একদিন আগেই কুমিল্লায় বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশস্থল ভরে গেছে নেতা-কর্মীতে। কুমিল্লাসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলা উপজেলা থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে আসছেন তারা। ভিড় সামলাতে বেগ পোহাচ্ছেন সমাবেশস্থলের দায়িত্বে থাকা নেতারা।
শুক্রবার রাতে সমাবেশস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, মঞ্চ তৈরির কাজ প্রায় শেষ। এখন চলছে গণসমাবেশ পরিচালনার রিহার্সেল। এই রির্হাসেলের মাঝেও খন্ড খন্ড মিছিলে সমাবেশ স্থলে প্রবেশ করছিল নেতাকর্মীরা। তবে অন্য সব বিভাগীয় সমাবেশের আগে পরিবহন ধর্মঘট হচ্ছে না কুমিল্লায়। এতে স্বস্তিতে রয়েছে দলটির নেতাকর্মীরা।
কুমিল্লার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে দেশের গুরুত্বপূর্ণ সব সড়ক। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ১০৫ কিলোমিটার এবং রেলওয়ের প্রায় ১০০ কিলোমিটার পথ অতিবাহিত হয়েছে কুমিল্লা ওপর দিয়ে। তাই আঞ্চলিক অবস্থান বিবেচনায় কুমিল্লায় পরিবহন ধর্মঘট ডাকেননি সংশ্লিষ্টরা।
জেলা দ্য মোটরস অ্যাসোসিয়েশন এর সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা মিটিং করেছি। পরিবহণ ধর্মঘট হবে না। হওয়ার সম্ভাবনাও নেই।’
কুমিল্লা পরিবহণ মালিক সমিতির এক নেতা নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘ভৌগোলিক অবস্থান বিবেচনায় কুমিল্লার ওপর দিয়ে যাতায়াত করা যেকোনো সড়কে ধর্মঘট হলে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে সারা দেশে। এ ছাড়া ট্রেন বন্ধ করারও সুযোগ নেই।’
এর আগে শুক্রবার বিকেল ৫টায় কুমিল্লা টাউনহল মাঠে গিয়ে দেখা যায়, একের পর এক মিছিল আসছে টাউনহল মাঠে সমাবেশস্থলের মঞ্চের দিকে। শনিবার সকালে এই মঞ্চ থেকেই উদ্দেশে বক্তব্য দেবেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা।
কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুর রশীদ ইয়াছিন বলেন, ‘এটি শুধু বিএনপির সমাবেশ নয়, এটি দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির বিরুদ্ধে সমাবেশ। এটি গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার সমাবেশ। রাত যত বাড়বে নেতা-কর্মী আরও আসবেন। শুধু টাউনহল না, আশপাশের এলাকাতেও আমরা জায়গা দিতে পারবো না।’
কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হাজি আমিনুর রশীদ ইয়াছিন বলেন, ‘দুইদিন আগ থেকেই নেতা-কর্মীরা কুমিল্লায় আসতে শুরু করেছেন। তাদের থাকা-খাওয়াসহ সব রকম ব্যবস্থা করা হয়েছে। আজ শুক্রবার আমরা নেতা-কর্মীরা মিলে জুমার নামাজ আদায় করেছি। নেতা-কর্মীরা বেশ উৎফুল্ল।’
সমাবেশস্থলে নিজের সমর্থিত নেতা-কর্মীদের নিয়ে আলাদাভাবে জুমার নামাজ আদায় করেন বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা কুমিল্লা সিটির সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু।
এদিকে সমাবেশস্থলের অদূরে কেন্দ্রীয় ঈদগাহে জুমার নামাজ আদায় করেন কুমিল্লা বুড়িচং ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার নেতা-কর্মীরাও।
বুড়িচং উপজেলা বিএনপির সভাপতি এটিএম মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমরা আগে থেকে প্রস্তুতি নিয়েই জুমার নামাজ আদায় করেছি। এ বিষয়ে আমাদের সার্বিক সহযোগিতা করেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্যসচিব হাজি জসিম উদ্দিন।’
রাত ১১টায় গিয়ে দেখা যায়, টাউনহলের পশ্চিমপার্শ্বে একদল কর্মী ডিজে গানের সঙ্গে নাচ-গানে মত্ত। তারা এসেছেন চাঁদপুর জেলার শাহারাস্তি উপজেলা থেকে। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন অন্যান্য এলাকা থেকে আসা আরও সহস্রাধিক নেতা-কর্মী।
সমাবেশস্থলের আরেকপাশে ত্রিপাল টাঙিয়ে অবস্থান নিয়েছেন আরও বহু নেতা-কর্মী। একপাশে চলছে খাবারের পর্বও।
এর আগে শুক্রবার সকাল ১০টায় কুমিল্লার একটি রেস্তোরাঁয় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন সংবাদ সম্মেলন করেন। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন মন্তব্য করেন, তারা খেলা করেন না, রাজনীতি করেন।
খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নেতারা বলছেন খেলার কথা। আমরা বলি, রাজনীতি আর খেলা এক নয়। আমরা সাধারণ মানুষের জন্য রাজনীতি করি। খেলা করি না।’
তিনি বলেন, ‘দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে আজ মানুষ দিশাহারা। সাধারণ মানুষের চাওয়া নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে ভোটে যাওয়া। এসব অধিকার আদায়ে আমাদের গণসমাবেশের আয়োজন।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘কুমিল্লার সমাবেশ যেন সফল না হয়, সে জন্য নেতা-কর্মীদের বাড়ি গিয়ে সাদা পোশাকের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী হুমকি দিচ্ছে। কৌশলে পরিবহন বন্ধ করা হচ্ছে। পথে পথে হয়রানি করা হচ্ছে। এসব হয়রানিকে উপেক্ষা করে ইতোমধ্যে কুমিল্লায় এসে পৌঁছেছেন বিভিন্ন জেলার নেতা-কর্মী।’
খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘শনিবারের সমাবেশ হবে স্মরণকালের সর্ববৃহৎ সমাবেশ। সমাবেশ সফল হবে। কোনো অপশক্তি সমাবেশকে ব্যর্থ করতে পারবে না।’
কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হাজি আমিনুর রশীদ ইয়াছিন বলেন, ‘সকাল ১০টায় সমাবেশ শুরু হবে। বিকেল ৪টার মধ্যেই শেষ হবে। ইতোমধ্যে নেতা-কর্মীরা এসে গেছেন।’
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্যসচিব জসিম উদ্দিন, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক উৎবাতুল বারি আবু, সদস্য সচিব ইউসুফ মোল্লা টিপুসহ শতাধিক নেতা-কর্মী।
সমাবেশ ও নিরাপত্তার বিষয়ে কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার আবদুল মান্নান বলেন, ‘বিএনপি তাদের রাজনৈতিক সমাবেশ করবে। করুক। তবে সাধারণ মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা দিতে কুমিল্লা জেলা পুলিশ বদ্ধপরিকর। সে লক্ষ্যে শনিবার নগরীজুড়ে সর্বোচ্চ সংখ্যাক পুলিশ সদস্য কাজ করবে।’