গাইবান্ধায় নববর্ষের রাতে বিষাক্ত মদপানে ৮১ জনের মৃত্যু ও অনেকের অন্ধত্ব বরণের ঘটনায় মামলায় মাদক বিক্রেতা রবীন্দ্র নাথ সরকারের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছে আদালত। একই মামলায় তাকে ১৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
ঘটনার ২৪ বছর পর বৃহস্পতিবার বিকেলে গাইবান্ধা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আবুল মনসুর মিয়া এ রায় দেন। দণ্ডিত রবীন্দ্র নাথ সরকার পলাতক আছেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহম্মেদ প্রিন্স এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মামলার বরাতে তিনি জানান, ১৯৯৮ সালের পয়লা বৈশাখ নববর্ষের রাতে গাইবান্ধায় বিষাক্ত মদপানে ৮১ জনের মৃত্যু ও অনেকে অন্ধত্ব বরণ করেন। তারা সবাই স্টেশন রোডে বরীন্দ্র নাথ সরকারের ন্যাশনাল হোমিও হল থেকে রেকটিফাইড স্পিরিট কিনে সেবন করেন।
তিনি আরও জানান, সেদিন অতিরিক্ত লাভের আশায় রবীন্দ্র নাথ সরকার দোকানে এবং বাড়িতে মজুত রেকটিফাইড স্পিরিটে বিষাক্ত মিথানল মিশিয়ে বিক্রি করেন। এই বিষাক্ত স্পিরিট খেয়ে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাদেরকে গাইবান্ধা জেলারেল হাসপাতাল ও রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওইদিন ১১ জনের মৃত্যু হয়। পরে বিভিন্ন স্থানে হাসপাতালে ও গোপনে আরও ৭০ জনের প্রাণহানি ঘটে। বিষাক্ত মদপানে অনেকে চিরতরে অন্ধ হয়ে পড়েন।
ওই ঘটনায় গাইবান্ধা সদর থানার তৎকালীন পরিদর্শক জাকির হোসেন ১৬ জনকে আসামি করে মামলা করেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গাইবান্ধা সদর থানার তৎকালীন পরিদর্শক সত্য রঞ্জন ভদ্র গাইবান্ধা সদর হাসপাতালে গিয়ে মরদেহের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করেন। ময়নাতদন্তের জন্য গাইবান্ধা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠনো হয় মরদেহগুলো।
চিকিৎসক ময়নাতদন্ত মুলতবি রেখে মৃত কাবলু, বাকি, সুজন ড্রাইভার, মোহাম্মাদ হোসেন ও বিশুর ভিসেরা রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠান। রাসায়নিক পরীক্ষার রিপোর্টে ভিসেরায় বিষাক্ত মিথানলের উপস্থিতি পাওয়া যায়।
১৯৯৮ সালের ৬ জুলাই মামলাটি সিআইডিতে হস্তান্তর করা হয়। মামলার তদন্ত সিআইডি কর্মকর্তা আবদুর রহমান ১৪ জনকে মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়ে রবীন্দ্রনাথ সরকার ও মৃণাল কান্তির বিরুদ্ধে ২০০২ সালের ২৮ জুলাই আদালতে চার্জশিট দেন। পরে বিচারের জন্য নিম্ন আদালত থেকে মামলার নথিপত্র গাইবান্ধা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে পাঠানো হয়।
মামলার পরপরই মাদক বিক্রেতা রবীন্দ্র নাথ বাড়িতে স্ত্রী-সন্তান রেখে পালিয়ে যান। চার্জ গঠনের পর মারা যান মামলার আসামি মৃণাল কান্তি।
আইনজীবী ফারুক আরও জানান, মামলার তদন্ত শেষে রবীন্দ্র নাথের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দেন গাইবান্ধা সিআইডির তৎকালীন পরিদর্শক আবেদ আলী। সাক্ষ্য প্রমাণ শেষে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বিচারক রায় দিয়েছেন।
রেকটিফাইড স্পিরিট হলো ৯৫.৬ শতাংশ ইথাইল অ্যালকোহল ও ৪.৪ শতাংশ পানির মিশ্রণ। রেকটিফাইড স্পিরিট ডাক্তারি কাজে ও দ্রাবকরুপে ব্যবহার হয়। এ স্পিরিট থেকে বিশুদ্ধ অ্যালকোহল প্রস্তুত করা হয়।