আগামী দিনে দেশে খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের সব ধরনের জমিতে ফসল আবাদ করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি পতিত জমিতেও ফসল চাষাবাদ করার নির্দেশনা দিলেও দিনাজপুরে নদী খননের নামে বিআইডাব্লিউটিএ কৃষকদের আবাদ করা আগাম জাতের আলুর ক্ষেত নষ্ট করছে। এমনকি ব্যক্তিগত আলুর ক্ষেতও এস্কাভেটর মেশিন দিয়ে খুঁড়ে দিয়েছে সরকারি এ প্রতিষ্ঠান।
এভাবে কয়েক একর জমির আলুর ক্ষেত নষ্ট করে দিয়েছে বিআইডাব্লিউটিএ। ফসল ওঠা পর্যন্ত কৃষকরা সময় চাইলেও তাদের কথা শোনা হচ্ছে না। সম্প্রতি দিনাজপুর সদর উপজেলার আউলিয়াপুর ইউনিয়নের মহব্বতপুর, উলিপুর ও খাড়িপাড়ার শতাধিক ভুক্তভোগী কৃষক দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক বরাবর একটি অভিযোগ দিয়েছেন।
চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি দিনাজপুর শহরের পাশ দিয়ে প্রবাহিত পুনর্ভবা নদীর খনন কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। নদীটির খনন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে বিআইডাব্লিউটিএ।
নদীর ৩৩ কিলোমিটার খনন করতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১১৩ কোটি ৯৫ লাখ ৬৯ হাজার ৫৬০ টাকা। পৃথক পাঁচটি প্যাকেজে পাঁচটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করা হয়েছে।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে নদীর পাশে জমিতে বিভিন্ন চাষাবাদ করে আসছি। সেই আলোকে আমরা আগাম জাতের আলু রোপণ করেছি। আর কয়েক দিন পরই আলু বাজারে ওঠানোর মতো অবস্থায় চলে আসবে। কিন্তু এরই মধ্যে জানতে পারলাম যে বিআইডাব্লিউটিএ কর্তৃক পুনর্ভবা নদী খনন শুরু হবে। ইতোমধ্যে তারা কয়েকজন কৃষকের আলুর ক্ষেত খুঁড়ে দিয়েছে। এভাবে খুঁড়তে থাকলে ৫০০ বিঘা জমির আলু নষ্ট হবে। তাই আমাদের এক মাসের সময় দেয়া হোক। নইলে আমাদের অপূরণীয় ক্ষতি হবে।’
উলিপুর গ্রামের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে পুনর্ভবা নদী। নদীটির পাশেই চরে মাথা উঁচু করে দাঁড়াচ্ছে সারি সারি নতুন আলুর গাছ। আর কয়েক দিন পরে এই ক্ষেতে আলু বাজারে উঠতে শুরু করবে। কিন্তু কৃষকের হাসি বিষাদে রূপ নিতে শুরু করেছে বিআইডাব্লিউটিএর কারণে। আগাম জাতের আলুর ক্ষেত নষ্ট করে নদী খনন কার্যক্রম পরিচালনা করছে তারা। অনেক কৃষকের আলুর ক্ষেত খুঁড়ে মাটি সরিয়ে দেয়া হচ্ছে। এতে করে কৃষকরা ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছে। বারবার সময় চেয়েও পাচ্ছে না কৃষকরা। এমনকি ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিকে নদীর জমি হিসেবে চিহ্নিত করে খুঁড়ে দেয়া হচ্ছে।
বিআইডাব্লিউটিএ এমন কার্যক্রমের ফলে অসহায় হয়ে পড়েছে ওই গ্রামের বহু কৃষক। নদী খনন কার্যক্রম চলমান থাকলে প্রায় ১ কোটি টাকার আলুর ফলন নষ্ট হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন কৃষকরা।
কিষানি নুর বানু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই জমি আমাদের। আমরা একজনকে বর্গা দিছি। কিন্তু বিআইডাব্লিউটিএ সরকারের জমি বলে খুঁড়ে দিছে। এখন তো ওই লোকের অনেক ক্ষতি হলো। আলুর গাছ খুঁড়ে নষ্ট করে দেয়া হলো।’
কৃষক আব্দুল জলিল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যদি এই জমিগুলো সরকারের হয়, তাহলে তো আমাদের মাইকিং করে জানাতে পারত। কিন্তু এখন আলুর ক্ষেত নষ্ট করে দেয়া হচ্ছে। এখানে এক বিঘা জমিতে ৪০ মণ আলু পাওয়া যায়। আমরা ঋণ ও ধারদেনা করে এই আলুর চাষাবাদ করতেছি।
‘নদী খনন হলে ৫০০ থেকে ৭০০ একর জমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ইতিমধ্যে আমার জমির পাশেই এক একর জমির ফসল নষ্ট করে দিয়েছে। আমরা তো এই জমি খেয়ে ফেলতেছি না। আমরা তো খাদ্য উৎপাদন করতেছি। তাই আমরা তাদের কাছে এক মাসের সময় চাচ্ছি।’
কৃষক আরিফ আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই জমি আমার রেকর্ডভুক্ত সম্পত্তি। অথচ এখন নদী খনন করতে এসে তারা সরকারের জমি বলে দাবি করতেছে। এখানে জমি বর্গা দিয়েছি। বর্গা চাষিদের ফসল নষ্ট করে দিল। পাশাপাশি আমার জমি খুঁড়ে শেষ করে দিল। জমির সব ধরনের কাগজপত্র আমার কাছে আছে। কিন্তু তাদের কাছে কাগজপত্র দেখতে চাইলে তারা কাগজপত্র দেখাতে পারছে না।’
তরুণ উদ্যোক্তা মোসাদ্দেক হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই জমিগুলোর আলু আগামী ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যেই উঠতে শুরু করবে। জমি খুঁড়ে ফেলার ফলে কৃষকদের অনেক ক্ষতি হচ্ছে। খনন কার্যক্রম অব্যাহত থাকলে এই এলাকার প্রায় ১ কোটি টাকার আলু নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাই কৃষক ও জাতির স্বার্থে খনন কার্যক্রমটি ২০ দিন অথবা এক মাস বন্ধ রাখার জন্য আমি সংশ্লিষ্ট দপ্তরের প্রতি অনুরোধ রাখছি।’
এ ব্যাপারে দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক খালেদ মোহাম্মদ জাকীকে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। এমনকি খুদে বার্তা পাঠানো হলেও তার কোনো জবাব দেননি।