রাজশাহীর কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে দুই রাত কাটলো বিএনপি নেতা-কর্মীদের। সময় যত যাচ্ছে মাঠে নেতা-কর্মীর উপস্থিতি বাড়ছে। অনেকটা উৎসবের আমেজে নেতা-কর্মীরা দিনরাত পার করছেন ঈদগাহ মাঠে।
গল্প, হাঁটাহাঁটি আর কিছুক্ষণ পর পর দলীয় স্লোগান দিয়ে কর্মীরা সময় পার করছেন। তুলছেন সেলফি। ভিডিও করছেন। অনেকেই ফেসবুকে লাইভও করছেন।
রাজাশাহী মাদ্রাসা মাঠে চলছে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের মঞ্চ তৈরির কাজ। এই মাঠে নেতা-কর্মীদের এখনও প্রবেশের অনুমতি মেলেনি। মাঠের ভেতরে শুধু মঞ্চ তৈরির কাজে নিয়োজিত মিস্ত্রীরা আর বেশ কিছু পুলিশ সদস্যের অবস্থান। কিন্তু এরই মধ্যে বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী বিভিন্ন জেলা থেকে এসে হাজির হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার থেকে পরিবহন ধর্মঘট শুরু হওয়ায় বাসে আসার সুযোগ নেই। এ কারণে নেতা-কর্মীরা অনেকেই এসেছেন বুধবার সারাদিনে। আবার কিছু নেতা-কর্মী বৃহস্পতিবার এসেছেন ট্রাক ভাড়া করে। রাজশাহী অভিমুখী প্রতিটি ট্রেনেই আসছেন বিএনপি নেতা-কর্মীরা। সবগুলো ট্রেনই আসছে বিএনপি নেতা-কর্মীতে ঠাসা হয়ে। উত্তরাঞ্চলের সবগুলো জেলা থেকে এরই মধ্যে দলটির নেতা-কর্মীরা এসেছেন। শনিবার দুপুর পর্যন্ত লোকজন আসবে বলে জানচ্ছেন উপস্থিত নেতারা।
বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে সমাবেশস্থলের পাশের ঈদগাহ মাঠ জুড়ে দেখা গেল উৎসবের আমেজ। পুরো ঈদগাহ মাঠ জুড়ে তাবু টানানো হয়েছে। বাঁশ আর শামিয়ানায় ঢাকা পড়েছে এই মাঠ। জেনারেটরের মাধ্যমে আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। বড় বড় তাঁবুর একেকটিতে একেক জেলার নেতারা অবস্থান করছে। রাত গভীর হলেও বেশীরভাগ নেতা-কর্মীই সামনের রাস্তায় হাঁটাহাঁটি করছেন। কেউবা আবার পাশের পদ্মা নদীর পাড়ে হেঁটে বেড়াচ্ছেন। নেতাদের সঙ্গে সেলফি তুলছেন, ভিডিও করছেন। ফেসবুকে লাইভ করছেন।
রাজশাহীর কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে বিএনপির নেতাকর্মীরাকিছুক্ষণ পরপরই নেতা-কর্মীরা স্লোগানে মুখর করে তুলছেন পুরো এলাকা। কেউ একজন স্লোগান শুরু করলে যেন শত শত নেতা-কর্মী তার সঙ্গে যোগ দিচ্ছেন। আবার তাঁবুর ভেতরে মাঝে মধ্যেই চলছে গানের আসর। কখনও দল বেঁধে আবার কখনও একক গান। সব মিলিয়ে নিজেরা নিজেরাই চাঙ্গা থাকার চেষ্টা করছেন তারা।
শুক্রবার কাকডাকা ভোর থেকেই সরগরম হয়ে উঠেছে ঈদগাহ মাঠ। সূর্য উঠতে না উঠতেই শুরু হয় রান্নার আয়োজন। বড় বড় ডেগচিতে হচ্ছে খিচুড়ি রান্না।
নওগাঁ তেকে আসা বিএনপি কর্মী আব্দুল জলিল জানান, তারা তিনদিনের প্রস্তুতি নিয়ে বৃহস্পতিবার এসেছেন এই মাঠে। নিজেরাই তাঁবু টানান। নিজেরাই রান্না করছেন। একসঙ্গে রান্না হচ্ছে। তাঁবুর ভেতরে বসে কয়েকজনকে মুড়ি খেতে দেখা গেল। তারা বললেন, শুকনা খাবার নিয়ে এসেছেন আপদকালীন হিসেবে। কোন খাবার না জুটলে যাতে এগুলো খাওয়া যায়। নেতা-কর্মীরা খাবার ছাড়াও সঙ্গে করে এনেছেন শীতের পোশাক। কাঁথা, বালিশ আর কম্বল এনেছেন অনেক নেতা-কর্মীই।
বিভিন্ন জেলা থেকে আসা কর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করছেন ওইসব এলাকার নেতারা। সেইসঙ্গে রাজশাহীর বিএনপি, যুবদল ছাত্রদল নেতারাও তাদের সঙ্গে দেখা করছেন, আড্ডা দিচ্ছেন।
শুক্রবার সকালে ঈদগাহ মাঠে যান বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু ও সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু। তারা মাঠের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন, খোঁজ নেন। পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন দুই নেতা।
মিজানুর রহমান মিনু নেতা-কর্মীদের দেখিয়ে বলেন, ‘দেখেন কত নেতা-কর্মী এসেছে। বাস বন্ধ করে, বাধা দিয়ে তাদের থামানো যায়নি। তারা দূর-দুরান্ত থেকে আসা নেতা-কর্মী। আজও আসবে এর চাইতে আরও কয়েকগুন। আর রাজশাহী জেলা ও মহানগরের নেতা-কর্মীতো এখনও আসেই নি। আগামীকাল সকাল থেকেই সমাবেশ শুরু করতে চাই।’
মিনু বলেন, ‘আমাদের যত নেতা-কর্মী আসবেন মাঠে তাদের জায়গা দেয়ার সুযোগ নেই। পুরো রাজশাহী শহর ভরে যাবে বিএনপি নেতা-কর্মীতে।’