নৌযান শ্রমিকদের ন্যূনতম ২০ হাজার টাকা বেতনসহ ১০ দফা দাবিতে ডাকা ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিনেও স্থবির হয়ে আছে রাজধানী ঢাকার প্রধান নদীবন্দর সদরঘাট। বন্দরে কোনো লঞ্চ না থাকায় বিরাজ করছে শুনশান নিরবতা। ধর্মঘটের খবর জানা না থাকায় বিভিন্ন জায়গা থেকে কিছু যাত্রী এলেও ফটক থেকেই ফিরে যাচ্ছেন তারা।
সোমবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল ঘুরে দেখা যায়, ফাঁকা পড়ে আছে পন্টুন। শ্যামবাজার ঘাট ও বাবুবাজার ব্রিজের নিচে ভিড়িয়ে রাখা হয়েছে লঞ্চ। একদম ফাঁকা পড়ে আছে টার্মিনাল এলাকা, নেই নৌশ্রমিকদের উপস্থিতি।
বিভিন্ন জায়গা থেকে কিছু যাত্রী এলেও ধর্মঘটের খবর শুনে ফিরে যাচ্ছেন তারা। টার্মিনাল ফাঁকা পড়ে থাকলেও ফটকের বাইরে বেশ কিছু যাত্রীর ভিড় লক্ষ্য করা যায়। দক্ষিণাঞ্চলে নিয়ে যাওয়ার জন্য ঘাটে আনা বাণিজ্যিক পণ্য পড়ে আছে পন্টুনেই। কেউ কেউ পণ্য ফেরত নিয়ে যাচ্ছেন সড়কপথে কুরিয়ার করবেন বলে।
বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা যাত্রীদের অনেকে সদরঘাট থেকে বিকল্প বাহন হিসেবে পিকআপ ভ্যান ও মাইক্রোবাসে করে রওনা দিচ্ছেন গন্তব্যে। চাঁদপুরে মাইক্রোবাসে খরচ পড়ছে ৭০০ টাকা ও পিক-আপ ভ্যানে ৪০০ টাকা। লঞ্চ বন্ধ থাকায় অনেকেই যাত্রা বাতিল করে ফিরে যাচ্ছেন। বরিশালে যাওয়ার উদ্দেশ্যে আসা যাত্রীরা যাত্রাবাড়ীর দিকে ফিরে যাচ্ছেন বাসে যাওয়ার উদ্দেশ্যে।
মিরপুর-১০ থেকে আসা আব্দুল হক বলেন, ‘চাঁদপুর যাওয়ার জন্য এসেছিলাম। ধর্মঘটের বিষয়ে জানতাম না। জ্যাম ঠেলে সদরঘাটে এসে শুনি ধর্মঘট চলছে। এখন বাসে যাবো ভাবছি।’
বাড্ডা থেকে দুই সন্তান ও অসুস্থ স্বামী সাথে নিয়ে আসা স্বর্ণা আক্তার বলেন, ‘আমার স্বামী অসুস্থ থাকায় বাসে চলাচল করতে পারে না। সে জন্য বরিশালে লঞ্চে যাওয়ার জন্য এসেছিলাম। এসে শুনি লঞ্চ বন্ধ। এখন বাসে যাওয়া ছাড়া আর উপায় দেখছি না।’
টঙ্গী থেকে ভোলা যাওয়ার উদ্দেশ্যে মালামালসহ সদরঘাটে এসেছেন ব্যবসায়ী আমজাদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘ব্যবসার কারণে আমি নিয়মিতই লঞ্চে যাতায়াত করি। পরশু দিনও ভোলা থেকে ঢাকায় এসেছি মালামাল কেনার জন্য। এখন মালামাল নিয়ে ঘাটে এসে শুনি লঞ্চ বন্ধ। অনেকটা বিপদে পড়ে গেছি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নৌযান শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদের সদস্য আতিকুল ইসলাম টিটু বলেন, ‘দ্বিতীয় দিনের মতো শতভাগ ধর্মঘট চলছে। যতক্ষণ পর্যন্ত শ্রমিকদের দাবিদাওয়া পূরণ না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তারা ধর্মঘট চালিয়ে যাবে। আমরা আশা করছি অতি দ্রুতই উভয় পক্ষ সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে একটা ফয়সালায় চলে আসবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দাবিগুলোর মধ্যে মজুরির বিষয়গুলো শ্রমমন্ত্রণালয়, কিছু বিষয় নৌমন্ত্রণালয় এবং ডাকাতি ও চাঁদাবাজির বিষয়গুলো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জানিয়েছি। আর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ভারতীয় নাগরিকদের ল্যান্ডিং পাশের বিষয়টি জানিয়েছি।'
এ বিষয়ে জানতে চাইলে লঞ্চ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন,‘আমরা শ্রমিকদের সাথে একটা মিটিংয়ে বসেছি। তাদের সাথে আলোচনা করে সমাধানের চেষ্টা চলছে।'
নৌ শ্রমিকদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে নৌযান শ্রমিকদের সর্বনিম্ন মজুরি ২০ হাজার টাকা নির্ধারণ, ভারতগামী শ্রমিকদের ল্যান্ডিং পাস দেয়া, বাল্কহেডের রাত্রীকালীন চলাচলের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা, বাংলাদেশের বন্দরগুলো থেকে পণ্যপরিবহন নীতিমালা শতভাগ কার্যকর করা, চট্টগ্রাম বন্দরে প্রোতাশ্রয় নির্মাণ ও চরপাড়া ঘাটের ইজারা বাতিল করা। এছাড়া চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পাইপলাইনে জ্বালানি তেল সরবরাহের চলমান কার্যক্রম বন্ধ করার দাবি জানিয়েছেন শ্রমিকরা। কর্মস্থলে দুর্ঘটনায় মৃত্যুজনিত ১০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ, কন্ট্রিবিউটরি প্রভিডেন্ট ফান্ড ও নাবিক কল্যাণ তহবিল গঠনেরও দাবি শ্রমিকদের।