ইউরোপীয় ইউনিয়ন-ইইউ ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত রাজনৈতিক সংলাপে পারস্পরিক সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিতে অংশীদারত্ব সহযোগিতা চুক্তি (পার্টনারশিপ কো-অপারেশন এগ্রিমেন্ট-পিসিএ) সই করতে সম্মত হয়েছে উভয় পক্ষ।
পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যালোচনার পর সুবিধাজনক সময়ে এইই চুক্তি সই হবে। চুক্তিতে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের মৌলিক বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত থাকছে। এর ভিত্তি হবে গণতন্ত্র, সুশাসন, মানবাধিকার এবং ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শুরু হওয়া এই রাজনৈতিক সংলাপ চলে গভীর রাত পর্যন্ত। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় অনুষ্ঠিত সংলাপে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম। অপর পক্ষে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষে নেতৃত্ব দেন ইইউ জোটের বৈদেশিক কার্যক্রম দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-মহাসচিব এনরিকে মোরা।
বৈঠকের মাঝামাঝি অনুষ্ঠিত যৌথ সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘এর আগে সচিব বা কর্মকর্তা পর্যায়ে সিরিজ আলোচনা হলেও এই প্রথম রাজনৈতিক নেতৃত্ব পর্যায়ে সংলাপ হচ্ছে। এই সংলাপে দুই পক্ষের সম্পর্ক আরও নিবিড় করতে অংশীদারত্ব সহযোগিতা চুক্তি করতে সম্মত হয়েছি আমরা।’
আলোচনা চলমান রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ইইউ নিরাপত্তা ইস্যুতে আমাদের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহ দেখিয়েছে। এর মধ্যে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ দমন, ইন্টারনেট সিকিউরিটি, অর্গানাইজড ক্রাইম, জলবায়ু পরিবর্তন, অভিবাসন, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, সংযুক্তির মতো বিষয় রয়েছে।’
রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এর নিরাপত্তার দিকটি যেমন আলোচনা করেছি, তেমনি তাদের মানবিক সহায়তা এবং এই সঙ্কটের রাজনৈতিক সমাধান তথা প্রত্যাবাসন নিয়েও দীর্ঘ সময় আলোচনা করেছি। এ ইস্যুতে ইইউ তাদের অবস্থান ও পদক্ষেপ তুলে ধরেছে।’
ইন্দো-প্যাসিফিক নিয়ে আলোচনা চলমান জানিয়ে শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘সংলাপে আমরা অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা করছি। বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিবেশী দেশসহ জাতিসংঘের সদস্য বিভিন্ন দেশের সম্পর্কের বিষয়ে কথা হচ্ছে। ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে কথা হয়েছে। বৈশ্বিক উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে খাদ্য নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা কিভাবে আরও সুসংহত করা যায় সেই পথ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।’
এনরিকো মোরা বলেন, ‘পারস্পরিক সম্পর্ক নতুন স্তরে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে আমরা আলোচনা করছি- যার মূল ভিত্তি গণতন্ত্র, সুশাসন ও মানবাধিকার। সামনে আমরা অংশীদারত্ব সহযোগিতা চুক্তি করব।
‘গত ১০ বছরে বাংলাদেশ অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। মূলত দুটি কারণে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে চায় ইইউ। এক. বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক উন্নয়ন; দুই. ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের কেন্দ্রবিন্দুতে বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ইন্দো-প্যাসিফিক কিংবা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ কোনো ইস্যুতেই বাংলাদেশের ওপর কিছু চাপিয়ে দিতে চায় না ইইউ। বরং ঢাকার স্বাধীন সিদ্ধান্তের প্রতি আমাদের সম্মান রয়েছে।’
২৭ রাষ্ট্রের জোট ইইউ-এর সঙ্গে এশিয়ার দুই দেশ ভারত ও পাকিস্তান এবং জোট হিসেবে আসিয়ানের অংশীদারত্ব সহযোগিতা চুক্তি রয়েছে।