মেহেদী হাসান অমি ওরফে রাফি ২০১৭ সালে জামিনে বের হওয়ার পর থেকে নিয়মিত হাজিরা দিচ্ছিলেন আদালতে। ২০ নভেম্বর দুই জঙ্গি ছিনিয়ে নেয়ার আগে ১ নভেম্বরও তিনি আদালতে হাজিরা দেন। আদালতে হাজিরা দেয়ার সুবাধে কারাবন্দি জঙ্গিদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ হতো তার। আর এই অমির মাধ্যমেই জঙ্গি ছিনিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা সম্পর্কে অবগত হয় কারাবন্দি চারজন।
দুই জঙ্গি ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনার দিনও আদালতে হাজিরা দিতে এসেছিলেন অমি। শুনানি শেষে আদালত চত্বর থেকে বেরিয়ে যান তিনি। এর আগে চার জঙ্গির হাতে তুলে দেন বেশকিছু নগদ টাকা। পালিয়ে যাওয়ার পর তাৎক্ষণিক ব্যয় নির্বাহের জন্যই তাদেরকে ওই টাকা দেয়া হয়।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মইনুল হাসান শামীম ওরফে সামির ওরফে ইমরান এবং আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব ওরফে সাজিদ ওরফে শাহাবকে ছিনিয়ে নেয়ার মামলায় অমিকে বুধবার যাত্রাবাড়ী থেকে গ্রেপ্তার করে সিটিটিসি। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এসব তথ্য জানিয়েছেন সিটিটিসি প্রধান মো. আসাদুজ্জামান।
তিনি বলেন, ‘২০১৬ সালে আনসার আল ইসলাম বেশ কিছু ঘটনা ঘটায়। সিটিটিসি অভিযান শুরুর পর রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও বাড্ডায় তাদের বড় আস্তানার সন্ধান পায়। সেই আস্তানায় অভিযান চালাতে গিয়ে মেহেদী হাসান অমির নাম উঠে আসে। ওই সময়ে সিলেট থেকে তাকে সিটিটিসি গ্রেপ্তার করে। ২০১৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে জেল থেকে জামিনে বের হন তিনি।
‘যে মামলার হাজিরা দিতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জঙ্গিদের আদালতে আনা হয় সেই মামলায় অমিও আসামি। ২০১৭ সালে জামিন পাওয়ার পর থেকে তিনি নিয়মিত হাজিরা দিয়ে আসছিলেন। জামিন পাওয়ার পরও এই সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল।’
আসাদুজ্জামান বলেন, ‘জঙ্গিদের ছিনিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা অমির মাধ্যমেই কারাবন্দি জঙ্গিদের জানিয়ে দেয়া হয়। অমি নিয়মিত আদালতে হাজিরা দিতেন। অপরদিকে কারাবন্দি জঙ্গিদের মামলার হাজিরা ও শুনানির জন্য আদালতে আনা হতো। এই সময়ে অমির সঙ্গে বন্দি জঙ্গিদের একটি পরিচিতিও গড়ে ওঠে।
‘দুই গ্রুপের মধ্যে অমি সমন্বয় করতেন। তিনি বাইরের থেকে সংগঠনের ম্যাসেজগুলো কারাবন্দি জঙ্গিদের দিতেন। অপরদিকে বন্দি জঙ্গিদের তথ্য বাইরের জঙ্গিদের এনে দিতেন। তারই অংশ হিসেবে ২০ তারিখের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাটি ঘটে।’
জঙ্গি ছিনিয়ে নেয়ার ৭২ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও দুই জঙ্গির অবস্থান শনাক্ত করতে পারেনি সিটিটিসি। ইউনিটটির প্রধান বলেন, ‘যাদের ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে তাদের শনাক্ত করতে পারলে তাৎক্ষণিক গ্রেপ্তার করা হবে।’
কে এই অমি
অমির বাড়ি সিলেটের আম্বরখানায়। ২৪ বছর বয়সী এই তরুণ আনসার আল ইসলামে রাফি নামেই বেশি পরিচিত। শুরুতে তিনি হিযবুত তাহরিরের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এরপর আনসারুল্লাহ বাংলা টিমে যোগ দেন, যা পরবর্তীতে আনসার আল ইসলাম নাম ধারণ করে।
সিটিটিসির কর্মকর্তারা জানান, অমি ২০০৯ সাল থেকে হিযবুত তাহরিরের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রে যুক্ত থাকার অভিযোগে ২০১০ সালে গ্রেপ্তার হন তিনি। ২০১১ সালে জামিনে বের হয়ে আনসার আল ইসলামের ‘আদর্শে’ উজ্জীবিত হন এবং এই সংগঠনের আরেক নেতার সঙ্গে পরিচয়ের সুবাধে ২০১৩ সালে আনসার আল ইসলামে যোগ দেন।
তখন সংগঠনের নাম ছিল আনসারুল্লাহ বাংলা টিম-এবিটি। অল্প কিছুদিনের মধ্যে নিজেকে দক্ষ সংগঠক হিসেবে প্রমাণ করেন অমি। সে সুবাধে জঙ্গি সংগঠনটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের নজরে আসেন।
সিটিটিসি জানায়, সাংগঠনিক দক্ষতার পরিচয় দেয়ায় অমি ওরফে রাফিকে সিলেট অঞ্চলের দাওয়া বিভাগের প্রধান করা হয়। তিনি সিলেট অঞ্চল থেকে বেশ কিছু সদস্যকে দলে টানেন। সংগঠনটির মূল ব্যক্তি বরখাস্তকৃত মেজর জিয়ার নজরেও আসেন তিনি। মেজর জিয়াই অমিকে সংগঠনের আশকারি বিভাগে (সামরিক শাখা) নিয়োগ দেন।
অমির মাধ্যমেই আশকারি বিভাগে বেশ কিছু সদস্য নিয়োগ দেয়া হয়। মাইনুল হাসান শামিমকেও আশকারি বিভাগে নিয়ে আসেন অমি। এই মামলার আরেক আসামি সায়মুম শাহরিয়ারকেও আশকারি বিভাগে নিয়ে আসেন তিনি।
অমির মতো জঙ্গি জামিন পাওয়ার পর কেন নজরদারিতে ছিল না- এমন প্রশ্নে সিসিটিসি প্রধান মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আমরা মনিটরিং করি। এটা অপারেশনাল গোপনীয়তার বিষয়। এনক্রিপটেড অ্যাপ ব্যবহার করে তারা।’
জামিনে থাকা জঙ্গিরা রিস্ক তৈরি করে কিনা জানতে চাইলে সিটিটিসি প্রধান বলেন, অবশ্যই রিস্ক তৈরি করে। এই রিস্কটা মাথায় রেখেই আমরা কাজ করি। ওইভাবে মনিটর করা সম্ভব হয় না। যাকে প্রয়োজন মনে করি তাদের নজরদারিতে রাখা হয়। সবচেয়ে বেশি কাটআউট পদ্ধতি ব্যবহার করে আনসার আল ইসলাম। তাদের ব্রেকডাউন করতে সময় লাগে।