বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই, তবুও চলছে ইটের ভাটা

  •    
  • ২৮ নভেম্বর, ২০২২ ০৯:৪৩

ফুলতলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া আফরিন বলেন, ‘পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না পাওয়া ভাটাগুলোকে আমরা জরিমানা করেছি। একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তারা ছাত্রপত্র জোগাড় করবে। না পারলে ভাটা লোকালয় থেকে সরিয়ে নেবে।’

খুলনা জেলা প্রশাসন থেকে লাইসেন্সপ্রাপ্ত ৯টি উপজেলায় ইটের ভাটা ১৫৩টি। তবে পরিবেশ অধিদপ্তরের খুলনা কার্যালয় থেকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে মাত্র ১০০টি ইটের ভাটাকে। বাকি ৫৩টি ছাড়পত্র না পেয়েও ইট তৈরি করে যাচ্ছে।

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, দাকোপ উপজেলায় একটি, বটিয়াঘাটায় চারটি, ফুলতলায় ১৩টি, দিঘলিয়ায় চারটি, রূপসায় ৬৮টি, তেরখাদায় ৭টি, কয়রায় তিনটি, ডুমুরিয়ায় ৪১টি ও পাইকগাছায় ১২টি ইটভাটা লাইসেন্সপ্রাপ্ত।

অন্যদিকে পরিবেশ অধিদপ্তরের তালিকা অনুযায়ী খুলনায় বৈধ ইটভাটা রূপসায় ৬৩টি, ডুমুরিয়ায় ২০টি, বটিয়াঘাটায় পাঁচটি, তেরখাদায় ৯টি ও দিঘলিয়ায় তিনটি। বাকিগুলোর ছাড়পত্র নেই।

ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইনের ৯ ধারায় বলা হয়েছে, ‘যেকোনো ব্যক্তি নির্ধারিত পদ্ধতি এবং নির্ধারিত দরখাস্ত-ফি, দলিলাদি ও তথ্যাদি প্রদানসাপেক্ষে ইট প্রস্তুতকরণের লাইসেন্সের জন্য ইটভাটা যে জেলায় অবস্থিত সেই জেলার জেলা প্রশাসক বা তৎকর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তার কাছে দরখাস্ত দাখিল করিতে পারিবেন। তবে শর্ত থাকে যে, পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের অধীন ইস্যুকৃত পরিবেশগত ছাড়পত্র ব্যতীত কোনো ব্যক্তি উক্তরূপ দরখাস্ত দাখিল করিতে পারিবেন না।’

পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, আইন অনুযায়ী আবাসিক, সংরক্ষিত বা বাণিজ্যিক এলাকা, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা বা উপজেলা সদর, সরকারি বা ব্যক্তিমালিকানাধীন বন, অভয়ারণ্য, বাগান বা জলাভূমি, কৃষিজমি, প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা, ডিগ্রেডেড এয়ার শেডে ইটের ভাটা স্থাপনের অনুমতি দেওয়া হয় না। এ ছাড়া সরকারি বনাঞ্চলের সীমারেখা থেকে ২ কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে ও বিশেষ কোনো স্থাপনা, রেলপথ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও ক্লিনিক, গবেষণা প্রতিষ্ঠান বা অনুরূপ কোনো স্থান বা প্রতিষ্ঠান থেকে কমপক্ষে এক কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে কোনো ইট ভাটার ছাড়পত্র দেয়া হয় না।

খুলনার ফুলতলা উপজেলায় ইটের ভাটাগুলো লোকালয়ের ভেতরে হওয়ায় সেখানে কোনো ভাটাকে ছাড়পত্র প্রদান করা হয়নি। তবে ওই ভাটার মালিকরা এসব আমলে না নিয়ে বছরের পর ধরে ভাটা পরিচালনা করছেন।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ফুলতলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া আফরিন বলেন, ‘পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না পাওয়া ভাটাগুলোকে আমরা জরিমানা করেছি। একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তারা ছাত্রপত্র জোগাড় করবেন। না পারলে ভাটা লোকালয় থেকে সরিয়ে নেবেন।’

অন্যদিকে নদীর জায়গা, কৃষিজমি বর্গা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাছে হওয়ায় ডুমুরিয়া উপজেলার ২১টি ইটের ভাটাকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়নি।

ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার শরীফ আসিফ রহমান বলেন, ‘নদীর জায়গা দখল করায় কয়েকটি ভাটার ছাড়পত্র নেই। আমি এখানে নতুন এসেছি। ইটের ভাটার বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলমান আছে। সব কিছুর কাগজপত্র দেখে অভিযান চালাতে সময় লাগবে।’

একইভাবে কয়রা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ৫০০ মিটারের মধ্যে ঘনবসতি এলাকায় রয়েছে কয়রার এবিএম নামের ভাটা। পাইকগাছায় কৃষি জমির মধ্যে এআরবি ব্রিকস, যমুনা ব্রিকস, এসকেবি ব্রিকসসহ ১২টি ভাটায় ইট পোড়ানো হচ্ছে, যাদের কোনো ছাড়পত্র নেই। এসব ভাটা থেকে নির্গত হচ্ছে পরিবেশগত দূষক, যা বায়ুমণ্ডলে মিশে স্বাস্থ্য, কৃষি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।

খুলনা অঞ্চলের নদ-নদী ও পরিবেশ নিয়ে ২৫ বছর ধরে গবেষণা করছেন গৌরাঙ্গ নন্দী।

তিনি বলেন, ‘ইটভাটা থেকে দূষিত গ্যাস ও তাপ আশপাশের জলাভূমি, জীবজন্তু, গাছপালা ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি করে থাকে। অথচ নিয়ম না মেনে পরিবেশ ছাড়পত্র না নিয়ে যেখানে-সেখানে ইটভাটা গড়ে তোলা হয়েছে এবং হচ্ছে। কৃষিজমি নষ্ট, পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ এমন প্রক্রিয়ায় ইটভাটাগুলোয় ইট তৈরি বন্ধ করতে হবে। আইনের তোয়াক্কা না করে অতিরিক্ত মাত্রায় কার্বন ও সালফার নিঃসরণ, বসতবাড়ি, কৃষিজমি, টিলাসংলগ্ন সমতলে ইটভাটা স্থাপনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি মাটির ইটের বিকল্প হিসেবে যেসব উপকরণ ও পদ্ধতি উদ্ভাবন করা হয়েছে, তার ব্যবহার বাড়াতে হবে।’

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক মো. ইকবাল হোসেন বলেন, ‘আইন মোতাবেক প্রতি তিন বছর পর পর জেলা প্রশাসন থেকে ইটভাটার লাইসেন্স নবায়ন করতে হয়। এ ছাড়া প্রতি বছর পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিতে হয়। যেগুলোকে ছাড়পত্র দেওয়া হয় না, তাদের এক বছর সময় দেওয়া হয় ভাটা সরিয়ে নেওয়ার জন্য। এর বাইরে যেসব ভাটা ছাড়পত্র ছাড়া চলছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর