বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বাকপ্রতিবন্ধী তরুণীকে পুড়িয়ে হত্যায় জড়িতকে খুঁজছে পুলিশ

  •    
  • ৩০ নভেম্বর, ২০২২ ১৬:৫৭

শরীরের ৬৫ শতাংশ পুড়ে যাওয়া ওই তরুণীকে সোমবার রাতেই শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়। সেখানে মঙ্গলবার রাতে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে হত্যা মামলা করা হয়েছে। তরুণীর ছোট বোনের অভিযোগ, হত্যার আগে তাকে ধর্ষণ করা হয়।

ঢাকার কেরানীগঞ্জে দগ্ধ অবস্থায় উদ্ধারের পর হাসপাতালে মারা যাওয়া বাকপ্রতিবন্ধী তরুণী ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন কি না, তা নিশ্চিত হতে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের অপেক্ষায় আছে। তবে হত্যা মামলার পর সন্দেহভাজন এক ব্যক্তিকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

কেরানীগঞ্জের সুবাড্ডা সাবান ফ্যাক্টরির গলি চিতা খোলা এলাকা থেকে সোমবার রাত ১১টার দিকে দগ্ধ ওই তরুণীকে উদ্ধার করা হয়। তার বাড়ি ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে বাদল্লাপুর এলাকায়।

শরীরের ৬৫ শতাংশ পুড়ে যাওয়া ওই তরুণীকে সোমবার রাতেই শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়। সেখানে মঙ্গলবার রাতে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে হত্যা মামলা করা হয়েছে। তরুণীর ছোট বোনের অভিযোগ, হত্যার আগে তাকে ধর্ষণ করা হয়।

পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে ওই তরুণীকে ‘কোনো কিছুর জন্য প্রলুব্ধ করে’ কেরানীগঞ্জ এলাকায় ডেকে নেয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। তদন্তকারীরা বলছেন, সন্দেহভাজন ওই ব্যক্তির ডাকেই সোমবার সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে বের হন ওই তরুণী। এরপর রাত ১১টার দিকে তার গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়ার ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় তরুণীর ছোট ভাই হত্যা মামলা করেন। এতে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি-ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ওই ব্যক্তির পরিচয় নিশ্চিত হয়ে তাকে গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু করেছে পুলিশ।

এলাকাবাসী জানায়, দগ্ধ হয়ে মারা যাওয়া তরুণীর বাবা চাকরিজীবী ছিলেন, এখন অবসরপ্রাপ্ত। তার দুই স্ত্রী ও ৭ সন্তান রয়েছে। মারা যাওয়া তরুণী প্রথম পক্ষের দুই ভাই ও তিন বোনের মধ্যে সবার বড়। তার বাবার আরেক স্ত্রীর দুই ছেলেময়ে রয়েছে। তারা সবাই কেরানীগঞ্জ মডেল থানাধীন বাদল্লাপুর এলাকায় বসবাস করেন।

স্বজনরা জানান, মারা যাওয়া তরুণী বাকপ্রতিবন্ধী হওয়ায় অবিবাহিত ও বাড়িতে থাকতেন।

তার ছোট ভাই নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার বোন সব সময় বাসাতেই থাকত, মাঝেমধ্যে বাসা থেকে বেরিয়ে এলাকাতে এদিক-সেদিক যেত। এ জন্য এলাকায় প্রায় সবাই তাকে চেনে। সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৫টার দিকে বাসায় কাউকে কিছু না বলে সে বাসা থেকে বের হয়।

‘রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয় একজন মুরব্বির সঙ্গে তার দেখা হয়। তখন ওই চাচা আমার বোনকে হাত ইশারা করে জানতে চান, সন্ধ্যাবেলায় সে কোথায় যাচ্ছে। আমার বোন তাকে ইশারায় বলে কোনো একটি কাজে আঁটিবাজারের দিকে যাচ্ছে।’

ওই তরুণীর ছোট ভাই নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এরপর ওই চাচা বাসায় এসে আমাদের এ কথা জানালে আমরা সন্ধ্যা ৬টার দিক থেকে খুঁজতে শুরু করি। রাত ১২টা পর্যন্ত তাকে খুঁজে না পেয়ে সকালবেলায় বিষয়টি থানায় জানানোর সিদ্ধান্ত নিই।

