই।