বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সিরাজগঞ্জে অবাধে শামুক নিধন, উর্বরতায় হুমকি

  •    
  • ২৬ নভেম্বর, ২০২২ ১২:৫৭

ডুবে থাকা ফসলি জমি থেকে জাল দিয়ে শামুক সংগ্রহ করছেন এলাকার কৃষক ও জেলেরা। এ শামুক নৌকায় ভরে বিভিন্ন বাজারে আনা হচ্ছে। শামুক ব্যবসায়ী সেগুলো কিনে বিভিন্ন হাঁসের খামার ও মাছের পুকুরে বিক্রি করছেন।

চলনবিল অধ্যুষিত সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার বিল অঞ্চল থেকে বর্ষার পানি এখনও পুরোপুরি নেমে যায়নি। বিলপারের মানুষেরা মাছ ধরার পাশাপাশি বিভিন্ন অংশে জাল দিয়ে অবাধে নিধন করছে ছোট-বড় শামুক। এগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে বিভিন্ন অঞ্চলের হাঁসের খামার ও মাছের খাদ্য হিসেবে।

প্রতিদিন বিলপারের মানুষেরা শত শত বস্তা শামুক বিক্রি করে বাড়তি আয় করছেন। তবে এভাবে প্রতিদিন শামুক নিধনের ফলে পরিবেশ বিপন্ন হওয়ার পাশাপাশি হুমকিতে পড়েছে বিল অঞ্চলের জীববৈচিত্র্য। এ ব্যাপারে মানুষকে সচেতন করতে কাজ করবে পরিবেশ অধিদপ্তর।

শামুক নিধনের ফলে বিল অঞ্চলের ফসলি জমির উর্বরতা শক্তি কমে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লুৎফুন্নাহার লুনা।

তাড়াশ উপজেলার বিল অঞ্চলে অন্যান্য বছরের মতো গত প্রায় দুই মাস ধরে অবাধে শামুক নিধনের মহোৎসব চলছে। স্থানীয় বাসিন্দা আসাদুল ইসলাম জানান, বিলপারের খেটে খাওয়া লোকজন বাড়তি উপার্জনের আশায় প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ছোট-বড় নৌকা নিয়ে বিলের বিভিন্ন অংশে বিশেষ করে ডুবে থাকা ফসলি জমি থেকে মই জাল, হেসি জাল ও হাত জাল দিয়ে শামুক সংগ্রহ করছেন। সংগ্রহ করা শামুক নৌকায় ভরে বিক্রির জন্য তাড়াশ উপজেলার দীঘি সগুনা বাজার, হামকুড়িয়া বাজার, মান্নান নগর চৌরাস্তা বাজারে নিয়ে আসেন। সেখান থেকে শামুক ব্যবসায়ী পাইকাররা বস্তাভর্তি শামুক কিনে বিভিন্ন হাঁসের খামার, মাছের পুকুরে বিক্রির জন্য নিয়ে যান।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বিলের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫টি নৌকায় করে শামুক আসছে দিঘীসগুনা সড়কে। এগুলো বস্তায় ভরে প্রতি বস্তা ১১০ টাকা থেকে ১২০ টাকা দরে ব্যাপারীদের কাছে বিক্রি করছেন জেলেরা। শামুকের বস্তা বিভিন্ন বাহনে নেয়া হচ্ছে এলাকার বিভিন্ন হাঁসের খামারে। এলাকাটা এক প্রকার শামুকের হাটে পরিণত হয়েছে।

শামুক সংগ্রহকারী তাড়াশের বিলনাদো গ্রামের আব্দুর রহমান প্রামাণিক বলেন, ‘বর্ষায় বিল অঞ্চলে মানুষের কাজকর্ম তেমনটা থাকে না। তাই আমরা নৌকায় করে মইজাল, হেসি জাল ও হাত জাল দিয়ে শামুক সংগ্রহ করি। এগুলো ব্যাপারীদের কাছে প্রতি বস্তা ১১০ টাকা থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি করি।’

শামুক ব্যাপারী উপজেলার কামারশোন গ্রামের মিলন হোসেন বলেন, ‘বর্ষা মৌসুমে এ এলাকার ফসলের জমি পানিতে তলিয়ে যায়। জমিতে প্রচুর পরিমাণে ছোট, মাঝারি ও বড় শামুক পাওয়া যায়। এগুলো সংগ্রহ করছে এলাকার লোকজন।’

প্রতিদিন দিঘীসগুনা শামুক বিক্রির আড়ত থেকে ৩০০ থেকে সাড়ে ৩০০ বস্তা শামুক বিক্রি হচ্ছে। ব্যাপারীরা এখান থেকে ভ্যান ও পিকআপ গাড়িতে শামুক নিয়ে যায়।

উপজেলার সেরাজপুর গ্রামের হাঁসের খামারি মো. আব্দুল জলিল বলেন, ‘এ মৌসুমে প্রতি বছর বিল এলাকা থেকে হাঁসের খাবারের জন্য শামুক কিনে আনা হয়। শামুক হাঁসের জন্য খুবই পুষ্টিকর খাদ্য।’

এ প্রসঙ্গে তাড়াশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লুৎফুলন্নাহার লুনা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বর্ষার শেষে পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে এই শামুক বেশির ভাগ মারা যাওয়ায় কৃষিজমির উর্বরতা বৃদ্ধিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। শামুক নিধন প্রতিরোধে কৃষি বিভাগের তেমন কোনো দিকনির্দেশনা নাই। তার পরও পরিবেশের যাতে কোনো ক্ষতি না হয়, সেদিক থেকে বিষয়টি দেখা হবে।’

সিরাজগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আব্দুল গফুর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শামুক নিধন প্রতিরোধে আমাদের তেমন কোনো দিকনির্দেশনা দেয়া হয়নি । তবে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় আমরা কাজ করে যাব। এমনিতেই শামুক নিধন বেশি মাত্রায় হওয়ায় হুমকিতে পড়েছে বিল অঞ্চলের জীববৈচিত্র্য। যার প্রভাব পড়বে পরিবেশের ওপর। আমরা মানুষকে সচেতন করতে লিফলেট বিতরণ, উঠান বৈঠক, চলচ্চিত্র প্রদর্শনী ও মাইকিং করে শামুক নিধন বন্ধে কাজ করে যাব, আগামী দিনে যেন কেউ এই শামুক নিধন না করে।’

এ বিভাগের আরো খবর