‘তবে এর মধ্যেই রাতে পুলিশ বাসায় এসে জানায়, আমার বোনকে পাওয়া গেছে। পরে পুলিশের সঙ্গে মেডিক্যালে গিয়ে দেখি আমার বোন আইসিইউতে ভর্তি।’

কে বা কারা তাকে ডেকে নিতে পারে- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমার বোন প্রতিবন্ধী মানুষ, তার তো কোনো শত্রু ছিল না। তবে কেউ হয়তো তাকে কোনো কিছুর লোভ দেখিয়ে নিয়ে গেছে। ঘটনার পর আমার বোনের সঙ্গে ইশারায় কথা বলার অবস্থা ছিল না। তাই তার সঙ্গে ঠিক কী ঘটেছিল, কে ডেকে নিয়ে গিয়েছিল তা আমরা কেউ বলতে পারছি না।’

তবে মঙ্গলবার রাতে মৃতের ছোট বোন সাংবাদিকদের বলেন, ‘উদ্ধারের পর আমার বোন আমাদেরকে ইঙ্গিতে বুঝিয়েছে- তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে। সে ধর্ষণকারীদের চেনে বলেও আমাদের ইশারায় বলেছে। আমার বোনকে হত্যার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চাই।’

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার পরিদর্শক মো. মাসুদুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সোমবার রাতে ৯৯৯ থেকে আমাদের জানানো হয়, সুবাড্ডা ১ নং ওয়ার্ডের চুনকুটিয়া সাবান ফ্যাক্টরির পাশে চিতাখোলা রাস্তাসংলগ্ন ব্রিজের ৩০ গজ দূরে এক নারীর শরীরে আগুন দেয়া হয়েছে। এরপরেই পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। বায়োমেট্রিক আঙুলের ছাপ থেকে পরিচয় নিশ্চিত হয়ে পরিবারকে জানানো হয়।‘

তরুণীকে উদ্ধারের ঘটনাস্থলের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের কদমতলী এলাকা থেকে একটু দূরে সুবাড্ডা ১ নম্বর ওয়ার্ড। সেখানে একটি সাবান ফ্যাক্টরি আছে। সাবান ফ্যাক্টরির পাশ দিয়েই চিতাখোলা রাস্তা চলে গেছে। ওই রাস্তায় একটি ছোট কালভার্টের আনুমানিক ৩০ গজ দূরে রাস্তার পাশেই ওই নারীর শরীরে আগুন দেয়া হয়।

‘এই রাস্তাটি এমনিতেই খুব নির্জন ও অন্ধকার। সন্ধ্যার পর মানুষের চলাচল কমে যায়। তার ওপর ঘটনাটি ঘটে রাত ১১টা থেকে সোয়া ১১টার দিকে। সে সময় ব্রাজিল ও সুইজারল্যান্ডের ফুটবল ম্যাচ চলছিল। ফলে ওই রাস্তায় একেবারেই মানুষের চলাচল ছিল না। আমরা ধারণা করছি হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তি পরিকল্পনা করেই সেখানে ভিকটিমকে নিয়ে যায়।’

তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে মো. মাসুদুর রহমান বলেন, ‘এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় এক ব্যক্তির জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। ওই ব্যক্তি কোনো বিষয়ে ভিকটিমকে প্রলুব্ধ করে বাসা থেকে এতদূর নিয়ে এসেছিল। তবে ঠিক কী বিষয়ে প্রলুব্ধ করেছিল বা ওই ব্যক্তির সঙ্গে ভিকটিমের কী সম্পর্ক ছিল সেটা এখনই বলা যাচ্ছে না। আমরা কাজ করছি। ওই ব্যক্তিকে ধরতে পারলে অনেক প্রশ্নের উত্তর মিলবে।’

তরুণীর গায়ে আগুন দেয়ার আগে তাকে ধর্ষণ করা হয়েছিল কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে পুলিশ এখনও নিশ্চিত নয়। ময়নাতদন্তের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় মেডিক্যাল পরীক্ষার পরেই এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাবে।’

এ বিভাগের আরো খবর