কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় দুধ দিয়ে গোসল করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল ছাত্রলীগ নেতা আরমিন আহমেদকে কুপিয়েছে দুর্বৃত্তরা।
শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার মির্জাপুর বাইপাস সড়কে এ ঘটনা ঘটে।
আরমিন আহমেদ উপজেলা সদরের বড়বাড়ি এলাকার বাসিন্দা। পাকুন্দিয়া সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং উপজেলা ছাত্রলীগের ১ নম্বর সহসভাপতি।
পাকুন্দিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মজিবুর রহমান এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
আরমিনের সঙ্গে থাকা মুন্না নামের একজনের বরাতে তিনি জানান, ঘটনাস্থলে পুলিশ যাওয়ার আগেই তার সঙ্গে থাকা লোকজন তাকে উদ্ধার করে পাকুন্দিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য জহুরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেছেন। কে বা কারা হামলা করেছে- এই বিষয়ে কিছু জানাতে পারেনি পুলিশ।
আরমিনের ভাগনে নাইমুল ইসলাম রনি জানান, রাত ১০টার দিকে দুটি মোটরসাইকেলে করে চার বন্ধুকে নিয়ে থানারঘাট এলাকায় একটি হোটেলে খেতে গিয়েছিলেন তার মামা। সেখান থেকে ফেরার পথে মির্জাপুর বাইপাস সড়কে পৌঁছা মাত্রই দুটি মাইক্রোবাসে করে ১৫ থেকে ২০ যুবক এসে তাদের গতিরোধ করে এবং তাদের ওপর হামলা চালায়।
এ সময় সঙ্গে থাকা অন্যরা দৌড় দিলে পড়ে যান আরমিন। তখন হামলাকারীদের একজন চাপাতি দিয়ে তার মাথায় কোপ দেয়। পরে অন্যরা হকিস্টিক দিয়ে পিটিয়ে চলে যায়।
রনি বলেন, ‘মামা (আরমিন) তাদের চিনতে পেরেছেন। জ্ঞান ফিরলে নাম জানা যাবে।’
কে বা কারা হামলা করতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি সঙ্গে ছিলাম না। তবে ধারণা করা হচ্ছে, নবগঠিত কমিটির নেতা-কর্মীরা করতে পারেন। কারণ দুধ দিয়ে গোসল করার পর তার প্রতি সবাই ক্ষুব্ধ।
পাকুন্দিয়া ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল আলমের যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এই বিষয়ে আমি কিছু জানি না। আপনার মাধ্যমেই বিষয়টি শুনলাম।
উল্লেখ্য, ১২ বছর পর ৫ অক্টোবর নতুন কমিটি পায় পাকুন্দিয়া উপজেলা ছাত্রলীগ। জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. আনোয়ার হোসেন মোল্লা ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ফয়েজ ওমান খান স্বাক্ষরিত ১৯ সদস্যবিশিষ্ট পাকুন্দিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়।
কমিটিতে নাজমুল আলমকে সভাপতি ও মো. তোফায়েল আহমেদকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। সেই কমিটিতে ১ নম্বর সহসভাপতি করা হয় আরমিনকে। সে ছিল সভাপতি পদপ্রার্থী। কাঙ্ক্ষিত পদ না পেয়ে ৬ অক্টোবর রাতে ক্ষোভে দুধ দিয়ে গোসল করে নিজেকে কলঙ্ক মুক্ত করার দাবি করেন।
গোসলের ২২ সেকেন্ডের এই ভিডিও নিজের ফেসবুকে পোস্ট করেন আরমিন। মুহূর্তেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে ভিডিওটি।
ভিডিওতে দেখা যায়, একটি শিশু জগভর্তি দুধ ছাত্রলীগ নেতার মাথায় ঢালছে আর তা সারা শরীরে মেখে নিচ্ছেন তিনি।
যিনি ভিডিওটি ধারণ করছেন তিনি প্রশ্ন করেন, আরও রাজনীতি করবা?
এ সময় হাত নেড়ে না করেন ওই ছাত্রলীগ নেতা।
গত অক্টোবরে নিউজবাংলাকে অভিমানী আরমিন বলেছিলেন, ‘আমি উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি পদপ্রার্থী ছিলাম। এ ছাড়া আরও যে পাঁচজন প্রার্থী ছিলেন তাদের মধ্যে আমি সিনিয়র। কিন্তু বুধবার রাতে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন মোল্লা সুমন ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ফয়েজ উমান খান স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নাজমুল আলমকে সভাপতি ও তোফায়েল আহমেদ তুহিনকে সাধারণ সম্পাদক করে ১৯ সদস্যবিশিষ্ট আংশিক কমিটি ঘোষণা করে জেলা ছাত্রলীগ। যেটা আমি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখতে পাই। এই কমিটিতে যাদের দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে, তারা আমার জুনিয়র। কমিটিতে জুনিয়রদের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে রেখে আমাকে করা হয়েছে ১ নম্বর সহসভাপতি।
‘এতে তাকে সম্মানিত না করে হেয় প্রতিপন্ন করা হয়েছে বলে অভিযোগ তার। বলেন, ‘আমার ১২ বছরের রাজনৈতিক জীবনে ৭টি মামলার আসামি হয়ে দুবার কারাবরণ করেছি। এইচএসসি পরীক্ষা পর্যন্ত জেলে বসে দিয়েছি। অথচ আমাকে মূল্যায়ন না করে মূল্যায়ন করা হয়েছে জামায়াত-বিএনপি থেকে উঠে আসা ছেলেদের। তাই নিজেকে কলঙ্কমুক্ত করতে দুধ দিয়ে গোসল করেছি।’
রাজনীতিতে আপনি থাকছেন কি না এমন প্রশ্নে বলেন, ‘রাজনীতিতে ছিলাম, আছি, থাকব।’ নিজেকে খানিকটা সান্ত্বনা দিতেই এমন উদ্যোগ নিয়েছেন বলেও জানান তিনি।