কানাডার সঙ্গে সম্পর্ককে ঐতিহাসিক আখ্যা দিয়ে দেশের উন্নয়নে আরও বিনিয়োগ প্রত্যাশা করেছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন।
তিনি বলেছেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগের ভালো সময় এখনই।
দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে রোববার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে নৈশভোজ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
কানাডা-বাংলাদেশ চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ক্যানচ্যাম) আয়োজিত অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশে কানাডার হাইকমিশনার লিলি নিকোলস, এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন ও কানাডায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার ড. খলিলুর রহমান।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্ট্র্যাটেজিক হোল্ডিংস গ্রুপের চেয়ারম্যান ও কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ড. চৌধুরী নাফিজ সরাফাত।
হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে রোববার কানাডা-বাংলাদেশ চেম্বার আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন। ছবি: নিউজবাংলা
অনুষ্ঠানে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৭২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয় কানাডা। আর দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন হয় ওই বছরেরই ২০ মার্চ। পরের বছরের সেপ্টেম্বরে ঢাকায় দেশটি দূতাবাস চালু করে।
‘সম্পর্কের শুরু থেকেই দুই দেশ বৈশ্বিক শান্তি, নিরাপত্তা ও উন্নয়নে একসঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও কানাডার সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ককে অত্যন্ত গুরুত্ব দেন।’
তিনি বলেন, ‘কানাডা আয়তনে বাংলাদেশের ৬৭ গুণ বড়। তারা জি-সেভেন সদস্য। জনসংখ্যা মাত্র ৩ কোটি। তাদের প্রতি বর্গমাইলে ১০ জন থাকেন।
‘অন্যদিকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ। আমাদের জনসংখ্যা ১৬ কোটি আর প্রতি বর্গমাইলে এখানে ২৯০০ মানুষের বসবাস।’
কানাডার অনেক জায়গা আছে উল্লেখ করে দেশটিকে কিছু রোহিঙ্গা পুনর্বাসনে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান মোমেন। একই সঙ্গে তিনি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে উত্তর আমেরিকার দেশটির প্রতি আহ্বান জানান।
বাংলাদেশে বিনিয়োগে কানাডার বিনিয়োগকারীদের আমন্ত্রণ জানিয়ে ড. মোমেন বলেন, ‘বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার সময় এসেছে। এটি ভালো সময়।’
হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে রোববার কানাডা-বাংলাদেশ চেম্বারের নৈশভোজে কানাডার হাইকমিশনার লিলি নিকোলস এবং স্ট্র্যাটেজিক হোল্ডিংস গ্রুপের চেয়ারম্যান ও কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ড. চৌধুরী নাফিজ সরাফাত। ছবি: নিউজবাংলা
ক্যানচ্যাম সভাপতি মাসুদ রহমান কানাডা থেকে বাংলাদেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) প্রবাহের সুবিধার্থে দ্বিপক্ষীয় বৈদেশিক বিনিয়োগ সুরক্ষা চুক্তি (ফিপা) স্বাক্ষরের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
বাণিজ্য সম্প্রসারণের জন্য দ্বিপক্ষীয় মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) সইয়ের গুরুত্বও তুলে ধরেন তিনি।
মাসুদ রহমান বলেন, ‘২০১৯ সালে বাংলাদেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) ৩ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। এখানে এফডিআই প্রবাহ বছরে ৩৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ২০২১-২২ অর্থবছরে ৩ দশমিক ৪৩ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে, যা অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক।’
ক্যানচ্যাম প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘বাংলাদেশ কানাডার প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদার ভারত ও চীনের কাছাকাছি ভৌগোলিকভাবে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। আর এসবই বাংলাদেশকে এফডিআইয়ের অত্যন্ত সম্ভাবনাময় গন্তব্যে পরিণত করেছে। কানাডার জন্য সম্ভাব্য নিরাপদ ও লাভজনক বিনিয়োগের কেন্দ্র হতে পারে বাংলাদেশ।
‘বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (বিডা) কানাডার জন্য একটি কান্ট্রি ডেস্কও প্রতিষ্ঠা করেছে। ওই ডেস্কের মূল উদ্দেশ্য কানাডা থেকে এফডিআই সম্পর্কিত সমস্যাগুলো মোকাবিলার জন্য বিনিয়োগের জীবন চক্রজুড়ে এন্ড-টু-এন্ড সমর্থন প্রসারিত করা।’