জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক বেগম রওশন এরশাদ দেশে ফেরার পর প্রথমবারের মতো পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের সঙ্গে তার বৈঠক হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনে তাদের দুজনের সাক্ষাৎ হয়।
এ সময় তারা এক টেবিলে নাশতা করেন। দলের পক্ষ থেকে এটিকে বৈঠক বলা না হলেও প্রায় ৫৫ মিনিটের এই নাশতায় বিরোধপূর্ণ দুই নেতার মধ্যে দলের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। তারা দলকে একসঙ্গে চালিয়ে নেওয়ার বিষয়ে একমত হন।
গত রোববার দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটে থাইল্যান্ডের বামরুনগ্রাদ হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা শেষে দেশে ফেরেন রওশন এরশাদ। দেশে ফিরে তিনি রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনে অবস্থান করছেন।
জাতীয় পার্টিতে ভাবি-দেবরের এই দ্বন্দ্বের সূত্রপাত হয় থাইল্যান্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেখান থেকে রওশনের পাঠানো এক চিঠিকে কেন্দ্র করে। ৩১ অক্টোবরের ওই চিঠিতে হঠাৎ করে তিনি ২৬ নভেম্বর দলের সম্মেলনের ডাক দেন। পরে অবশ্য তা স্থগিত করা হয়।
জি এম কাদের ও তার অনুসারীরা রওশনের এই ঘোষণার তীব্র প্রতিবাদ জানান। তারা বলেন, দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী রওশন এমনটা করতে পারেন না।
এর পাল্টা হিসেবে রওশনকে সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার পদ থেকে সরিয়ে জি এম কাদেরকে সেই পদে বসাতে স্পিকারকে চিঠি দেয় জাতীয় পার্টির সংসদীয় দল। এ বিষয়ে এখনও স্পিকারের দপ্তর থেকে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।
এরপর দলটির সাবেক এমপি জিয়াউল হক মৃধার দায়ের করা একটি মামলায় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে আদালত। বাদীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩১ অক্টোবর ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ আদালত জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে জি এম কাদেরের দলীয় যাবতীয় কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞার ওই অস্থায়ী আদেশ দেয়। তবে মঙ্গলবার এ নিষেধাজ্ঞার ওপর স্থগিতাদেশ দেয় হাইকোর্ট। বিচারপতি শেখ আবদুল আউয়ালের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেয়।
মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনে রওশন এরশাদের সঙ্গে দেখা করতে যান জি এম কাদের। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জাতীয় পার্টির সভাপতি আবু হোসেন বাবলা, দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তর জাতীয় পার্টির সভাপতি শফিকুল ইসলাম সেন্টু, রওশন এরশাদের ছেলে সাদ এরশাদ।
শফিকুল ইসলাম সেন্টু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদের দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদের সঙ্গে এক টেবিলে নাশতা করেছেন। এ সময় তাদের মধ্যে প্রায় ৫৫ মিনিটের বৈঠক হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘অত্যন্ত সুন্দর পরিবেশে আলোচনা হয়েছে। এরপর আশা করা যায়, দলের মধ্যে সকল ভুল-বোঝাবুঝির অবসান হয়ে যাবে। দল এখন চাঙা হবে বলেই আমরা মনে করি।
‘দলের চেয়ারম্যান পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গেও কুশলবিনিময় করেছেন। আমরা দলের নেতা-কর্মীরাও চেয়েছিলাম দলের এই ভুল-বোঝাবুঝির অবসান হোক।’
কী বিষয়ে আলোচনা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘শীর্ষ দুই নেতা দলের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন। এ ছাড়া জি এম কাদের রওশন এরশাদের শারীরিক বিষয়ে জানতে চেয়েছেন। এ বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।’
গত বছরের ৫ নভেম্বর রওশন এরশাদকে ঢাকার সিএমএইচ হাসপাতাল থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে ব্যাংকক নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
চলতি বছরের ২৭ জুন দেশে ফিরে জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনে যোগ দেন রওশন। ৫ জুলাই ফের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। ৩০ অক্টোবর রওশনের দেশে ফেরার কথা জানিয়েছেন দলে তার অনুসারীরা। কিন্তু সে সময় তিনি ফেরেননি। তবে ২৭ নভেম্বর তিনি দেশে ফিরেই জি এম কাদেরের সঙ্গে বৈঠক করে দলের দ্বন্দ্ব দূর করার ঘোষণা দেন। সেদিন তিনি বলেন, ‘আগেও বলেছি, আজও বলছি, আমি সব সময়ই জাতীয় পার্টির ঐক্য চাই। পার্টিকে বিভক্ত করার প্রশ্নই ওঠে না।’