নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিশ্বের কোথায় আছে, বিএনপির কাছে তা জানতে চেয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। বিরোধী দলটির এই দাবি পূরণ হওয়ার নয়, জানিয়ে বলেছেন, অন্যান্য দেশে যেভাবে নির্বাচন হবে, বাংলাদেশেও সেভাবেই হবে। বিএনপি সেই ভোটে আসবে, এমন আশার কথাও বলেছেন তিনি।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার দাবিতে আন্দোলনে থাকা বিএনপির দলীয় সরকারের অধীনে ভোটে না আসার ঘোষণার মধ্যে রোববার সাংবাদিকদের এ কথা বলেন ক্ষমতাসীন দলের নেতা।
সেনাশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদবিরোধী আন্দোলনে গুলিতে নিহত চিকিৎসক শামসুল আলম খান মিলনের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে কাদের সকালে যান ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ চত্বরে। পরে মুখোমুখি হন সাংবাদিকদের।
আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপির সরকার পতনের স্বপ্ন কর্পূরের মতো উবে যাবে।… বিএনপি বলুক, পৃথিবীর কোথায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার আছে?’
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার কয়েক বছর পর উচ্চ আদালত এক রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে অসাংবিধানিক রায় দেয়। যে রিট আবেদনের শুনানির পর এই সিদ্ধান্ত আসে, সেই আবেদনটি করা হয় বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলেই।
আদালতের আদেশের পর আওয়ামী লীগ সরকার দলীয় সরকারের অধীনে ভোটের ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনে। প্রতিবাদে আন্দোলনে গিয়ে ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করে তারা। তবে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলটি নির্বাচিত সরকারের অধীনেই ভোটে অংশ নেয়। সেই নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনে তারা আবার তত্ত্বাবধায়কের দাবিতে ফিরে গেছে। নইলে ভোট না এসে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণাও আছে।
তবে দুই দফায় আন্দোলনে নেমে খালি হাতে ঘরে ফেরা বিএনপির এই দাবিতে পাত্তা দিচ্ছে না সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমনকি বিএনপির সঙ্গে আলোচনার সম্ভাবনাও নাকচ করেছেন।
কাদের বলেন, ‘পৃথিবীর অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশে যেভাবে নির্বাচন হয়, বাংলাদেশে সেভাবেই হবে। আমি আশা করি, বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে।… আগামী নির্বাচন আসছে, সেটা একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক-সুষ্ঠু নির্বাচন হবে এবং নির্বাচন কমিশনকে সরকার সব ধরনের সহযোগিতা দেবে।’
নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার নিশ্চয়তাও দেন আওয়ামী লীগ নেতা। বলেন, ‘একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন হোক সেটা আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা চান। সে লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন ও কর্তৃত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনে সরকার সব ধরনের সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত রয়েছে।’
এ ইস্যুতে আন্দোলন না করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘আজকে সংকেটর সময়, মানুষের কষ্ট হচ্ছে। আমরা কিছুটা বিপদে আছি। এটাকে পুঁজি করে বিএনপি আন্দোলন করছে, যা অন্য কোনো দেশে হচ্ছে না বরং বিরোধী দলগুলো সরকারকে সহযোগিতা করছে। আর এদেশে বিএনপি বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নামে বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা করছে। তত্ত্বাবধায়কের দাবি নিয়ে সরকার পতনের এ স্বপ্ন অচিরেই কর্পূরের মতো উবে যাবে।’
আওয়ামী লীগ একা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না মন্তব্য করে কাদের বলেন, ‘গণতন্ত্র এক চাকার গাড়ি না। সরকারের পাশাপাশি বিরোধীদল যদি দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন না করে, তাহলে শুধুমাত্র সরকারি দল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবে, এটা আশা করে লাভ নেই। কারণ, সরকার ও বিরোধী দলের যৌথ প্রয়াসে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হবে। সে জন্য আমরা বিরোধী দলের সহযোগিতা আশা করছি।