বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

জীবনযুদ্ধে চাপা বিশ্বকাপের উন্মাদনা

  •    
  • ২৮ নভেম্বর, ২০২২ ০৯:৫৬

পাঁচগাছি ইউনিয়নের চর নওদাবশ গ্রামের শ্রমিক জব্বার মিয়া বলেন, ‘বিশ্বকাপ খায় না মাথায় দেয়? একবেলা কাম না করলে প্যাটত ভাত যায় না। তাই বিশ্বকাপ খেলা নিয়ে মাতামাতি করার সময় নেই হামার।’

কাতারে বিশ্ব ফুটবলের মহারণ নিয়ে সারা দেশ যখন কাঁপছে জ্বরে, তাদের তখন ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে দুই বেলা অন্ন জোগাড়ে। সে প্রয়োজনে কাকডাকা ভোর থেকে সন্ধ্যা নামা পর্যন্ত প্রায় বিরামহীন গতর খাটিয়ে যান তারা। বিশ্বকাপ তাদের কাছে কিছু ঘটনা মাত্র। এ নিয়ে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস কিংবা উন্মাদনার নেই সময়।

বলছি কুড়িগ্রামের চরাঞ্চলের নিম্ন আয়ের মানুষের কথা। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মতো এ জনপদে আনন্দের আতিশয্য নিয়ে আসতে পারেনি কাতার বিশ্বকাপ।

এ নিয়ে কথা হয় চরাঞ্চলের কয়েকজনের সঙ্গে। তাদের একজন সদর উপজেলার চরবেষ্টিত পাঁচগাছি ইউনিয়নের চর নওদাবশ গ্রামের শ্রমিক জব্বার মিয়া বলেন, ‘বিশ্বকাপ খায় না মাথায় দেয়? একবেলা কাম না করলে প্যাটত ভাত যায় না। তাই বিশ্বকাপ খেলা নিয়ে মাতামাতি করার সময় নেই হামার।’

একই এলাকার আবুল মিয়া বলেন, ‘হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে মজুরি নিয়ে বাজার করে ফিরতে রাত হয়ে যায়। এরপর খাওয়াদাওয়া শেষ করে ঘুমানোর সময় চিন্তা করতে হয় পরের দিনের খাবারের জন্য।

‘সে জায়গায় বিশ্বকাপ নিয়ে ভাববার সময় কই। বিশ্বকাপ মাতামাতি শহরেই আছে। হামার চর বা গ্রামগুলোতে নাই।’

যাত্রাপুর এলাকার ঘোড়ার গাড়িচালক মোখলেস বলেন, ‘বিশ্বকাপ খেলার কথা শুনে ছেলে জার্সি কিনতে চাইছিল। একটা জার্সির দাম দুই থেকে আড়াই শ টাকা। সারা দিনে আয় হয় ৪০০ থেকে ৮০০ টাকা।

‘তাই ৫০ টাকা দরের চাল, ৪০ টাকার ওপর সবজি কিনতে হয়। আবার ঘোড়ার খাবার আছে। জার্সি কেনার সামর্থ্য কই হামার।’

ঠেলাগাড়িচালক তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘হামরা ঠেলাগাড়ি চালিয়ে খাই। হামার সংসার চলে না অভাবের কারণে। এক দিন ইনকাম না করলে সংসার অচল হয়া যায়। বিশ্বকাপ নিয়ে আমোদ-ফুর্তি করার সময় নাই হামার।’

শহরের ডায়াবেটিস হাসপাতাল মোড় এলাকার শিশু আকাশ জানায়, সে ব্রাজিলের সাপোর্টার। দিনমজুর বাবা-মায়ের কাছে জার্সি চাইছিল। তাদের কাছে টাকা না থাকায় কিনে দেয়নি।

সে আরও বলে, লাইন ধরে ওএমএসের চাল তুলে দিয়ে ২০ টাকা করে পেত। সেখান থেকে টাকা জমিয়ে জার্সি, প্যান্ট ও ব্যানার কিনেছে।

চরাঞ্চলের মানুষের অবস্থা নিয়ে জানতে চাইলে হলোখানা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রেজাউল করিম রেজা বলেন, ‘নদীভাঙন এলাকায় বিশ্বকাপ নিয়ে উল্লাস করার তেমন সময় পায় না এখানকার মানুষজন। তার পরও খেটে খাওয়া এসব মানুষের একটু বিনোদনের জন্য চরাঞ্চলসহ বেশ কিছু মফস্বল এলাকায় কিছু প্রজেক্টর দিয়েছি খেলা দেখার জন্য।’

জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সাঈদ হাসান লোবান বলেন, ‘শহরের মানুষের মাঝে বিশ্বকাপের প্রভাব পড়লেও প্রান্তিক আর চরাঞ্চলে সেই প্রভাব পড়েনি।’

করোনাভাইরাস মহামারি ও বৈশ্বিক অর্থনীতিতে মন্দার প্রভাবে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের আর্থিক দৈন্যদশায় বিশ্বকাপ উৎসবে ভাটা পড়েছে বলে মনে করেন তিনি।

এ বিভাগের আরো খবর