১৮ কোটি টাকার বকেয়া বিল পরিশোধ না করায় দিনাজপুর পৌরসভার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে সংশ্লিষ্ট বিভাগ। বিদ্যুৎ না থাকায় জন্মনিবন্ধনসহ সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে পড়েছে। করোনার ভ্যাকসিনসহ বিভিন্ন ভ্যাকসিনও নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন আগে পৌর কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়নি বলে দাবি করেছেন পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মিনারুল ইসলাম খান। তবে পুনরায় সংযোগ পেতে বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
দিনাজপুর বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের পক্ষ থেকে মঙ্গলবার বিকেলে পৌরসভা কার্যালয়ের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়।
বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, বিদ্যুৎহীন দিনাজপুর পৌরসভা কার্যালয়। কেবল কর্মকর্তাদের রুমের বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে একটি জেনারেটর ব্যবহার করা হচ্ছে।
বিদ্যুৎ না থাকায় জন্ম সনদসহ সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে পড়েছে। কর্মচারীরা অলস সময় পার করছেন। সকাল থেকে শত শত মানুষ পৌরসভায় এসে সেবা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন।
অপরদিকে পৌরসভায় বিভিন্ন টিকা কার্যক্রম শুরু হচ্ছে ১ ডিসেম্বর। এই টিকা কার্যক্রমের জন্য প্রায় চার হাজার করোনা ভ্যাকসিন ও কয়েক হাজার অন্যান্য ভ্যাকসিন পৌরসভায় ফ্রিজারে রাখা আছে। বিদ্যুৎ না থাকায় ভ্যাকসিনগুলো নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সেবা নিতে আসা মুন্সিপাড়ার আক্তার হোসেন বলেন, ‘সকাল থেকে জন্মনিবন্ধনের আবেদন দেয়ার জন্য ঘুরে বেড়াচ্ছি। কিন্তু বিদ্যুৎ না থাকায় আমার আবেদন নেয়া হচ্ছে না। আমার জন্মনিবন্ধন করাটা খুব জরুরি।’
পৌরসভার ইপিআই সুপারভাইজার মোমরেস সুলতানা বলেন, পৌরসভার ২টি ডিপ ও ২টি সাধারণ ফ্রিজারে করোনা ভ্যাকসিন ও শিশুদের দেয়ার জন্য টিকা রয়েছে। আগামীকাল (আজ) করোনার ভ্যাকসিন দেয়ার প্রোগ্রাম আছে। এখানে করোনার ভ্যাকসিন আছে ৪ হাজার। অন্যান্য টিকা রয়েছে কয়েক হাজার। অথচ মঙ্গলবার থেকে বিদ্যুৎ নেই। এ অবস্থায় টিকাগুলো কার্যকর থাকবে কিনা বলা মুশকিল।’
পৌরসভার হেপাটাইটিস বি কার্যক্রমের কর্মী নার্গিস বেগম বলেন, ‘বিদ্যুৎ না থাকায় টিকা দিতে পারছি না। অন্ধকারে কোনো কাজ করা যাচ্ছে না। আমরা চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছি।’
বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করার ব্যাপারে পৌর মেয়রের ওপর ক্ষোভ ঝাড়লেন পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জুলফিকার আলী স্বপন।
তিনি বলেন, ‘আমি কাউন্সিলর হয়েছি দুই বছর হলো। এই দুই বছরে ২৪টি মাসিক সমন্বয় সভা হয়েছে। কিন্তু কোনো সভায় বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকার বিষয়টি আলোচনায় আসেনি। এখন আমরা অন্ধকারের মধ্যে আছি। বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার জন্য দায়ী মেয়র।’
পৌর মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলমের কার্যালয়ে গিয়ে তার কক্ষটি বাইরে থেকে তালাবদ্ধ পাওয়া যায়। তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে মিটিং আছেন জানিয়ে ফোনের লাইন কেটে দেন।
দিনাজপুর পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মিনারুল ইসলাম খান বলেন, ‘দিনাজপুর পৌরসভার কাছে বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ ১ ও ২-এ মোট ১৮ কোটি টাকার বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রয়েছে। তবে বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ ১-এর অফিসটি দিনাজপুর পৌরসভার সম্পত্তি। এ বাবদ প্রথম থেকে প্রায় ৭০ কোটি টাকা তাদের কাছে আমাদের পাওনা রয়েছে।’
দিনাজপুর বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ ১-এর নির্বাহী প্রকৌশলী একেএম শাহাদত হোসেন বলেন, ‘পৌরসভার কাছে বিদ্যুৎ বিভাগ ১ ও ২-এর বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রয়েছে। কিন্তু তারা কোনো ধরনের টাকা পরিশোধ করছে না। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। সেখান থেকে শুধু পৌরসভা ভবনের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। আর আমাদের কাছে পৌরসভা জমি ভাড়া বাবদ যদি কোনো টাকা পেয়ে থাকে তাহলে আমাদেরকে কাগজপত্র দেখাক। কিন্তু তারা আমাদেরকে কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারছে না।’
দিনাজপুরের সিভিল সার্জন ডা. বোরহন-উল হক বলেন, ‘পৌরসভায় আমাদের টিকা রয়েছে। আইসল্যান্ড রেফ্রিজারেটর থাকলে ৭২ ঘণ্টা টিকা ঠিক থাকে। বিষয়টি জানার পর পৌরসভার কাছে থাকা টিকাগুলো বিকল্প জায়গায় ফ্রিজিংয়ের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।’