সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে নির্বাচন কমিশনকে সব ধরনের সাহায্য সহযোগিতা করার আশ্বাস দিলেও কমিশনের একটি অনুরোধ সাড়ে তিন মাস ধরে উপেক্ষা করে আসছে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ।
কমিশনের খসড়া প্রস্তাবের পর কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, তার তথ্য চেয়ে পাঠানো দুটি চিঠিও উপেক্ষা করা হয়েছে। দুইবার জবাব না পেয়ে এবার কমিশন আগামী ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে জবাব দিতে সময় বেঁধে দিয়েছে।
সাংবিধানিক সংস্থা হিসেবে কমিশনকে সহযোগিতা করা সবার কর্তব্য- এই বিষয়টি স্মরণ করিয়ে চিঠিতে এ-ও বলা হয়েছে যে কমিশন যা চাইছে, তা পূরণ না হলে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য তারা সক্ষমতা অর্জন করতে পারবে না।
সরকার সহযোগিতা না করলে জনমনে সরকারের সদিচ্ছা নিয়ে সংশয় জাগবে- এই বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়েছে এই চিঠিতে।
নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএমে ভোটদানের ক্ষেত্রে আঙুলের ছাপ না মেলায় প্রিসাইংডিং কর্মকর্তার আঙুলের ছাপ ব্যবহার করে ব্যালট ইউনিট ওপেন করার ব্যবস্থাটি আরপিওতে অন্তুর্ভুক্ত করতে চায় কমিশন। বেশ কিছু আইনের সংস্কারের পক্ষেও তারা।
এ বিষয়ে পাঠানো প্রস্তারের বিষয়ে সাড়ে তিন মাসেও কোনো কিছু জানানো হয়নি কমিশনকে। এতে অসন্তুষ্ট তারা।
রোববার নির্বাচন কমিশনের উপসচিব আব্দুল হালিম স্বাক্ষরিত একটি চিঠি আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের সচিব বরাবর পাঠানো হয়। এতে এ কথা বলা হয়।
নির্বাচন কমিশনের কড়া প্রতিক্রিয়া
রোববার মন্ত্রণালয় বরাবর পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ- ১৯৭২-এ কিছু সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে আরপিও সংশোধন খসড়া বিল প্রস্তুত করে গত ৮ আগস্ট তা লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ, আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পাঠানো হয়।
খসড়া বিলটি নিয়ে কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে ২৮ সেপ্টেম্বর জরুরি পত্র পাঠায় কমিশিন। কিন্তু জবাব আসেনি। এরপর ১০ অক্টোবর আরও একটি চিঠি পাঠানো হয়। এবারও কমিশনের চিঠি উপেক্ষা করা হয়।
এবারের চিঠিতে বলা হয়, ‘আরপিওর সংশোধন-সংক্রান্ত খসড়া বিলের অগ্রগতির বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে আগামী ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে অবগত করার জন্য শেষবারের মতো বিশেষভাবে সনির্বন্ধ অনুরোধ করেছে।’
সংবিধানের ১২৬ অনুচ্ছেদের বিধান মতে দায়িত্ব পালনে নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা করা যে নির্বাহী কর্তৃপক্ষের কর্তব্য সেই বিষয়টিও চিঠিতে স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়।
এতে বলা হয়, ‘আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং উহার লেজেসটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ রাষ্ট্র ও সরকারের নির্বাহী বিভাগের একাংশ। দায়িত্ব পালনে নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা করা ইহার সাংবিধানিক সংবিধিবদ্ধ দায়িত্ব।’
নির্বাচন কমিশন মনে করে, কমিশনের অনুরোধ ও চাহিদা উপেক্ষিত হলে তারা দায়িত্ব পালনে সক্ষমতা অর্জন করতে পারবে না। এতে নির্বাচন বিষয়ে কমিশনের সক্ষমতা, স্বাধীনতা এবং সরকারের সদিচ্ছা প্রশ্নে জনমনে অনাকাঙ্ক্ষিত সংশয়ের উদ্রেক হতে পারে বলেও ভাবছে তারা।
‘এটা অবহেলা’
নির্বাচন কমিশনকে এভাবে উপেক্ষার বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা ব্রতীর নির্বাহী পরিচালক শারমিন মুরশিদ নিউজবাংলাকে বলেন, 'এটা গুরুতর। শুধু আইন মন্ত্রণালয় নয়, সরকারের যে দপ্তরগুলো আছে তাদেরও দায়িত্ব আছে। কী কারণে এমন করছে তা জানি না। এটা অবহেলা, খুব খারাপ দৃষ্টিতে দেখবে জনগণ। নির্বাচন কমিশনকে নিয়ে সমালোচনা করবে। সরকারের উচিত তার নিজের স্বার্থে জবাব দেয়া।'
আরেক পর্যবেক্ষক সংস্থা ফেয়ার ইলেকশন মনিটরিং অ্যালায়েন্সের (ফেমা) সভাপতি মুনিরা খানম বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমি নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে একমত। তারা (নির্বাচন কমিশন) যে সুষ্ঠু নির্বাচন করতে চায়, তা তো তাদের সহযোগিতা করতে হবে।’
আইন মন্ত্রণালয়ের এই ব্যাপারে চুপ থাকা উচিত না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তারা যুক্তি দিয়ে দেখাক যে বর্তমান আইনেই সুষ্ঠু নির্বাচন করা যায়। তা না হলে আইন মন্ত্রণালয় ও সরকারের সহযোগিতা করা উচিত।’
মন্ত্রীর বক্তব্য পাওয়া যায়নি
নির্বাচন কমিশনকে উপেক্ষার বিষয়ে জানতে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের মোবাইল ফোনে কল করা হলে তিনি তা কেটে দেন।
তবে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ কথা বললেন অনেকটা নরম সুরে। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সরকার অসহযোগিতা করছে, এটা বলা যাবে না। হয়তো আইনটা বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে। মন্ত্রী অনুমোদন না দিলে পাঠাতে পারছে না।’