‘২৫ হাজার টাকার জন্য সাধারণ কৃষকদের কোমরে দড়ি বেঁধে টেনে নিয়ে যেতে পারেন, অথচ যাদের কাছে লক্ষ-কোটি টাকা পাওনা, তাদের কিছু হয় না’- ব্যাংককে উদ্দেশ করে বলেছেন চেম্বার জজ আদালতের বিচারক বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম।
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান চেক ডিজঅনার মামলা করতে পারবে না- হাইকোর্টের এমন রায় স্থগিত চেয়ে করা আবেদনের শুনানির সময় সোমবার এ মন্তব্য করে আদালত।
হাইকোর্ট গত ২৩ নভেম্বর রায়টি দেয়। এতে বলা হয়, ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে চেক ডিজঅনার মামলা করতে পারবে না কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান। তবে অর্থঋণ আদালত আইন, ২০০৩-এর বিধান অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট আদালতে মামলা করা যাবে।
এর পাঁচ দিনের মাথায় রায়টি স্থগিত চেয়ে চেম্বার জজ আদালতে আবেদন করে ব্র্যাক ব্যাংক। এর ওপর শুনানি হয় সোমবার।
আদালতে ব্র্যাক ব্যাংকের পক্ষে শুনানি করেন এ এম আমিন উদ্দিন। বাদীপক্ষে ছিলেন আইনজীবী আব্দুল্লা আল বাকী।
ব্র্যাক ব্যাংকের আইনজীবী এম আমিন উদ্দিন আদালতকে বলেন, ‘এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় বিষয়। হাইকোর্ট রায়ে বলেছেন, কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ব্যক্তির বিরুদ্ধে চেক ডিজঅনারের মামলা করতে পারবে না। নিম্ন আদালতে এ সংক্রান্ত বিচারাধীন সব মামলায় স্থগিতাদেশ দেয়া হয়েছে।’
এ সময় বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম বলেন, ‘পূর্ণাঙ্গ রায় না দেখে এ বিষয়ে আপাতত কিছু বলা যাবে না।’
বিচারক ব্র্যাক ব্যাংকের আইনজীবীকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আপনারা ২৫ হাজার টাকার জন্য সাধারণ কৃষকদের কোমরে দড়ি বেঁধে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন। অথচ যাদের কাছে লক্ষ-কোটি টাকা পাওনা, তাদের কিছু হয় না।’
ঋণ দেওয়ার সময় গ্রাহকের কাছ থেকে নেয়া ব্ল্যাংক চেকের বিষয়ে চেম্বার বিচারক বলেন, ‘এই চেকে কে স্বাক্ষর করে, কে টাকার অঙ্ক বসায়, কে কলাম পূরণ করে তার কোনো হদিস নেই। এই চেক নেয়া যাবে না বলে বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে, তার পরেও ব্যাংকগুলো কেন মানছে না?’
এ পর্যায়ে আইনজীবী আমিন উদ্দিন হাইকোর্টের রায়ে স্থগিতাদেশের আবেদন করেন। তিনি বলেন, ‘নইলে ঋণের টাকা আদায় করা যাবে না।’
তবে চেম্বার বিচারক আইনজীবীর কাছে এ সংক্রান্ত উদাহরণ দেখতে চাইলে তা দেখাতে ব্যর্থ হন ব্র্যাক ব্যাংকের আইনজীবী।
পরে চেম্বার জজ আদালত ১ ডিসেম্বর শুনানির তারিখ রেখে ব্র্যাক ব্যাংকের আবেদনটি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়ে দেয়।