বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

খেজুরের রস: গাছ আছে, গাছি নেই

  •    
  • ২৯ নভেম্বর, ২০২২ ০৮:৩৪

মাগুরা সদরের বার্লো বাজার থেকে শুরু করে ছোটফালিয়া ও ডেফুলিয়ায় মোট খেজুরগাছ রয়েছে ৫০০-এর ওপরে। গাছের মালিকরা বলছেন, চলতি মৌসুমে গাছি সংকটে সব গাছ কাটা যাবে না। ফলে খেজুর রসের জোগান অর্ধেকে নেমে আসবে এ বছর।

শীত এবার যেন আগেভাগেই নেমে গেছে মাগুরায়। শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে খেজুরগাছ ‘কাটার’ও ধুম পড়েছে। শীত যত বাড়ছে, ততটাই খেজুরগাছ বাছাইয়ের কাজ শুরু হয়েছে গ্রামে-গ্রামে। এখন গ্রামের মাঠে গেলে শোনা যায় খেজুরগাছ বাছাইয়ের শব্দ। তবে খেজুরগাছ কেটে রস সংগ্রহে গাছির অভাব দেখা দিয়েছে। সংকট রয়েছে নতুন গাছি তৈরিতেও।

মাগুরা সদরের পাটকেলবাড়িয়া গ্রাম। বার্লো বাজার থেকে শুরু করে ছোটফালিয়া, ডেফুলিয়ায় মোট খেজুরগাছ রয়েছে ৫০০-এর ওপরে। এখানকার গাছিরা জানান, এই সংখ্যা আগে ছিল হাজারখানেক। বসতভিটা বাড়ায় অর্ধেকেরও বেশি গাছ কাটা পড়েছে। তবে যা রয়েছে, তা সম্পূর্ণ কাটা সম্ভব নয়। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, গাছ কাটতে হয় কার্তিকের শুরু থেকে।

খেজুরগাছ ‘কাটা’ বলতে বোঝায় গাছকে রস সংগ্রহের উপযোগী করে তোলা ও রস সংগ্রহ করা।

গাছের মালিকরা বলছেন, চলতি মৌসুমে গাছি সংকটে সব গাছ কাটা যাবে না। ফলে খেজুর রসের জোগান অর্ধেকে নেমে আসবে এ বছর।

পাটকেলবাড়িয়ায় গাছি আমির আলীর খেজুরগাছ কাটছেন ৬০ বছর ধরে। বয়স ৭০-এর উপরে হলেও এ বছর তার এলাকায় গাছ কেটেছেন ৫০টির বেশি। বৃহস্পতিবার সকালে তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘একটা সময় আমাগের এলাকায় গাছ কাটতাম উৎসব করে। আমি সহ ছিল মালেক, আফসার, রমিজ মিয়াসহ আরো অনেকে।

‘তবে সময়ের সঙ্গে কেউ পেশা বদলাইছে, কেউ বা বেঁচে নেই। ফলে পুরান এই পেশা আর নতুন কাউকে ধরতে দেখিনি এ জন্য গাছ কাটার লোক নেই। রসও এ জন্য আগের মতো হবে না।’

রাঘবাদউড় ইউনিয়নের গাছি সুরুজ আলী বলেন, ‘মানুষ খেজুর রস খেতে চায়। বিশেষ করে এখনকার প্রজন্ম তো এই রস চেনেই না। তাই বাবা-মার থেকে শুনে তারা গ্রামে আসে। কিন্তু সবাইকে রস দেয়া সম্ভব নয়। কারণ এলাকার বেশির ভাগ গাছ কাটা পড়ছে না গাছির অভাবে।’

হাজিপুর, হাজরাপুর, আলমখালি এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, খেজুরগাছ অর্ধেকের মতো কেটে রেখেছে গাছিরা। কিছু গাছে হাঁড়ি পাতা রয়েছে। তবে এই রস খাওয়া যাবে না বলে জানান গাছি আমির আলি। তিনি বলেন, ‘শীত আরও ঘন হলেই কেবল আসল রস বের হবে। এখন যা রস পাওয়া যায়, এটা খাওয়ার উপযোগী না হলেও এটা দিয়ে পাটালি গুড় বানানো হয়। তবে তা খুব ভালো স্বাদের হয় না।’

খেজুর রস খান প্রতি বছর মুক্তিযোদ্ধা আকরাম হোসেন। তিনি বলেন, ‘খেজুর রস গত কয়েক বছর গ্রামে গিয়ে খাই। তবে স্বাদ আগের মতো নেই। এবারও আশা করছি গ্রামে গিয়ে রস খাব এবং বাড়ির সবার জন্য নিয়ে আসব।’

তিনি জানান, চাহিদা বেশি, কিন্তু রস কম পওয়া যায়। গত কয়েক বছর ধরে তিনি এক লিটার রস কেনেন ১২০ টাকা করে। একটা সময় কিনতেন ৭০ টাকায়। তিনি মনে করেন, গাছির অভাবে ধীরে ধীরে এটা হারিয়ে যাবে।

মাগুরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সুফী মোহাম্মদ রফিকুজজামান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জেলায় কতটি খেজুরগাছ আছে, বলা মুশকিল। এমনকি গাছিদের সংখ্যাও তেমন জানার সুয়োগ নেই। তবে যারা গাছি, তারা মৌসুমি পেশা হিসেবে এটাকে নিয়েছেন। এ জন্য সঠিক পেশার পরিমাপ করা কঠিন। তবে খেজুর রস কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসে ভালো স্বাদের হয়। মাগুরার প্রত্যন্ত এলাকায় এখন দেখেছি গাছ কেটে মাটির হাঁড়ি ঝোলানো রয়েছে। আশা করি, শহরবাসী এবার ভালো রস খেতে পারবেন।’

এ বিভাগের আরো খবর