আন্দোলনের মাধ্যমে সরকার উচ্ছেদ করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নতুন জোট গঠন করেছে বামপন্থী আট ছাত্র সংগঠন। নতুন এই জোটের নাম দেয়া হয়েছে ‘গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট’।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে বুধবার সংবাদ সম্মেলন করে নতুন এই জোট গঠনের ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
জোটভুক্ত সংগঠনগুলো হলো- সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ও বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলন।
নতুন এই জোটের সমন্বয়ক এবং সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের (মার্কসবাদী) সভাপতি সালমান সিদ্দিকী সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন।
সালমান বলেন, ‘বাংলাদেশ আজ গভীর সংকটময় সময় পার করছে। ২০১৪ সালের একতরফা নির্বাচন এবং ২০১৮ সালের ভোট ডাকাতির মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন রয়েছে আওয়ামী লীগ। বুর্জোয়া সংসদীয় ব্যবস্থার কবর রচনা করে মানুষের ন্যূনতম গণতান্ত্রিক অধিকার ভোট দেয়ার ক্ষমতাটুকুও কেড়ে নিয়েছে তারা।
‘বর্তমান সরকার দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে শোষণ, লুণ্ঠন, অর্থপাচার, দুর্নীতির মাধ্যমে দেশে এক দুর্বৃত্ত শ্রেণীর রাজত্ব কায়েম করেছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ নানা কালাকানুন দিয়ে স্বাধীন মতপ্রকাশে বাধা ও বিরোধী মত দমন করছে।’
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘সরকার গণতান্ত্রিক আন্দোলনে পুলিশি আক্রমণ, মিছিলে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যাসহ গুম-খুনের মাধ্যমে দেশে ফ্যাসিবাদী শাসন দীর্ঘায়িত করে চলেছে। জনগণের মতামতের তোয়াক্কা না করে প্রতিনিয়ত বাড়াচ্ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম।
‘আওয়ামী উন্নয়নের স্লোগান পরিণত হয়েছে ফাঁপা বুলিতে। আওয়ামী শাসনের ১৪ বছরে গ্যাসের দাম বেড়েছে আড়াই গুণ, বিদ্যুতের দাম বেড়েছে দুই গুণ, ৭ বার বেড়েছে জ্বালানি তেলের দাম, ওয়াসার পানির দাম বেড়েছে ১৩ বার, বেড়েছে সারের দাম। সাম্প্রতিক সময়ে পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ২০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে এবং গ্রাহক পর্যায়েও বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
‘নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। মানুষের আয় বাড়েনি কিন্তু ব্যয় বাড়ছে প্রতিনিয়ত। বিশ্ব খাদ্য সংস্থার রিপোর্টে এসেছে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির কারণে খাদ্য ব্যয় কমাতে বাধ্য হয়েছে প্রায় ৭৩ ভাগ মানুষ আর প্রতিরাতে না খেয়ে ঘুমাতে যায় প্রায় ৫ কোটি মানুষ। ‘দেশে দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা একদলীয় ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনে জনজীবনে নেমে এসেছে সীমাহীন দুর্ভোগ। তৈরি হয়েছে এক শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি।’
সালমান সিদ্দিকী বলেন, ‘উদ্ভূত পরিস্থিতি থেকে ছাত্র সমাজসহ আপামর জনগণ মুক্তি চাইছে। দেশের যেকোনো দুঃসময়ে এদেশের ছাত্র সমাজ কখনো চুপ থাকেনি। আমরা মনে করি এই ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ ছাত্র আন্দোলন গড়ে তোলা সময়ের কর্তব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।
‘এই অনুধাবন থেকেই আমরা ৮টি ছাত্র সংগঠন সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক অবস্থান থেকে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলা এবং পরিচালনার জন্য একত্রিত হয়েছি। আমরা ফ্যাসিবাদী এই সরকারকে জনগণের আন্দোলনের মাধ্যমে উচ্ছেদ করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’
সংবাদ সম্মেলনে জোটের পক্ষ থেকে ১৩ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য দাবিগুলো হলো- আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারের পদত্যাগ; সার্বজনীন, বৈষম্যহীন, বিজ্ঞানভিত্তিক, গণতান্ত্রিক একই ধারার শিক্ষানীতি প্রণয়ন; শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করে গণরুম-গেস্টরুম বন্ধ করা, ডাকসুসহ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত ছাত্র সংসদ নির্বাচন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করা।
নবগঠিত জোটের দাবিগুলোর মধ্যে আরও রয়েছে- পদাধিকারবলে রাষ্ট্রীয় প্রধান আচার্য এই বিধান বাতিল করে বরেণ্য ও সর্বজন গ্রহণযোগ্য শিক্ষাবিদকে আচার্য হিসেবে নিয়োগ দেয়া; শিক্ষা খাতে জাতীয় বাজেটের ২৫ শতাংশ বরাদ্দ করা; ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ওটিটি নিয়ন্ত্রণ নীতিমালাসহ সব গণবিরোধী ও অগণতান্ত্রিক আইন বাতিল করা; দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে পূর্ণাঙ্গ রাষ্ট্রীয় বাণিজ্য চালু করা; শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি ও কৃষকের উৎপাদিত ফসলের লাভজনক মূল্য নিশ্চিত করা; নারী স্বার্থবিরোধী আইন বাতিল করা এবং ঘরে-বাইরে নারী নির্যাতন বন্ধ করা।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এসব দাবি দাবিতে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের পক্ষ থেকে ১৮ ডিসেম্বর সকাল ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে ছাত্র সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।