বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

কর্মকর্তাদের অনিয়ম, দুর্নীতি ধামাচাপা দেন ডিজিএম

  •    
  • ২৮ নভেম্বর, ২০২২ ১৯:৪০

অভিযোগ অস্বীকার করে ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার জাহাঙ্গীর আলম সিদ্দিকী বলেন, ‘প্রতিটি বিষয়েই আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করেই কাজ করছি। কোনো কিছুই গোপন বা ধামাচাপা দেয়া হয়নি।’

রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের কিশোরগঞ্জের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) মো. জাহাঙ্গীর আলম সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের প্রশ্রয় দেয়াসহ ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।

তার প্রশ্রয়েই জেলার বিভিন্ন উপজেলা শাখায় কর্মরত দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে তাদেরকে দেয়া হয়েছে পছন্দের শাখায় পোস্টিং।

অন্যদিকে পছন্দমতো না হলে কোনো অভিযোগ না থাকা সত্ত্বেও অনেক কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে দূর-দূরান্তে।

পরিচয় ও কর্মস্থল গোপন রাখার শর্তে বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা এসব তথ্য জানান।

মনোহারী পণ্য, কাগজ, টোনার ক্রয় এবং কোনো প্রকার যাচাই-বাছাই ছাড়াই সার্কুলার অমান্য করে ভুয়া ওভারটাইম বিল পাস করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগও তারা করেছেন জাহাঙ্গীর আলম সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে। তার অনিয়ম, দুর্নীতির বেশকিছু প্রমাণপত্র ইতোমধ্যেই নিউজবাংলার হাতে এসেছে।

সূত্র জানায়, সোনালী ব্যাংকের কটিয়াদী বাজার শাখায় সিনিয়র অফিসার পদে কর্মরত আছেন মো. আতিকুর রহমান হালিম। এর আগে তিনি নিজ উপজেলা কুলিয়ারচরে ছিলেন। ২০২১ সালের ১০ আগস্ট তিনি কুলিয়ারচর উপজেলা সমাজসেবা অফিসের সরকারি বয়স্ক ভাতার ১২ লাখ ৩৩ হাজার ৮৮৬ টাকা ওই অফিসের সহকারী কাম-কম্পিউটার মুত্রাক্ষরিক তুহিন মিয়ার অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করেন। পরে বিভিন্ন তারিখে সেই টাকা উত্তোলন করে তারা মিলেমিশে আত্মসাৎ করেন। বিষয়টি জানাজানি হলে একই বছরের ২১ অক্টোবর সেই টাকা আবারও ব্যাংকে জমা রাখেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আতিকুর রহমান হালিম ও তুহিন মিয়া ছোটবেলা থেকেই একসঙ্গে বেড়ে ওঠেছেন। তাদের বাড়ি একই ইউনিয়নে।

এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে তুহিন মিয়া জানান, লোন ওঠানোর জন্য সোনালী ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট করেছিলেন তিনি। কিন্তু চেকবই ছিল হালিমের কাছেই। আর এই সুযোগে সে টাকা তুলে খরচ করেছে। পরে বিষয়টি জানতে পেরে হালিমকে চাপ দিলে তিনি আবারও সেই টাকা জমা দেন।

এ বিষয়ে আতিকুর রহমান হালিমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে টাকা স্থানান্তরের বিষয়টি তিনি স্বীকার করেন। বলেন, ‘ভুলবশত এমনটা হয়েছিল। পরে সেই টাকা আবার জমা দিয়েছি। আমি ক্ষমাও চেয়েছি।’

টাকা স্থানান্তরের বিষয়টি না হয় ভুলবশত কিন্তু উত্তোলনের বিষয়টি ভুলবশত হয় কীভাবে- এমন প্রশ্নে তিনি কোনো সদুত্তর দেননি।

এ বিষয়টিও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে ধামাচাপা দেন ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার। এমনকি নিকটবর্তী কটিয়াদী শাখায় বদলি করে হালিমকে লঘু পাপে গুরুদণ্ড দেন তিনি। কারণ হালিম তার পছন্দের লোক।

ব্যাংক বদলি বিধান অনুযায়ী, প্রধান কার্যালয় কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত বা পদোন্নতিপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা/কর্মচারীর কর্মস্থলে এক বছর অতিক্রম না হলে তাকে বদলি করতে হলে প্রধান কার্যালয়ের অনুমতি নিতে হয়।

কিন্তু ওই নিয়মের তোয়াক্কা না করেই সিনিয়র অফিসার স্বপ্না বর্মন, ফেরদৌসুল হক, মাহফুজুর রহমান, আব্দুস সাত্তার, ঝুটন বর্মন, খাইরুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজনকে তাদের পূর্ববর্তী শাখায় আবারও বদলি করেন ডিজিএম।

