বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

কুমিল্লা সমাবেশ: বিএনপির ভেতরে ক্ষোভের আগুন

  •    
  • ২৭ নভেম্বর, ২০২২ ১৮:৪৪

মঞ্চজুড়ে সেদিন ছিল সেলফি তোলার হিড়িক, একের পর এক ফোন চুরি। এমন বিশৃঙ্খলায় বিরক্ত কেন্দ্রীয় নেতারাও। বিরক্তি প্রকাশ করেন মির্জা ফখরুল, খন্দকার মোশাররফ। রাগে সমাবেশস্থল ত্যাগ করেন এহছানুল হক মিলন।

এক মাসেরও বেশি সময় ধরে প্রচার, সমাবেশে জড়ো হতে আপ্রাণ চেষ্টা। নির্ধারিত সময়ের দুই দিন আগে থেকেই জড়ো হওয়া, শেষ পর্যন্ত বিরাট জমায়েত। তবে শনিবারের সমাবেশ নিয়ে বিএনপিতে যত উচ্ছ্বাস, তার চেয়ে হতাশা, ক্ষোভও কম নয়।

কান্দিরপাড়ে টাউন হলে সমাবেশ শেষে এখন তুমুল আলোচনা মঞ্চের বিশৃঙ্খলা নিয়ে। সমাবেশস্থলে এসেও ফিরে গেছেন সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী এহছানুল হক মিলন। যারা বক্তব্য রাখবেন, সেই তালিকায় ছিল না ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদের নাম। বক্তব্য না রাখতে পেরে দলটির বেশ কয়েকজন নেতা ক্ষোভও প্রকাশ করেন।

মঞ্চজুড়ে সেদিন ছিল সেলফি তোলার হিড়িক, একের পর এক ফোন চুরি। এমন বিশৃঙ্খলায় বিরক্ত কেন্দ্রীয় নেতারাও।

শনিবার বেলা ১১টায় ধর্মগ্রন্থ পাঠের মাধ্যমে সমাবেশ শুরু হয়। মঞ্চে ওঠেন কুমিল্লা, চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কয়েকজন নেতা। তাদের সঙ্গে উঠে পড়েন অর্ধশত কর্মীও।

ভিড় সামাল দিতে এগিয়ে আসেন কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লা বুলু। মঞ্চের মধ্যেই স্থানীয় নেতা রেজাউল ইসলাম তার সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। তাদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে।

আয়োজকদের ভুলে বক্তব্যর তালিকায় নাম ছিল না কুমিল্লার সন্তান শওকত মাহমুদের। অবশ্য তিনি জানতে পেরে সমাবেশে যাননি।

আগের দিন দুপুরে কয়েক হাজার নেতা-কর্মী নিয়ে কুমিল্লায় আসেন সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী এহছানুল হক মিলন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তিনি যান মঞ্চের সামনে। কিন্তু মঞ্চে উঠতে পারেননি। ক্ষোভে ফিরে যান সেখান থেকে।

চাঁদপুর থেকে আসা একাধিক কর্মী বলেন, সমাবেশে বক্তার তালিকায় নাম না থাকায় তাদের নেতা-কর্মীদের নিয়ে ফিরে যান।

মঞ্চে বসেও বক্তব্য না দিতে পেরে ক্ষোভ প্রকাশ করেন সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল গফুর ভুঁইয়া ও আনোয়ারুল আজিম।

সমাবেশের পুরো সময়টাতে মঞ্চে কোনো শৃঙ্খলাই ছিল না। অবস্থা এমন হয়েছে যে কর্মীদের কারণে নেতাদের চেহারাও ভালো করে দেখা যায়নি। তাদের মধ্যে অনেকেই ব্যস্ত ছিলেন ছবি ও সেলফি তোলা নিয়ে।

এ সময় বিরক্তি প্রকাশ করেন দলটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক রুমিন ফারহানা। এক কর্মী প্রায় গা ঘেঁষে সেলফি তোলায় রেগে ওই কর্মীকে সাবধানও করেন তিনি। আগের রাতে সমাবেশস্থল থেকে রুমিনের মোবাইল ফোনটি খোয়া যাওয়া নিয়ে এমনিতেই তিনি ছিলেন বিরক্ত।

কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্যসচিব জসিম উদ্দিন বলেন, ‘৭০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৩০ ফুট প্রস্থের ওই মঞ্চে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে থাকবেন বিএনপির পাঁচ সাংগঠনিক ইউনিটের জ্যেষ্ঠ নেতারা। সে লক্ষ্যে ৭০টি চেয়ার রাখা হয়েছিল। অন্যান্য বিভাগীয় গণসমাবেশের মতোই কুমিল্লাতেও খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের জন্য চেয়ার ফাঁকা রাখা ছিল। তবে মঞ্চে এত লোক আসবে ভাবতেও পারি নাই।’

বিএনপি নেতা জসিম যখন কথাগুলো বলছিলেন, সে সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন সাড়ে তিন শর বেশি কর্মী।

বেলা ২টার দিকে মঞ্চে ওঠার সিঁড়িতে দলটির কর্মীদের ভিড় সামাল দিতে হিমশিম অবস্থা তৈরি হয় স্বেচ্ছাসেবক ও জ্যেষ্ঠ নেতাদের।

নাম না প্রকাশ করার শর্তে এক স্বেচ্ছাসেবক বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছি। এ সময় অনেককেই দেখা গেছে মঞ্চে দুপুরের খাবার খাওয়া নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করতে।’

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মঞ্চে আসার কিছুক্ষণ পরই সংবাদ সংগ্রহে আসা দুই গণমাধ্যমকর্মীর সঙ্গে অসদাচরণ করেন মহানগর বিএনপির এক কর্মী। তিনি গালাগালের পাশাপাশি ওই দুই সাংবাদিকের ওপর হাত তোলার চেষ্টাও করেন। অন্য সাংবাদিকরা বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ জানালে দুই পক্ষের মধ্যে বাগবিতণ্ডার সৃষ্টি হয়।

দলের শীর্ষ নেতারা যখন বক্তব্য রাখছিলেন তখন বেশির ভাগ কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবককে অন্য নেতাদের সঙ্গে ছবি ও সেলফি তুলতে ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে। মঞ্চে ওঠার সময় মির্জা ফখরুলকেও ঘিরে ধরেন শতাধিক সেলফিপ্রত্যাশী।

মঞ্চের এই চিত্র দেখে বিরক্তি প্রকাশ করেন বিএনপির মহাসচিব। যারা দায়িত্বে ছিলেন তাদের প্রতি ক্ষোভও ঝাড়েন তিনি। মঞ্চে শৃঙ্খলা আনতে ব্যর্থ হয়ে রাগান্বিত হয়ে ওঠেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেনও।

বিএনপির কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া বলেন, ‘সমাবেশে কারা বক্তব্য দেবেন, কাদের জন্য চেয়ার রাখা হবে সেই নির্দেশনা দেয়া ছিল কেন্দ্র থেকেই। সে তালিকায় নাম ছিল না সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী এহছানুল হক মিলন ও দলটির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদের।

কেন তাদের নাম রাখা হয়নি এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এটা দলের সিদ্ধান্ত। এর বেশি আমি কিছু বলতে পারব না।’

বিশৃঙ্খলার বিষয়টি স্বীকার করে মোস্তাক বলেন, ‘কিছু উচ্ছৃঙ্খল পোলাপান আছে। সেলফি তুলে ফেসবুকে দেয়ার জন্য তারা মঞ্চে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। এখানে আমাদের আরও সতর্ক হওয়ার দরকার ছিল।’

এ বিভাগের আরো খবর