বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

শিম চাষে ভাগ্য বদল চাকরি হারানো যুবকের

  •    
  • ২৬ নভেম্বর, ২০২২ ১০:১৭

২০১৯ সালে করোনার শুরুতে আব্দুল কাহিদের কর্মক্ষেত্র কারখানাটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তিনি বেকার হয়ে পড়েন। এলাকায় ফিরে গিয়ে শুরু করেন শিম চাষ। এ চাষ তার ভাগ্য বদলে দিতে শুরু করেছে।

শেরপুরের আব্দুল কাদির পোশাক কারখানায় চাকরি করে সংসারের হাল ধরতে চেয়েছিলেন। কিন্তু করোনার শুরুতে তার কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় ১৪ বছর সেখানে চাকরি করেন তিনি। বেশি একটা উন্নতি হয়নি। কিন্তু চাকরি হারানো তার জন্য শাপে বর হয়েছে। ভারতের কেরালা জাতের শিম চাষ করে ভাগ্য বদলেছে তার।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঝিনাইগাতী উপজেলার নলকুড়া ইউনিয়ন সন্ধ্যাকুড়া গ্রামের কৃষক আব্দুল কাদির তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে শিম ক্ষেতে কাজ করছেন। ক্ষেত থেকে শিম তুলছেন তারা বিক্রির উদ্দেশ্যে।

আব্দুল কাদির জানান, ২০১৯ সালে করোনার শুরুতে তার কর্মক্ষেত্র কারখানাটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারও চাকরি চলে যায়। একমাত্র আয়ের উৎস বন্ধ হওয়ায় সংসারের খরচ জোগাতে হিমশিম খেতে হয় তাকে।

চাকরি চলে যাওয়ায় পুরো সংসার নিয়ে ঢাকা থেকে নিজের গ্রাম সন্ধ্যাকুড়ার পৈতৃক ভিটায় চলে আসেন তিনি। বাড়িতে এসে কী করবেন, ভেবে পাচ্ছিলেন না। পরে তার বাবার কাছ থেকে মাত্র ২০ শতাংশ জমি বছরে ৮ হাজার টাকায় ইজারা নেন। আর সেই জমিতে সবজি লাগিয়ে পরিবারের হাল ধরার চেষ্টা করেন।

ভাগ্য তার সহায় ছিল না। প্রথমবার এ জমিতে ৩০ হাজার টাকা খরচ করে কাঁকরোলের আবাদ করেন। কাঁকরোল যখন ধরা শুরু করে, তখনই পাহাড়ি ঢল এসে সব শেষ করে দেয়। কিছুদিন পর আবার পাহাড়ি ঢলে আরও ক্ষতি হয় তার। তখন তিনি পথে বসে যান।

আব্দুল কাদির বলেন, ‘তারপর আমি চিন্তা করি কী করা যায়। আর অল্প সময়ে কীভাবে অধিক মুনাফা লাভ করা যায়। আমি পরে ইউটিউবে দেখতে পাই যে ভারতের কেরালায় আগাম জাতের শিম চাষ হয় আর ওই শিম আগেই বাজারে নামে।

‘পরবর্তী সময়ে আমি চিন্তাভবনা করি যে এই জাতের শিম আমাদের এলাকায় চাষ কেমনে সম্ভব। একপর্যায়ে ভাবলাম এই শিম তো কেরালা থেকে আনা সম্ভব নয়। পরে ইউটিউবে দেখলাম আমাদের বাংলাদেশেও এই শিম নাটোরের একজনের কাছে পাওয়া যাচ্ছে।’

কাদির বলেন, ‘নতুন কর্মসংস্থান ও সন্তানদের ভবিষ্যৎ উন্নতির কথা চিন্তা করে নাটোর থেকে এক কেজি শিমের বীজ ৪ হাজার টাকা দিয়ে কিনে আনি। আমার আবাদি জমিতে আধাকেজি পরিমাণ শিমের বীজ রোপণ করি। বাকি শিমবীজ একই এলাকার আরেক কৃষককে দেই।’

