সরকারের হত্যা ও নির্যাতনের জবাব জনগণ আন্দোলনেই দেবে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
পটুয়াখালী-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শাহজাহান খানের মৃত্যুর ঘটনায় এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি একথা বলেন। বরিশালে সমাবেশে যাওয়ার পথে হামলায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর ধানমণ্ডিতে ল্যাবএইড হাসপাতালে মারা যান তিনি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘চলমান আন্দোলনে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের অত্যাচার-নির্যাতনে ইতোমধ্যে আমাদের সাতজন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। দুইজন আওয়ামী লীগের নির্যাতনে প্রাণ হারিয়েছেন। তাদের নির্যাতনে আজ আমাদের একজন সাবেক সংসদ সদস্যের জীবন চলে গেল।
‘এই অত্যাচার-নির্যাতনের বিরুদ্ধে জনগণ জেগে উঠেছে। আমরা বিশ্বাস করি এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে শাহজাহান খানের এই মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে আমরা সক্ষম হবো। জনগণ এর উপযুক্ত জবাব দেবে।’
পটুয়াখালী থেকে ৪ নভেম্বর বরিশালে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে যাওয়ার পথে তেলিখালী এলাকা অতিক্রমকালে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হামলায় গুরুতর আহত হন সাবেক সাংসদ শাহজাহান খান। তাকে প্রথমে পটুয়াখালীর একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে ২২ নভেম্বর তাকে ঢাকায় এনে ল্যাবএইডে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় তিনি মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭১ বছর।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এটা কোনো স্বাভাবিক মৃত্যু নয়। তিনি বরিশালের বিভাগীয় সমাবেশে যাওয়ার পথে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হাতে আক্রান্ত হয়েছেন এবং তাকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করা হয়। সন্ত্রাসীদের হামলায় তার কিডনি ফেটে যায়। তার পুরো শরীরে বিষাক্ত রক্ত ছড়িয়ে পড়ে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘শাহজাহান খানের মৃত্যু দক্ষিণাঞ্চলে আমাদের জাতীয়তাবাদী রাজনীতিতে বিরাট শূন্যতা তৈরি করবে। আজীবন সংগ্রামী ও ত্যাগী এই রাজনীতিক এলাকার জনগণের কাছে একজন অভিভাবক হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
‘আমরা বিএনপির পক্ষ থেকে, চেয়ারপারসন দেশনেত্রী খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে তার রুহের মাগফিরাত কামনা করছি, গভীর শোক প্রকাশ করছি এবং তার পরিবারের প্রতি আমাদের সমবেদনা জানাচ্ছি।’
বিএনপি মহাসচিব ল্যাবএইড হাসপাতালে প্রয়াত শাহজাহান খানের মরদেহের সামনে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থেকে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এ সময় দলের কেন্দ্রীয় নেতা আমিরুজ্জামান শিমুল, আইনজীবী ফোরামের নুরুল ইসলাম জাহিদসহ পটুয়াখালীর নেতারা ছিলেন।
শাহজাহান খানের ছেলে শিপলু খান জানান, সকাল সাড়ে ১০টায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তার বাবা।
তিনি বলেন, ‘বিভাগীয় সমাবেশে যোগ দিতে ৪ নভেম্বর সন্ধ্যায় বাবা ও অন্যরা কয়েকটি মোটরসাইকেলযোগে পটুয়াখালী থেকে বরিশাল যাচ্ছিলেন। পটয়াখালী-বরিশাল মহাসড়কের গাবুয়া এলাকা অতিক্রমের সময় বাবার গাড়িতে ছাত্রলীগ-যুবলীগের সন্ত্রাসীরা অতর্কিতে হামলা চালায়। তারা বাবাকে লাঠি, রড ও লোহার পাইপ দিয়ে পিটিয়ে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় গুরুতর জখম করে।’
শাহজাহান খানের মৃত্যু খবর শোনার পর বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী হাসপাতালে ছুটে যান। তিনিও পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেন।
পরিবারের সদস্যরা জানান, সোমবার বাদ জোহর নয়াপল্টনে জানাজার পর মরদেহ সড়কপথে নিয়ে যাওয়া হবে পটুয়াখালীতে। সেখানে মঙ্গলবার সকাল ৯টায় জেলা কার্যালয়ের সামনে, ১১টায় দশমিনা উপজেলায়, বাদ জোহর গলাচিপা উপজেলায় এবং বিকেল ৩টায় চিকনিকান্দি ইউনিয়নে শেষ জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। পরে সেখানে মায়ের কবরে তাকে দাফন করা হবে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমর এক শোকবার্তায় শাহজাহান খানের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।