ওভারটাইম শুধু কর্মচারীদের জন্য বরাদ্দ থাকলেও সে নিয়মেও বিপরীত চিত্র দেখা গেছে এক কর্মকর্তার ক্ষেত্রে। ডিজিএমের কাছের লোক হিসেবে পরিচিত সিনিয়র অফিসার মাহফুজুর রহমান গোপনে ভুয়া ওয়ারটাইম বিল নেয়ার পর তার বিরুদ্ধে সোনালী ব্যাংকের ন্যায়পালে অভিযোগ উঠে। সে অভিযোগের তদন্তের পর প্রায় অর্ধ-লক্ষাধিক টাকা ফেরতও দেন তিনি। তার বিরুদ্ধেও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। তিনি এখনও পর্যন্ত প্রিন্সিপাল অফিসে কর্মরত আছেন বহাল তবিয়তে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সোনালী ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার তার পছন্দের কর্মচারী/কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে সুষ্ঠু তদন্ত না করে ধামাচাপা দেন। দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করে অভিযোগকারীদের ম্যানেজ করার অপচেষ্টা চালান। এ তথ্যেরও সত্যতা মিলেছে কটিয়াদীর একটি বিষয়ে।

কিছুদিন আগে সোনালী ব্যাংকের কটিয়াদী শাখার ঋণ কর্মকর্তা মো. সজিব মিয়ার বিরুদ্ধে শিক্ষকদের সঙ্গে অসদাচরণ ও ঘুষ নেয়ার অভিযোগ ওঠে। গত ২৩ অক্টোবর এ বিষয়ে সোনালী ব্যাংক প্রিন্সিপাল শাখার ডিজিএম জাহাঙ্গীর আলম সিদ্দিকীর কাছে লিখিত অভিযোগ দেন স্থানীয় পাইকসা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মাহমুদ কামাল।

বিভিন্ন ঋণের ক্ষেত্রে দ্রুত পাইয়ে দেয়ার নাম করে ২ হাজার থেকে শুরু করে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ আদায় করতেন সজিব মিয়া। তার বিরুদ্ধে ঘুষ দাবির অভিযোগ করেছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষক ও তাদের পরিবার।

সেসব অভিযোগের তদন্ত না করে অভিযোগকারীকে ফোন করে ভীতি প্রদর্শন করেন ডিজিএম। এমন একটি অডিও রেকর্ডও এ প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।

সোনালী ব্যাংকের আরেক কর্মকর্তা জানান, ডিজিএমের সবচেয়ে পছন্দের কর্মকর্তা সাবেক যুগ্ম জিম্মাদার মো. সোলায়মান ও যুগ্ম জিম্মাদার শওকতুল ইসলাম। তাদের মধ্যে শওকতুল ইসলাম কিশোরগঞ্জ শাখায় এবং সোলায়মান প্রিন্সিপাল অফিসে প্রাইজ পোস্টিং হিসেবে কর্মরত আছেন।

২০১৯-২০২০ সালের সব মনোহারী দ্রব্য, কাগজ, টোনারসহ কম্পিউটার সামগ্রী কেনার দায়িত্বে থাকেন এ দুজন। তখন জাহাঙ্গীর আলম ছিলেন এজিএম। তারা সেগুলো কিশোরগঞ্জ থেকে না কিনে পাকুন্দিয়া থেকে কিনেছেন। মূলত সেখান থেকে ফাঁকা ক্যাশমেমো এনে ১৮০ টাকার কাগজ ৩০০ টাকা, ৫০০ টাকা মূল্যের টোনার ৯০০, ১১০০ এবং ১৫০০ টাকা বিল করে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নেন।

এ বিষয়ে খোঁজ নিতে এই প্রতিবেদক যোগাযোগ করে পাকুন্দিয়ার মনির কম্পিউটারের স্বত্বাধিকারী মনির হোসেনের সঙ্গে। তিনি ফাঁকা ক্যাশ মেমো দেয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন।

ব্যাংকের ব্যয় নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা না মেনে তিনি বিভিন্ন শাখা পরিদর্শনে সহযোগী হিসেবে তার পছন্দের কর্মকর্তা সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার সুলাইমানকে নিয়ে যাচ্ছেন। একজন অফিসার যেখানে অবস্থানভাতা নেন ৫০০ টাকা, সেখানে সুলাইমানকে দিতে হচ্ছে ১০০০ টাকা। এমন স্বজনপ্রীতিতে ব্যাংকের ব্যায় বাড়ছে।

এ বিষয়ে জানতে ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার জাহাঙ্গীর আলম সিদ্দিকীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি দাবি করেন, ইতোপূর্বে যাদের বিরুদ্ধেই কোনো না কোনো অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আতিকুর রহমান হালিমকে এই স্টেশন থেকে বদলি করা হয়েছে। বাকিদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

তিনি বলেন, ‘এই ব্যাংকেরই একটা কুচক্রীমহল বিভিন্ন সময়ে ছদ্মনামে অভিযোগ করে প্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষুন্ন করছে।’

নিজের বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘প্রতিটি বিষয়েই আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করেই কাজ করছি। কোনো কিছুই গোপন বা ধামাচাপা দেয়া হয়নি।’

এ বিভাগের আরো খবর