জমিতে বীজ রোপণের পর থেকে বাগানের নিয়মিত পরিচর্যা, কীটনাশক সারসহ অন্য সব খরচা মিলিয়ে কাদিরের প্রায় ১৮-২০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। নতুন এই শিমবীজ এলাকায় প্রথমবারের মতো রোপণ করায় কেউ উৎসাহ দেয়নি তাকে। বরং সব গাছ কাটার পরামর্শ দেন অনেকে। কারও কথায় খেয়াল না রেখে তার শিম বাগান পরিচর্যার পাশাপাশি ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে থাকেন কৃষক আব্দুল কাদির।

তিনি জানান, বীজ রোপণের ৭০ দিন পর প্রতিটি গাছে ফুল ফুটতে শুরু করে। সবাইকে তাক লাগিয়ে বীজ রোপণের আড়াই মাস পর থেকে শুরু হয় শিম বিক্রি। বর্তমানে সপ্তাহে দুই দিন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পাইকারদের কাছে বাজারের দামে শিম বিক্রি করে যাচ্ছেন তিনি। এখন পর্যন্ত প্রায় ২ লাখ টাকার শিম বিক্রি করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ‘আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আগামী দুই মাসের মধ্যে আরও দেড় থেকে ২ লাখ টাকার শিম বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে। বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে নিজের পাশাপাশি তৈরি হয়েছে আরও বেশ কিছু পরিবারের কর্মসংস্থান। আগামী বছর আরও বড় পরিসরে শিম চাষ করা হবে।

‘চাকরির পেছনে ছুটে অথবা বেকার না ঘুরে অনাবাদি জমিতে শাক-সবজি উৎপাদন করেও লাভবান হওয়া সম্ভব।’

স্ত্রী মনিরা বেগম বলেন, ‘আমার স্বামীর চাকরি চলে যাওয়ার পর আমরা অনেক কষ্ট করছি। কিন্তু এহন আর কষ্ট নাই। আমরা শিম চাষ করে এ পর্যন্ত ২ লাখ টাকা বিক্রি করছি। আমিও মাঠে স্বামীকে সময় দেই।’

স্থানীয় কৃষক মো. শহীদ মিয়া বলেন, ‘কেরালা শিমটা মেলা ভালা। এই শিম চাষ কইরা আমাগো কাদির লাভবান হইছে। আমাদেরও বীজ দিলে আমরাও সামনেরবার লাগামু।’

স্থানীয় কৃষক রফিক মিয়া বলেন, ‘আমরা কী শিম লাইগাইছি এহন পর্যন্ত ফলই আহে নাই। আর কাদির তো মেলা টাকা বেইচ্চা হালাইছে। আমরাও এরপর কাদিরের ওনো থাইক্কা বীজ নিয়া এই শিম লাগামু।’

কিষানি হেপ্পী বেগম বলেন, ‘আমাদের বাড়ির কাছে একটা নতুন শিমের চাষ হইছে। আমরা যে শিম লাগাইছি তার থেকে অনেক ভালো। আমাদের শিম এখনো ফুলই আসে নাই, আর তার শিম বেচা শুরু করে দিছে অনেক আগে থেকেই।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. গোলাম কিবরিয়া জানান, কাদের মিয়ার সবজি বাগান দেখতে প্রতিদিন বিভিন্ন স্থান থেকে ছুটে আসছেন অনেকে। ফলন ভালো হওয়ায় ভবিষ্যতে এ জাতের শিম তার এলাকার অনেক কৃষক চাষ করবেন বলে জানান ।

ঝিনাইগাতী উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. হুমায়ুন দিলদার বলেন, ‘কৃষক আব্দুল কাদির একজন কৃষি উদ্যোক্তা। কৃষিতে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে আসতে হয়েছে তার। ২০ শতাংশ জমিতে আগাম শিম চাষ করে তিনি এখন স্বাবলম্বী। ইন্ডিয়ার কেরালা জাতের শিম চাষ করে ইতোমধ্যে প্রায় ২ লাখ টাকার শিম বিক্রি করেছেন তিনি।

‘উচ্চ মূল্যের ফসল চাষ করলে কৃষক লাভবানের পাশাপাশি নতুন নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হবে। আমরা এ শিমের বীজ আব্দুল কাদিরের কাছ থেকে সংগ্রহ করে এলাকার কৃষকের মাঝে বিতরণ করব। যাতে সবাই তার মত স্বাবলম্বী হতে পারে। আমরা কৃষি বিভাগ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করে যাব আব্দুল কাদিরকে।’

এ বিভাগের আরো খবর