১০ ডিসেম্বর রাজধানীতে কর্মসূচি ঘিরে উত্তেজনায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের পর এবার পানি ঢাললেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। বলেছেন, তারা সেদিন কোনো সংঘাতে যাবেন না। এই সমাবেশ নিয়ে আগাম কোনো ঘোষণা না দেয়ার কথাও বলেছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার দলের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। ঢাকা জেলা বিএনপির নতুন কমিটির সভাপতি খন্দকার আবু আশফাক ও সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায় চৌধুরীকে সঙ্গে নিয়ে সেখানে যান গয়েশ্বর রায়। নিপুণ সম্পর্কে গয়েশ্বরের পুত্রবধূ।
এ সময় গণমাধ্যমকর্মীরা গয়েশ্বরের কাছে রাজধানীতে তাদের ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ নিয়ে প্রশ্ন রাখেন।
সেদিন আওয়ামী লীগ ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে পাহারা দেবে বলে সংঘাতের আশঙ্কা করছেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা সরকারের ফাঁদে পা দেব না। সংঘাত এড়িয়েই গণসমাবেশে আসব।’
এই সমাবেশ নিয়ে আগাম কোনো কথা বলতেও নারাজ গয়েশ্বর। সেদিন সরকারের পতনের কোনো ঘোষণা আসবে কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এখনও ১০ ডিসেম্বর অনেক দূর। আপনারা গণসমাবেশে আসবেন। ১০ ডিসেম্বরের কথা ১০ ডিসেম্বরই বলব। আগাম কোনো কথা কেউ বলবে না, আমিও বলব না।’
সেদিনই আন্দোলনের শেষ হবে না- এই বিষয়টি জানিয়ে সেদিন নতুন কর্মসূচি দেয়ার কথাও জানান বিএনপি নেতা। বলেন, ‘সেদিনই তো বলব না আমাদের আন্দোলন এখানেই শেষ। আর সরকার ১০ ডিসেম্বরের আগে যদি জনগণের দাবি মেনে নেয় তাহলে সেটা তো অন্যরকম। কিন্তু তা তো আমরা প্রত্যাশা করতে পারছি না। আমরা গণসমাবেশ থেকে কী বলব, ১০ ডিসেম্বর শোনার অপেক্ষায় থাকেন।’
নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবি আদায়ে বিভাগীয় শহরগুলোতে ধারাবাহিক সমাবেশের অংশ হিসেবে এই সমাবেশের ডাক দেয়া হয়েছে।
এই সমাবেশটি নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে উঠে যখন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আমান উল্লাহ ঘোষণা দিয়ে বসেন, সেদিন থেকে দেশ চলবে বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নির্দেশে।
এই ঘটনায় ক্ষমতাসীন দলেও আছে প্রতিক্রিয়া। তারাও ১০ ডিসেম্বর নিয়ে বক্তব্য দিতে থাকে। এমন কথাও বলা হয়, যদি বিএনপি সেদিন বাড়াবাড়ি করে, তাহলে তাদের ২০১৩ সালের ৫ মে রাতে হেফাজতে ইসলামীর মতো দমন করা হবে।
তবে ১৭ নভেম্বর উত্তেজনা কমিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা পরিষ্কারভাবে বলছি ঢাকায় হচ্ছে বিভাগীয় সমাবেশ। আমরা যে কর্মসূচি দিয়েছিলাম ১০টি বিভাগ নিয়ে, তার সর্বশেষ কর্মসূচি হচ্ছে ঢাকায়। ঢাকা থেকে হয়তো আমাদের পরবর্তী কর্মসূচি, দাবি দেয়া নিয়ে আরও বৃহত্তর আন্দোলন নিয়ে জনগণের সামনে আসব। এটা আমাদের চূড়ান্ত কর্মসূচি নয়, এটা হচ্ছে স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি।
‘এমন কোনো কর্মসূচি আমরা নেব না, যেটাতে জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হবে বিপদগ্রস্ত হবে। আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে জনগণের দাবিগুলো নিয়ে আন্দোলন করছি শান্তিপূর্ণভাবে। আর শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করে যাব।’
ফখরুলের সুরেই কথা বলে গয়েশ্বর জানান, তার ধারণা, তবু সেদিন আওয়ামী লীগ ‘সংঘাত সৃষ্টির চেষ্টা করবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে সাতটি গণসমাবেশ করেছি। আওয়ামী লীগ বলবে কেন, সব জায়গায় তারা সংঘাত সৃষ্টি করার পাঁয়তারা করেছে। প্রশাসন দিয়ে চেষ্টা করেছে, গাড়ি বন্ধ করে দিয়ে চেষ্টা করেছে। তারা তো কোনো পথই বাকি রাখেনি। নতুন কোনো পথ খোলাও রাখেনি। সুতরাং ঢাকার গণসমাবেশে এটাই করবে আমরা স্বাভাবিক মনে করছি, অস্বাভাবিক মনে করছি না। রাতারাতি এরা ভালো হয়ে যাবে তা আমরা আশাও করি না।’
অনুমতি না পেলেও সমাবেশ নয়াপল্টনেই
পুলিশ সেদিন অনুমতি না দিলেও সমাবেশ নয়াপল্টনেই হবে বলেও জানান গয়েশ্বর। তিনি বলেন, ‘নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আমরা অনুমতি চেয়েছি। সেখানেই আমরা সমাবেশ করব। তারা (সরকার) যদি অপারগ হয় তাহলেও করব। অনুমতি দিলেও করব, না দিলেও করব। অনুমতির অপেক্ষা করব না। মনে রাখতে হবে এ দেশটা আমাদের সবার।’
জিয়াউর রহমান একদলীয় শাসনব্যবস্থা থেকে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন দাবি করেন বিএনপি নেতা বলেন, ‘তিনি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করতেন, সংবাদপত্র ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করতেন, ভোটাধিকার ও আইনের শাসনে বিশ্বাস করতেন।
‘আমরা দেখছি, দেশে এসব কিছুই নেই। বিচারের নামে আমরা অবিচারের মুখোমুখি হচ্ছি। এ অবস্থা থেকে আমরা মুক্তি চাই। চলমান আন্দোলনকে আরও গতিশীল করতে যেভাবে সাধারণ জনগণ সম্পৃক্ত হয়েছে, জনগণের আরও অংশগ্রহণে ভোটাধিকার অর্থাৎ জনগণই দেশের মালিক- এটা প্রতিষ্ঠাই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য।’
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঞা, ঢাকা জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি দেওয়ান সালাউদ্দিন বাবু, নতুন কমিটির সহসভাপতি খন্দকার মাঈনুল ইসলাম বিল্টু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শামছুল ইসলাম, কেরানীগঞ্জ দক্ষিণ বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোজাদ্দেদ আলী বাবুও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।