রাজধানীতে চলাচলকারী সিটিবাসের ই-টিকিটে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার পূর্ণাঙ্গ তথ্য সংযোজন চায় যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘ঢাকা সিটিবাস সার্ভিসে ই-টিকিটিং: যাত্রীদের প্রত্যাশা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় সমিতির পক্ষ থেকে এই দাবি জানানো হয়।
ই-টিকিটিং ব্যবস্থাকে স্বাগত জানিয়ে সংগঠনটির নেতারা বলেন, পরিবহন খাতে দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি এই খাতের আমূল সংস্কার প্রয়োজন। নইলে ই-টিকিটিং সিস্টেমে সিটিবাস সার্ভিস ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না।
কারণ হিসেবে তারা বলেন, ই-টিকিটে দূরত্ব অনুযায়ী ভাড়া আদায় নিশ্চিত করায় যাত্রী ভাড়া কমে আসছে। ফলে বাস মালিকদের আয়ও কমে যাচ্ছে। এহেন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন বাসে কোম্পানির জিপি ও অদৃশ্য খাতের রুট খরচ বন্ধ করা না গেলে অনেক পরিবহন মালিককে লোকসান দিয়ে বাস চালাতে হবে।
যানজট, চাঁদাবাজিসহ নানা কারণে দীর্ঘদিন ধরে সিটি সার্ভিসের বাস খাতে নতুন বিনিয়োগ আসছে না। ফলে লোকসানের কারণে এই খাত আগামী দিনে গভীর সংকটে পড়ার শঙ্কা রয়েছে।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, টিকিট মানে সেবা মূল্যের রসিদ। আন্তর্জাতিক ক্রেতা-ভোক্তা অধিকার আইন অনুযায়ী প্রতিটি পণ্য বা সেবামূল্যের রসিদ দেয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। দীর্ঘদিন পর নগরীর সিটি সার্ভিসের বাসে ই-টিকিটিং সেবা চালুর মধ্য দিয়ে এটি পূরণে এগিয়ে আসায় ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দকে ধন্যবাদ।
তিনি বলেন, প্রতিটি টিকিটে বাসের নাম, নিবন্ধন নম্বর, যাত্রা ও গন্তব্যের নাম, দূরত্ব, ভাড়ার অংক, ভ্রমণ তারিখ ও অভিযোগ কেন্দ্রের নম্বর থাকার কথা। কিন্তু প্রদত্ত ই-টিকিটিং ব্যবস্থায় এসবের পূর্ণাঙ্গ তথ্য নেই। কোন কোন টিকিটে শুধু ভাড়ার অংক লেখা রয়েছে। যাত্রা ও গন্তব্যের নাম, বাসের নাম ও নম্বর নেই। ফলে এসব টিকিট দিয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হলে যাত্রীদের প্রতিকার পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
সংগঠনের এক পর্যবেক্ষণের উল্লেখ করে বলা হয়, শুরুতেই ই-টিকিটিং নিয়ে যাত্রী, বাস মালিক-শ্রমিকের মধ্যে নানা মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। ই-টিকিটিং চালুর পর বিভিন্ন রুটে মালিকেরা বাসের সংখ্যা কমিয়ে দেন।
ই-টিকিটিং ব্যবস্থাপনায় চলাচলকারী বাসে দূরত্বের ব্যবধানে স্বাভাবিকের চেয়ে ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি ভাড়া নেয়ার অভিযোগ করেন যাত্রীরা। যেমন রামপুরা থেকে ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার পর্যন্ত ভাড়া ছিল ২০ টাকা, ই-টিকিটিং ব্যবস্থায় আদায় হচ্ছে ২৫ টাকা। অথচ ৮ কিলোমিটার দূরত্বের এই পথে ২০ টাকা ভাড়া আদায় হওয়ার কথা। খিলক্ষেত থেকে মিরপুর-২ পর্যন্ত আগে ১৫ টাকা ভাড়া আদায় হলেও ই-টিকিটিং চালুর পর ২০ টাকা নেয়া হচ্ছে। অবশ্য কোনো কোনো পথে ভাড়া কমে আসার নজিরও রয়েছে।
মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ভাড়া নির্ধারণের শর্ত অনুযায়ী চালক-সহকারীর নিয়োগপত্র, বেতন ও ওভারটাইম নিশ্চিত করা জরুরি। লক্কর-ঝক্কর বাস উচ্ছেদ করে সিটি সার্ভিস আধুনিক বিশ্বের আদলে গড়ে তোলা গেলে এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হলে মানুষ ধীরে ধীরে বাসমুখী হবে। মোটরসাইকেলসহ ছোট পরিবহনের ওপর নির্ভরশীলতা কমবে। তাতে করে ফলে নগরে যানজট ও মানুষের যাতায়াত ব্যয় কমে আসবে।