খুলনার দাকোপ ও বটিয়াঘাটা উপজেলাকে তরমুজ চাষের জন্য কৃষি অর্থনৈতিক জোন ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন কৃষকরা।
সোমবার বিকেল ৫টায় খুলনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. সাদিকুর রহমান খানের কাছে এক স্মারকলিপিতে তারা এ দাবি জানান।
লোকজ মৈত্রী কৃষক ফেডারেশনের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ মণ্ডল প্রায় ২০ জন কৃষককে সঙ্গে নিয়ে এ স্মারকলিপি জমা দেন।
স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, খুলনার দাকোপ ও বটিয়াঘাটা উপজেলায় গত বছর প্রায় ১১ হাজার হেক্টর জমিতে কৃষকরা তরমুজের চাষ করেছেন। তবে ৮০ শতাংশ কৃষকের ফলন ভালো হলেও উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় এবং বাজারে ভালো দাম না পাওয়ায় তারা মারাত্মকভাবে ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছেন।
বৈরী আবহাওয়ার কারণে দেরিতে বীজ রোপণ, বীজের দাম বেশি, সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়েও বেশি দামে সার বিক্রি, ছত্রাকনাশক ও হরমোন জাতীয় ওষুধের লাগামহীন মূল্য, মাটির গুণাগুণ সম্পর্কে ধারণা না থাকা, সেচের পানির অপ্রতুলতা, পরিবহন ও বিপণন ব্যবস্থায় মধ্যস্বত্বভোগীদের নিয়ন্ত্রণ থাকায় কৃষকরা এমন ক্ষতিতে পড়েন।
এতে সর্বস্বান্ত হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন অনেক কৃষক। তরমুজের সঠিক দাম পেলে এই অঞ্চলে গ্রামীণ অর্থনীতিতে নতুন করে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা যোগ হতে পারত।
এ অবস্থায় একটি উদীয়মান কৃষি অর্থনৈতিক সেক্টর এখন অপমৃত্যুর পথে। তরমুজ চাষের শুরু থেকে বাজারজাত করা পর্যন্ত পদে পদে কৃষকরা বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন।
তরমুজ চাষে আরও নানা সমস্যার কথা উল্লেখ করা হয়েছে স্মারকলিপিতে। বলা হয়েছে, জমির মালিকরা জমির হারি (ইজারা মূল্য) কয়েকগুণ বাড়িয়েছেন। গত বছর যে জমির হারি ১ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকার ভেতরে ছিল, তা এবার বেড়ে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকায় উন্নীত হয়েছে।
গত বছর ৩৩ শতকের ১ বিঘা জমি চাষ করতে খরচ হয়েছিল ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা। কিন্তু ডিজেলের দাম প্রতি লিটার ১৫ টাকা বেড়ে যাওয়ায় খরচ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২০০ থেকে আড়াই হাজার টাকা। গত বছর সার, বীজ, কীটনাশকের দাম গায়ে উল্লেখিত খুচরো মূল্যের চেয়ে বেশি নেয়া হয়েছে।
এ ছাড়া কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি, দালালচক্রের দৌরাত্ম্য, পরিবহন সমস্যার কথাও তুলে ধরা হয়।
এসব সমস্যার সমাধানে কৃষকরা কয়েকটি সুপারিশ করেছেন। এর মধ্যে প্রথমটি হলো খুলনার দাকোপ ও বটিয়াঘাটা উপজেলাকে তরমুজ চাষের জন্য কৃষি অর্থনৈতিক জোন ঘোষণা করতে হবে। এ ছাড়া কীটনাশক কম লাগে এমন উচ্চ ফলনশীল ইনব্রিড বীজ উদ্ভাবন করে বাজারে বীজের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করতে হবে। নদী-খাল লিজ/অবুমক্ত ও খনন করে চাষের জন্য সেচের ব্যবস্থা করতে হবে।
এ ছাড়া প্রকৃত তজমুজ চাষিদের তালিকা করে প্রশিক্ষণ দিতে হবে, বিনা সুদে ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে। স্থানীয় পর্যায়ে সরকারি ব্যবস্থাপনায় তরমুজ বিক্রির জন্য আড়ত স্থাপনসহ অন্যান্য বিষয়েরও তদারকি করতে হবে।