খুলনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সহসভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদীর গুলশানের বাড়ি নিয়ে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন ১৬ জানুয়ারির মধ্যে হাইকোর্টে জমার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেয়।
একই সঙ্গে গণপূর্ত যে প্রতিবেদন তৈরি করেছে তা দুদকে দাখিল করতে বলা হয়েছে।
আদালত গণপূর্তের পক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, দুদকের পক্ষে ছিলেন খুরশীদ আলম খান, সাঈদ আহমেদ রাজা। অন্যদিকে রিটকারী সুমনের পক্ষে ছিলেন অনিক আর হক।
সালাম মুর্শেদীর গুলশানের বাড়িটি পরিত্যক্ত সম্পত্তি হওয়ায় অবৈধ দখলমুক্ত করে সরকার নিজ জিম্মায় নিতে পারে বলে মত দেয় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি।
তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে রাজউকের আইন বিভাগের জবাব জমা দেয়া হয়েছে হাইকোর্টে।
এর আগে ১ নভেম্বর সরকারের সম্পত্তি নিজের নামে লিখে নিয়ে বাড়ি বানানোর অভিযোগে সালাম মুর্শেদীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করে হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ওই সম্পত্তি সম্পর্কিত সব কাগজপত্র ১০ দিনের মধ্যে আদালতে জমা দিতে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান, গণপূর্ত সচিব ও সালাম মুর্শেদীকে আদেশ দেয় আদালত।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন ৬ নভেম্বর এই রিট করার পর রুল জারি করেছিল হাইকোর্ট।
এর আগে সালাম মুর্শেদীর বাড়িটির বৈধতা যাচাইয়ে দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত সেপ্টেম্বরে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে। কমিটির প্রধান ছিলেন মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন অধিশাখা-৯-এর যুগ্ম সচিব মো. মাহমুদুর রহমান হাবিব। সদস্যসচিব রাজউকের পরিচালক (প্রশাসন) মুহাম্মদ কামরুজ্জামান এবং সদস্য ছিলেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং শাখা-১১-এর উপসচিব জহুরা খাতুন।
তদন্ত প্রতিবেদন ও হাইকোর্টে রাজউকের আইন শাখার জবাবের অনুলিপি পেয়েছে নিউজবাংলা। এতে সালাম মুর্শেদীর বাড়িটি জাল দলিলের মাধ্যমে অবৈধ দখলের প্রমাণ উল্লেখ করে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনা এবং সম্পদের দখল সরকারের বুঝে নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
যা আছে তদন্ত প্রতিবেদন ও রাজউকের আইন বিভাগের জবাবে
মন্ত্রণালয়ের কমিটির তদন্তের পর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরেজমিন পরিদর্শন ও গুলশান আবাসিক এলাকার লে-আউট নকশা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, রোড নং ১০৪ ও রোড নং ১০৩-এর সংযোগস্থলের কর্নারের প্লট/বাড়িটি (২৭ নং প্লট) অবস্থান বিবেচনায় ১০৪ নং রাস্তায় অবস্থিত। এটি ১৯৮৬ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ গেজেটে প্রকাশিত ৯৭৬৪(১) নং পৃষ্ঠার ৪৬ নং ক্রমিকে ‘খ’ তালিকাভুক্ত পরিত্যক্ত বাড়ি।
সবশেষ জরিপ/সিটি জরিপে সংশ্লিষ্ট এলাকার সিইএন(ডি) ব্লকের ২৭ নং প্লটের ৫২০৪ ও ৫২০৫ দাগসমূহ সিটি জরিপের ৯ নং খতিয়ানভুক্ত, যা সরকারের পক্ষে গণপূর্ত নগর উন্নয়ন বিভাগ ঢাকার নামে রেকর্ডভুক্ত।
তদন্ত কমিটি বলেছে, বাস্তবে ওই এলাকায় রাজউকের লে-আউট নকশায় কথিত বাড়ির অস্তিত্ব বিদ্যমান নেই। এ ক্ষেত্রে সুকৌশলে ওই এলাকার ১০৪ নং রোডের ওই বাড়িটি ১০৩ নং রোড দেখিয়ে জাল কাগজপত্র তৈরি করে হস্তান্তর-নামজারিসহ অন্য কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।
তদন্ত কমিটি তাদের সুপারিশে উল্লেখ করে ‘অবৈধ দখলভুক্ত প্লটটি অবিলম্বে সরকারের দখলে আনার’ সুপারিশও করেছে। সেই সঙ্গে এ জালিয়াতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছে।
একই তথ্য উল্লেখ করে উচ্চ আদালতে পাঠানো জবাবে রাজউকের আইন বিভাগ বলেছে, ‘সার্বিক পর্যালোচনায় গুলশান আবাসিক এলাকার ১০৪ নং রাস্তার সিইএন (ডি) ব্লকের ২৭ নং বাড়িটি পরিত্যক্ত সম্পত্তির তালিকা হতে অবমুক্ত ব্যতিরেকে যেসব কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে তার বৈধতার বিষয়ে সুস্পষ্ট দালিলিক প্রমাণ অনুপস্থিত। তর্কিত বাড়িটির হস্তান্তর প্রক্রিয়া বিধিসম্মত হয়নি।’
তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে কমিটির সদস্যসচিব রাজউকের পরিচালক (প্রশাসন) মুহাম্মদ কামরুজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা তিন সদস্যের কমিটি তদন্ত করে রিপোর্ট জমা দিয়েছি। আমরা তদন্তে যা যা পেয়েছি তার সবই স্পষ্ট রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।’